কলকাতা: কলকাতা: রাজ্য প্রশাসনের দুই শীর্ষ আধিকারিককে অপসারণ ও প্রচার সময় একদিন কমিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
বুধবার রাতে সাংবাদিক বৈঠক করে কমিশনের একহাত নেন মমতা৷ বলেন, ‘‘কমিশনের এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক৷ পক্ষপাতদুষ্ট৷ বিজেপির নির্দেশের কাজ করছে নির্বাচন কমিশন৷ এই সিদ্ধান্তের পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে৷’’ বিজেপিকে কটাক্ষ করে কমিশনকে বিঁধে মমতা বলেন, ‘‘মোদি-অমিত শাহের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠলেও একটিও পদক্ষেপ নেয়নি কমিশন৷ বাংলায় এসে অমিত শাহ দাঙ্গা বাধাল৷ কিন্তু, কমিশন কিছুই করল না৷ ওদের ক্ষমতা থাকলে, আজ থেকেই ভোটের প্রচার বন্ধ করে দিতে পারত৷ কাল মোদির দু’টি সভা রয়েছে৷ মোদির সভার পর কেন ভোট প্রচারে শেষ হওয়ার ঘোষণা৷ এই সব করে তৃণমূলকে রোখা যাবে না৷’’
West Bengal CM, Mamata Banerjee: Election Commission’s decision is unfair, unethical and politically biased. PM Modi given time to finish his two rallies tomorrow. pic.twitter.com/nsU9l5TJ7u
— ANI (@ANI) May 15, 2019
তিনি বলেন, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেও কোনও দুঃখপ্রকাশ করেননি। এদিন বিজেপি বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসেছিল। এখানে কোনও ল অ্যান্ড অর্ডারের সমস্যা নেই। রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে এত রাগ কেন? আর স্বরাষ্ট্রসচিব কী দোষ করেছে? একটা চিঠিই তো দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে তোপ দেগে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট কায়দায় ভোট করানোর চেষ্টা করছ? তাতে কোনও লাভ হবে না। এভাবে মোদিকে জেতানো যাবে না। এখানে এত মিছিল হয়েছে, কোনও মিছিলে তো গণ্ডগোল হয়নি। কাল অমিত শাহর মিছিলে কেন হল? এই গণ্ডগোল বিজেপি করেছে। বাইরের গেরুয়া জামা পড়া গুণ্ডারা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। যারা দোষ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি প্রশ্ন তোলেন প্রচার বন্ধ করতে হলে আজ থেকেই তো করতে পারতেন। কাল কেন? মোদির জনসভা আছে বলে? নরেন্দ্র মোদি অমিত শো ভোট প্রচারে যা খরচ করছে, তা তো নির্ধারিত সিলিং ছাড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশন কেন শো কজ করেনি? তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাকে কলঙ্কিত করেছে বিজেপি। আগামীকাল মোমবাতি, কালো ব্যাজ পড়ে প্রতিবাদ মিছিল করুন।
অন্যদিকে, মমতা ‘ঘনিষ্ঠা’ স্বরাষ্ট্রসচিবকে সরাল নির্বাচন কমিশন৷ অপসারিত এডিজি সিআইডি রাজীব কুমার৷ আপাতত তাঁকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে৷ শেষ দফার ভোটের আগে স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে সরানোর নির্দেশ কমিশনের৷ স্বরাষ্ট্রসচিবের কাজ দেখবেন মুখ্যসচিব৷ রাজীব কুমারকেও নিজের পদ থেকে সরিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তাঁকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে রিপোর্ট করাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
Election Commission: No election campaigning to be held in 9 parliamentary constituencies of West Bengal – Dum Dum, Barasat, Basirhat, Jaynagar, Mathurapur, Jadavpur, Diamond Harbour, South and North Kolkata from 10 pm tomorrow till the conclusion of polls. pic.twitter.com/cTpKS6jFwp
— ANI (@ANI) May 15, 2019
বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে কমিশনের তরফে বলা হয়, স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য মুখ্য নির্বাচন অফিসারের কাজে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। তিনি চিঠি লিখে মুখ্য নির্বাচন অফিসারকে কিছু ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। সেই কারণেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল। তাঁর পরিবর্তে স্বরাষ্ট্রসচিব পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রসচিব নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে আবেদন করেছিলেন, কুইক রেসপন্স টিমে যেন রাজ্য পুলিশকে রাখা হয়৷ তারপরই আজ স্বরাষ্ট্রসচিবকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি করে নির্বাচন কমিশন৷
Election Commission: Chief Secretary will look after Home Department. #WestBengal https://t.co/2uKalZpa5f
— ANI (@ANI) May 15, 2019
স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যের পাশাপাশি অপসারিত হয়েছেন রাজীব কুমার৷ বুধবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে দিল্লিতে সকাল ১০টার সময় রিপোর্ট করতে হবে। তাঁকে যুক্ত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। ফলে বাংলা থেকে সোজা দিল্লি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজীব কুমারকে৷
অমিত শাহের রোড-শোকে কেন্দ্র করে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের পর আজ জরুরি বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন৷ মঙ্গলবার রাতের ঘটনা বিস্তারিত জানতে ও সংঘর্ষ পরবর্তী পরিস্থিতি পদক্ষেপ নিতেই এই বৈঠক করে কমিশন সূত্রে খবর৷ তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের ঘটনার পর রাজ্যের সিও দপ্তরের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় জাতীয় নির্বাচন কমিশন৷ সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আজ সিও দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে কমিশন৷ তারপরই এই সিদ্ধান্ত৷