কলকাতা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলায় রণহুঙ্কার দিয়ে গিয়েছেন। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনেই তৃণমূল কংগ্রেসের পতন নিশ্চিত তা বলতে দ্বিধা করেননি এই বিজেপির এই বরিষ্ঠ নেতা। কিন্তু, এককালে বাংলার শাসকশক্তি বামফ্রন্ট ( বা পড়ুন সিপিএম) কী নিজের ঘর রক্ষা করা নিয়ে একটু চিন্তিত? ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম প্রায় ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। জোটেনি একটিও আসন।
অধিকাংশের বড় অভিযোগ ছিল – রামের ভোট পড়েছে বামে। নয়ত, তৃণমূলকে এত কঠিন 'ট্যাকেল' করতে পারত না বিজেপি। তৃণমূল বিরোধী বামেদের ভোট পড়েছে গেরুয়া শিবিরে। 'রাম-বাম' ট্যাগ-লাইন থেকে বেরিয়ে আসার কোনও যোগ্য জবাব বারবার খুঁজতে হয়েছে সিপিএমকে। শুক্রবার, বাম পরিষদীয় দলনেতা তথা সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর টুইট সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে তেমনই একটি উত্তর – “যারা ২০১১ তে 'সোনার বাংলা' শ্লোগান দিয়েছিল, এখনও তারাই দিচ্ছে। তৃণমূলকে নকল করেই বিজেপির নতুন ধাপ্পা। বাংলার সর্বনাশের শক্তি এরা। বহুরূপী! চোরের মায়ের বড় গলা! তৃনমূলের সাহায্যেই ত্রিপুরায় বিজেপির সরকার। বিজেপির মদতেই সারদা-নারদার অপরাধীরা এখনও জেলের বাইরে। একই, ফারাক কোথায়?”
কিন্তু, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, কট্টর তৃণমূল বিরোধী বামপন্থী ভোট একত্রিত করতে কী বর্তমানে বাম-কংগ্রেস জোট প্রস্তুত। তাঁরা কী এই রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূল বিরোধী তৃতীয় বিকল্প তৈরি করতে পারবেন। সূর্যকান্ত মিশ্র-সুজন চক্রবর্তী-সোমেন মিত্ররা কতটা আশা দিতে পারেন আম জনতাকে। তৃণমূলের সংখ্যালঘু তোষণ, দূর্নীতি, চোখ রাঙানির রাজনীতিকে যারা 'অনেক হয়েছে' বলছেন তারা অধিকাংশই বাম-কংগ্রেস জনতা, তা সুজনবাবুরা জানেন। তাঁদের চোখে হয়ত বিজেপির সংখ্যালঘু খ্যাদাও-এর রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ আট-নয় বছর রক্তচক্ষু, রক্তাক্ত নির্বাচন, আর্থিক কেলেঙ্কারি, স্টিং-অপারেশন, গোলমেলে হিসাব থেকে হাল আমলের চাল চুরি মনে দাগ কেটে গিয়েছে।
অনেকেই ভেবেছেন, বিজেপি এই আসন জিতলে গুজরাট-উত্তরপ্রদেশের মত সাম্প্রদায়িক লড়াই হবে সে কল্পনা এখুনই না করাই ভাল। বরং, বরং, সকাল-বিকাল শাসক দলের যে দাদারা উঠতে-বসতে হুমকি দেয়, তাদের শেষ দেখে নেওয়াটাই ভাল। আশ্চর্যের বিষয়, যারা লাল পার্টির অফিস দখল করে রেখেছে, ২০১১ এর আগে তারাই লাল পার্টি করত। রাজ্যের ক্ষমতার পরিবর্তনে একরাতেই তাদের নীতি-আদর্শের পরিবর্তন হল। তার পার্টি অফিস ঘরটা ছাড়েনি, কিন্তু, দেওয়ালের রং বদলে দিয়ে আদি বাসিন্দাদের ঘরছাড়া করল। অনেকেই হয়ত ভেবেছেন, রাজ্যে সাম্প্রদায়িক লড়াই তো এখন কম কী বা হয়? তখন না হয় সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ করা যাবে, কিন্তু এই শাসক আর ক'দিন?
বাম-কংগ্রেস জনতা ভাবতে শুরু করেছে, তৃণমূলের মূল উপড়ে ফেলতে পারে পদ্মকাঁটা। বিজেপি তৃণমূলকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসলে আসুক। সাম্প্রদায়িকতা বাড়লে বাম জনতা রাস্তায় নামবে। বামফ্রন্ট এই রাজ্যের জন্য অপরিহার্য, সেই ধারণা প্রাণবায়ু পেতে শুরু করবে। সূর্যকান্ত মিশ্র , সোমেন মিত্র এবং সুজন চক্রবর্তীদের জন্য সব থেকে কঠিন সময় এটি। তৃণমূলের অপসারণ চান তাঁরা। কিন্তু, রাজ্যে তৃতীয় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি এই কাজ করতে পারে, তা তাদের সমর্থকরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন কী? মনে হয় না।