তপন মল্লিক চৌধুরী : সময়ের দাবি মানতেই হবে। তাই ভার্চুয়াল প্রচারে জোর দিয়েছে বাম কংগ্রেস উভয়েই। এতদিন যে বিমান বসু মোবাইল ফোনই ব্যবহার করতেন না, সেই বিমান বসু এখন ফেসবুক লাইভ করছেন। সময়ের দাবি মেনে তিনিও এখন ভার্চুয়াল প্রচারে জোর দিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমকে হাতিয়ার করে ডিজিটাল প্রচারে জোর দিয়েছে সিপিএম থেকে শুরু করে সমস্ত বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস। সামাজিক মাধ্যমকে হাতিয়ার করতে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ খুলে সমন্বয় বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে বামেরা। ফেসবুক, টুইটার, এমনকী ইনস্টাগ্রামেও তারা শক্তি বাড়িয়ে চলেছেন। একই পথে হাটছে কংগ্রেসও।
বিজেপির প্রচারের উপকরণ এবং অর্থবল অঢেল। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই ও প্রচার কর্মসূচিকে যত বেশী স্পম্ভব সামাজিক মাধ্যমের আওতায় এনে যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে সিপিএম, অন্যান্য বাম দল ও কংগ্রেস। তৃণমূল ও বিজেপির মোকাবিলায় এবার সোশ্যাল মিডিয়া ফ্রেন্ডলি হয়ে উঠছে বিরোধী সব দলগুলি। কোনওভাবেই কেউ তৃণমূল-বিজেপিকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। পরিস্থি এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে, এরিয়া কমিটি বা শাখা স্তরে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে কাজের সমন্বয় বাড়ানোর কথা সম্প্রতি চিঠিতে লিখে দিচ্ছে সিপিএম পার্টি। অন্যদিকে কংগ্রেসে নেতা-কর্মীরাও সর্বভারতীয় স্তরে পাল্লা দিয়ে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম-সহ সামাজিক মাধ্যমে জাতীয় ও রাজ্য রাজনীতির নানা প্রশ্নে নিজেদের বক্তব্য জানাচ্ছেন।
রাজ্য ও কেন্দ্রস্তরে শাসক দল তাদের ক্ষমতা কায়েম রাখার জন্য দল ভাঙানোর খেলা শুরু করে দিয়েছে বহু দিন আগেই। তারপর শুরু হয়েছে বাম-কংগ্রেস নেতাদের মগজধোলাই করে দলে টানা। এ কাজে তারা যথেষ্ঠ সফল হয়েছে ক্ষমতা হাতে থাকার কারণে। বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে যে বাম-কংগ্রেস ডিজিটাল শক্তিতে কোনওভাবেই পেরে উঠছে না সেটা করোনার সময়ে টের পেয়েছে। কারণ তখন রাস্তায় নেমে বা সরাসরি জনসংযোগের পথ বন্ধ ছিল বন্ধ। তবে সেই অবস্থাতেও আম্ফান পরবর্তী সময়ে খানিকটা জনসংযোগ করতে পেরেছিল বাম-কংগ্রেস। কিন্তু বিজেপি ও তৃণমূলের ডিজিটাল শক্তির কাছে বাম-কংগ্রেস এঁটে উঠতে পারে নি। তাই বাম-কংগ্রেস উভয়েই পুরোদমে ডিজিটাল শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে।
রাজ্যে তৃণমূলের হয়ে প্রশান্ত কিশোরের টিম সম্প্রতি স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন সিপিএম নেতাদের ধরে ধরে মগজধোলাই শুরু করছে। তার হাত থেকে বাঁচতে বামেরাও এবার পালটা ডিজিটাল প্লাটফর্মে গিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণের চেষ্টা চালাচ্ছে। ডিজিটাল ও সামাজিক মাধ্যমের কাজকর্ম চালানোর জন্য বাম ও কংগ্রেস শিবিরের সাংগঠনিক কাঠামো এখন তৈরি। সিপিএমের রাজ্য স্তরে এই সংক্রান্ত বিভাগের আহ্বায়ক এখন মহম্মদ সেলিম। জেলায় জেলায়ও কমিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। আরও নিচু তলা পর্যন্ত বহু কর্মী-সমর্থককে প্রচারের জন্য রাখা হয়েছে। যাঁদের বলা হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক। কংগ্রেসেও আছে এই ধরণের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। কংগ্রেসে আবার কমিউনিকেশন এবং সোশ্যাল মিডিয়া সেল নামে দু’টো বিভাগ আছে। সর্বভারতীয় স্তরে রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার নেতৃত্বে আর রাজ্য কংগ্রেসে দায়িত্বে অমিতাভ চক্রবর্তী।
করোনার সময়ে রাস্তায় নেমে যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অনেকটাই ছেদ পড়েছে সেটা বাম-কংগ্রেস দুই দলই ভাল করে বুঝতে পারে। সেই সময়ে সব দলকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমের ওপর বেশি ভরসা রাখতে হয়েছে, এখনও যে হচ্ছে সেকথা অস্বীকার করা যাবে না। আর সেই কারণেই বিজেপি এবং রাজ্যে তৃণমূলকে মোকাবিলা করার জন্য বাম ও কংগ্রেস নেট-যুদ্ধে কোমর বেঁধে নামতে বাধ্য হয়েছে। দু’দলের নেতাদেরই চেষ্টা, বিপক্ষের প্রচারের জবাব দেওয়া। সেটা করতে গেলে নিজেদের পরম্পরা ও কর্মসূচিকে আরও বেশি মানুষের সামনে আনতে হয়, তখনই দরকার হয় ডিজিটাল মাধ্যমে আশ্রয় নেওয়া।
সাম্প্রতিক কালে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা স্বাধীনতা আন্দোলনকে জড়িয়ে নানা কিছু দাবি করে চলেছেন। সিপিএম তার পাল্টা দিতে গিয়ে স্বাধীনতার মাস অগস্টে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানীদের তালিকা সামাজিক মাধ্যমে এনে দেখানোর চেষ্টা করেছে, তাঁদের মধ্যে কত জনের সঙ্গে কমিউনিস্ট মতাদর্শের যোগ ছিল সে কথাও ফলাও করে বলতে ছাড়ে নি। পাশাপাশি বিজেপির ধারাবাহিক ‘অপপ্রচারে’র জবাব দিতে গিয়ে কংগ্রেস শুরু করেছে ধারাবাহিক ডিজিটাল এপিসোড ‘ধরোহর’, রাজ্যে যা বাংলায় অনুবাদ করে দেখানো হচ্ছে এ দেশে কংগ্রেসের ঐতিহ্য বলতে আসলে কী বোঝায়।