জঙ্গলমহলে ফের উদার মমতা! স্পষ্ট বললেন, এবার পাশে থাকুন!

জঙ্গলমহলে ফের উদার মমতা! স্পষ্ট বললেন, এবার পাশে থাকুন!

 

তপন মল্লিক চৌধুরী :  খড়্গপুর খাতায় কলমে জঙ্গলমহলের মাটিনয়। তবু মঙ্গলবার খড়্গপুর গ্রামীণের বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের স্টেডিয়ামের মাঠেই মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠক করেন। যে-হেতু এক সময়ের মাওবাদী প্রভাবিত পশ্চিম মেদিনীপুর, তাই সেই মঞ্চ থেকেই অনুসারী একগুচ্ছ ঘোষণা করেন। বুঝিয়ে দিলেন, মাওবাদী সময়ে স্বজনহারা অথবা পিছিয়ে পড়া লোধা-শবর সম্প্রদায়, কিংবা হাতির হানায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যই তাঁর সরকার ভাবিত।
জঙ্গলমহলে মাওবাদী সন্ত্রাসে যারা দশ বছর নিরুদ্দেশ রয়েছেন সেই সব পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজনকে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন। হাতির হানায় প্রাণ গেলেও সরকারি চাকরির ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

জঙ্গলমহলের উন্নয়ন একটা সময় তৃণমূল সরকারের প্রচারের মুখ ছিল। পাহাড়ের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বারবার জঙ্গলমহলের ‘হাসি’র কথা বলেছেন। কিন্তু ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্কে প্রথম ধস নামে। তার পর ধাক্কাটা আসে গত বছর লোকসভায়। জঙ্গলমহলের সব আসনেই শূন্য হাতে ফিরতে হয় ঘাসফুলের প্রার্থীদের। বিধানসভা ভোটের আগে এবার সেই হারানো জমি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য তৃণমূলের। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাতেও স্পষ্ট, এবার বাড়তি নজর রয়েছে জঙ্গলমহলে।

মুখ্যমন্ত্রী জেলার ৮টি কলেজে সাঁওতালি অর্নাস, আরও সাঁওতালি স্কুল, অলচিকির শিক্ষক নিয়োগ ও সাঁওতালি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাও শুনিয়েছেন। পাশাপাশি মনে করিয়ে দিয়েছেন, তফসিলি, আদিবাসী পরিবারে ৬০ বছর হয়ে গেলেই পেনশন চলছে। বুধবার মুখ্যমন্ত্রীপ্রশাসনিক বৈঠক করেনঝাড়গ্রামে। গত পঞ্চায়েত ভোটে এখানে ত্রিণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে ব্যাপক ধাক্কা লেগেছিল। লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলে আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক তৃণমূলকে পুরোপুরি নিরাশ করেছিল। উলটোদিকে এই এলাকায় যত দিন গেছে বিজেপির পায়ের তলার জমি তত শক্ত হয়েছে। আগামী বিধানসভা ভোটের আগে সেই হারানো ভোট ব্যাঙ্ক ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল। মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরে স্পষ্ট করেই সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা। বুধবার আরও স্পষ্ট করেই বললেন, ‘আপনারা বলেছেন, কিন্তু আমি করিনি। এরকম একটাও কাজ হয়নি। প্রত্যেকটা করে দেওয়া হচ্ছে। আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ যে আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। সরকারের সঙ্গে থাকুন। মা-মাটি-মানুষের সরকারের সঙ্গে থাকুন।’

প্রশাসনিক বৈঠক চলাকালীন গ্রামীণ রাস্তা ও স্কুল নিয়ে জাকাত মাঝি পারগানা মহলের দাবি-দাওয়ার দুটি তালিকা প্রশাসনিক কর্তাদের হাতে তুলে দিয়ে ‘দেখে নেওয়ার’ নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এখানেই না থেমে মমতা ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে উদ্দেশ করে ‘ভুল না বোঝার’ আর্জি জানান। একইসঙ্গে সরাসরি বিজেপি শাসিত রাজ্যের হাথরাসের প্রসঙ্গ উত্থাপন না করেই দলিতদের এবং আদিবাসীদের প্রতি তাঁর সরকারের দায় দায়িত্বের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘যখন যা প্রয়োজন পড়বে, আমার কাছে ডিমান্ড করবেন। কিন্তু ভুল বুঝবেন না। যতক্ষণ টাকায় কুলোবে, ততক্ষণ করে দেব, আবার যখন টাকা আসবে তখন করে দেব।’

মুখ্যমন্ত্রী জানাতে ভোলেন না, রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, লোধা-শবরদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রেখে তাদের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া পঞ্চায়েত দফতরের মাধ্যমে লোধা-শবরদের জন্যে যে ঘর করার কথা বলা হয়েছে, সেগুলি যাতে দ্রুত করতে পারা যায় সেটিও এদিন উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।প্রশাসনিক সভায় জনজাতিদের নেতাও হাজির ছিলেন। তাদের অভাব অভিযোগ এদিন মুখ্যমন্ত্রী তার মাধ্যমেই শুনেছেন। আদিবাসী ও পঞ্চায়েত দফতরের আধিকারিকদের এই বিষয়ে সর্বদা নজর দিতে বলেছেন। এদিন শিউলি সাহা সহ তিন বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রীকে তাদের এলাকায় আদিবাসীদের জন্যে স্কুল তৈরির জন্যে আবেদন জানান। মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসককে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেন।এরপরেই  মমতা স্পষ্ট করে বলেন, ‘সব তো দিয়েছি, যা চেয়েছেন, সব দিয়েছি, এবার আপনারা কিছু দিন।’

ক্ষমতায় এসে উন্নয়নের জোয়ারে ভরে দিয়েছিলেন এই জঙ্গলমহলকে।প্রচারে তুলেছিলেনঝড়। কিন্তু সেই জঙ্গলমহল তাঁর ‘হাসি’ কেড়ে নিয়েছে, তা কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও রাখঢাক না করেই একাধিকবার স্পষ্ট করে বলেছেন, অনেক কিছু দেওয়া হয়েছে। এবার আপনারাও পাশে থাকুন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 + 19 =