বিজেপিকে আটকে সরকার গঠন করবে বাম-কংগ্রেস, অকপট সীতারাম

বিজেপিকে আটকে সরকার গঠন করবে বাম-কংগ্রেস, অকপট সীতারাম

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে কোনও দল সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলে কী হবে? যুযুধান তৃণমূল – বিজেপি যদি সংখ্যাগরিষ্টতা না পায় তবে বাম-কংগ্রেসের ভূমিকা কী হবে? তারা কী বিজেপিকে আটকাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করবে? উত্তর দিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

তিনি বলেছেন, বল তখন তৃণমূল কংগ্রেসের কোর্টে থাকবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি কোন দিকে যাবেন। সরকার গঠন করবে বাম-কংগ্রেস। তিনি তাদের সমর্থন করবেন নাকি বিজেপিকে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ – আয়োজিত কনক্লেভে মমতা সিপিএমকে বিজেপির ‘বি-টিম’ বলেছেন। সীতারামের বক্তব্য, অতীত বলছে, তৃণমূল নেত্রী বিজেপির সঙ্গে গিয়েছেন। সুযোগ পেলে হয়ত আবার যাবেন। তিনি আরও মনে করেন – ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হলে বাম-কংগ্রেস সরকার গঠনের পথে তিনি সাহায্য করবেন নাকি বিজেপির দিকে যাবেন সেটা তিনি ঠিক করবেন।

তৃণমূল কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টি -এর জন্য আসন্ন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বাম এবং কংগ্রেসের ভোট ভাগের পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। শেষ কিছু নির্বাচনে  জেলাগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে এই দুই দল দুর্বল হয়ে পড়েছে। শহরেও একই অবস্থা। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এই দুই দলের ভূমিকা পর্যবেক্ষণে রেখেছে বিশ্লেষকরা।

কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের আসন সমঝোতা হয়েছিল সিপিআই (এম) এর নেতৃত্বে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের পর সুখকর চিত্র ছিল না। ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ২১১ টি আসন নিয়ে তৃণমূল ক্ষমতা বজায় রাখে। কেউ বাধা দিতে পারেনি। যেহেতু কংগ্রেস জোট থেকে বেশি উপকৃত হয়েছে এবং বামদের ৩২টি আসনের পরিপ্রেক্ষিতে তারা ৪৪ টি আসন লাভ করেছে। এই জোটটি টেকেনি। মতবিরোধ প্রকাশ পেতে থাকে।

২০১৯ সালে শেষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮টি আসন জিতেছিল। ৪০.৬৪ শতাংশ ভোট তারা নিশ্চিত করেছে। যা ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের থেকে ২২.৭৬ শতাংশ বেশি। এই ব্যাপক ভোট বৃদ্ধি ইঙ্গিত করে কোনও কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। তা যে ধর্মীয় মেরুকরণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লোকসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে যদি বিধানসভায় বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামদলগুলি ফলাফল বিচার করতে হয় তবে দেখা যাবে বিজেপি প্রায় ১২২টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ৪৩.৬৯ শতাংশ ভোট নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ২২টি আসনে জিতেছিল। লোকসভার ফলাফল বিচার করলে ১৬৩টি আসলে তৃণমূলের এগিয়ে থাকার কথা। আপাতদৃষ্টিতে লোকসভার নিরিখে বিচার করলে বোঝা যায় তৃণমূল অন্তত ৪১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 + sixteen =

বাম-কংগ্রেস কেন বাংলায় সরকার গঠন করবে, জানালেন সূর্যকান্ত মিশ্র

বাম-কংগ্রেস কেন বাংলায় সরকার গঠন করবে, জানালেন সূর্যকান্ত মিশ্র

কলকাতা: আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটের ভূমিকা কী হতে চলেছে তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা চলছে। বাম – কংগ্রেস জোট কি ক্ষমতায় আসতে পারে? নাকি, বিজেপি বা তৃণমূল কংগ্রেসের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে? জবাব দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। খবরের কাগজ গণশক্তিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তাকে প্রশ্ন করা হয়, “রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন ঘোষিত হতে চলেছে। তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস একসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সীমিত করে দেখানো হচ্ছে মিডিয়াতে। আপনি কি মনে করেন, ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওই দুই দলকে পরাস্ত করা যাবে? রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই সুযোগ রয়েছে?”

উত্তরে সূর্যকান্ত জানান, “পরিস্থিতি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। তা নিয়ত পরিবর্তনশীল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে রাজনৈতিক মেরুকরণ সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। এই মেরুকরণের ফলে রাজ্যে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের জনসমর্থন ১৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়। সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। এখন ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে বাধ্য। ২০১৯ সালের নির্বাচনের পরেই দেশে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা শুরু হতে দেখা গিয়েছে। তারপরে যত রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে, বিজেপি হেরেছে অথবা অনেক কারসাজি করে কান ঘেঁষে জিতেছে। রাজস্থান, কর্ণাটক, মধ্য প্রদেশ, দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিততে পারেনি। কর্ণাটক, মধ্য প্রদেশে জনতার রায়কে উলটে দিয়ে পরে সরকার দখল করেছে।”

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের মতে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির উপর মানুষের ক্ষোভের কারণ রয়েছে – “এরাজ্যে তৃণমূলের সরকারের জনবিচ্ছিন্নতাও বাড়ছে, সরকারের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভও বাড়ছে। ওরা প্রচুর টাকা খরচ করে যতই চেষ্টা করুক, সেটাকে চাপা দিতে পারছে না। ইলেকটোরাল বন্ডে বিজেপি’র পরে সবচেয়ে বেশি টাকা তো তৃণমূলই পেয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’কে ১৮টি আসনে জেতানোর পরে  ‘দিদিকে বলো’ বলে তৃণমূলের সুবিধা কিছু হয়নি, তাই ‘দুয়ারে দুয়ারে’ যেতে হয়েছে এবং ‘সমাধান’ তো দূরের কথা, তৃণমূল দলটার অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এখন তো দল প্রতিদিন ভেঙে যাচ্ছে। অন্যদিকে মহামারী ও লকডাউনের সঙ্কটের সময় থেকে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে বামপন্থীরা। ভিনরাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করা, তাঁদের ঘরে ফেরানো, কোভিড নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা প্রচার, অসহায় মানুষদের কাছে সাবান, স্যানিটাইজার, খাদ্য, ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, কমিউনিটি কিচেন ও সবজি বাজার চালানো, হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া, রক্তদান করা -এসবই বামপন্থীরা করেছে। এমনকী পুলিশের বাধা সত্ত্বেও করেছে। কেন্দ্রের কাছে মানুষের দাবি তুলে ধরে রাস্তায় নামায় আমাদের কলকাতার বুকে দু’বার গ্রেপ্তার করেছে এই সরকারের পুলিশ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − five =