কলকাতা: কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলায় তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই, বুধবার এ কথা ফের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সদ্য মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে মমতা বলেছেন যে তিনি ৪২টি আসনেই লড়তে চান এবং সেভাবেই যেন সব জায়গায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এরপর বীরভূম নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে মমতা একই ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে খবর। কিন্তু রাহুল গান্ধী সদ্য বলেছেন, তৃণমূলের সঙ্গে তাঁদের সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে। তাতে অনেকে মনে করেছিলেন শেষ মুহূর্তে হয়ত কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে জোট হবে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার মমতা কার্যত স্পষ্ট করে দিলেন যে পশ্চিমবঙ্গে জোট হচ্ছে না।
সূত্রের খবর বিষয়টিকে একেবারেই ভালভাবে দেখছেন না রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজের একাংশ। কারণ তাঁরা বিজেপিকে ঠেকাতে দুই দলের মধ্যে জোট চেয়েছিলেন আন্তরিকভাবে। কিন্তু মমতা সেই রাস্তায় হাঁটতে চাইছেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। আর তাতেই ফের বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে ‘সেটিং’ রয়েছে কিনা সেই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চর্চা হতে শুরু করেছে রাজ্য রাজনীতিতে।
মূলত বাম-কংগ্রেস এই বিষয়টি নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে। বাম কংগ্রেসের দাবি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে থেকেও বিজেপিকে সুবিধা করার জন্যই মমতা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম কথা বলেছেন। এই জোট হোক মমতা সেটা চান না, এই দাবিতে প্রচার আরও প্রবল ভাবে তুলে ধরার জন্য প্রস্তুত বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব। আর গোটা বিষয়টি নিয়ে অখুশি সংখ্যালঘু সমাজ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ভূমিকাকে তাঁরা যথেষ্ট সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছেন বলেই খবর।
ঘটনা হল বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগ তৃণমূলের ঝুলিতে আসছে। তবে কি মমতার এই অবস্থানে তাতে কিছুটা হলেও চিড় ধরবে? এটা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে বলে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন।
সংখ্যালঘু সমাজের একাংশ মনে করছেন, সব আসনে তৃণমূল জিতবে না। তাই গতবার যে সমস্ত আসনে বিজেপি জিতেছে তার কয়েকটা যদি এবার কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া যেত, তাতে কি এমন অসুবিধা হতো? বাংলায় যে সমস্ত লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির ভাল ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে সেখান থেকে একটা দুটো আসন যদি কংগ্রেসকে ছেড়ে দিলে সার্বিকভাবে মসৃণ জোট হতো, তাতে তো ভালই হতো। এমনটাই বক্তব্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের একাংশের। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাংশের আরও মনে করছেন, স্বাধীনতার পর থেকে আরএসএস, এবং ১৯৮০ সালে বিজেপি দল তৈরি হওয়ার পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে সামনে থেকে যে দুটি দল লড়াই করছে তারা হল কংগ্রেস এবং সিপিএম তথা বামেরা। এই দুটি দলের বিজেপি বিরোধিতায় কোনও খাদ নেই, এমনটাই বিশ্বাস সংখ্যালঘুদের। সেই জায়গা থেকে মমতার এমন অবস্থানে সংখ্যালঘু সমাজের একাংশ যে কতটা ক্ষুব্ধ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।