কলকাতা: প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। সেক্ষেত্রে একটি কথা চোখ বুজে বলা কে। ভোটের আগে বাম কংগ্রেস আসন সমঝোতা নিয়ে দুই পক্ষে চাপানউতরের ইতি। যে মানুষটি মন থেকে বাম-কংগ্রেস জোট চান, তিনি অধীর চৌধুরী। বামফ্রন্টে জোটের বিরুদ্ধে কথা বলার কয়েকশ লোক পাওয়া যাবে। কিন্তু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র’র সঙ্গে হাতে ধরে জোট করেছিলেন যে ব্যক্তি, তিনি অধীর চৌধুরী।
২০১৪ সালের লোকসভা এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম এবং কংগ্রেসের ভোট শতাংশের হিসাবে যুক্ত করলে ৪০-৪৫ শতাংশ হয়। লোকসভা নির্বাচনের আগেই বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষা বলে এসেছিল, বাম কংগ্রেস ৫ থেকে ৭ শতাংশ ভোট পাবে। তা-ই হয়েছে, বাম প্রায় ৭ শতাংশ, কংগ্রেস প্রায় ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। মত ১২ শতাংশের মত।
এখন প্রশ্ন, যে ৪০ শতাংশ ভোট তারা ২০১৪ এবং ২০১৬ তে মিলিত ভাবে পেয়েছিল তার কি হল। উত্তর, তার থেকে ২৮ শতাংশ বিজেপি পেয়েছে। বাকি বিজেপির ১০ শতাংশ পকেট ভোট। হল, ৩৮ শতাংশ। তৃণমূল শেষ বিধানসভায় পেয়েছিল প্রায় পঁয়তাল্লিশ শতাংশ। সেখান থেকে তাদের ভোট কমেছে সামান্য। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তারা ৪৩ শতাংশের মত ভোট পেয়েছে। বাকি দুই শতাংশ গেছে বিজেপিতে। এত মাত্র শতাংশের হিসাব। আসনের হিসাবে, অনেক কিছুই উলটপালট হয়েছে।
এটা পরিষ্কার, কংগ্রেস এবং সিপিএম একই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে সমস্যায় ফেলেছে। এটা ঠিক যে, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের মমতা বিরোধী ভোট, বিশেষ করে মমতা বিরোধী হিন্দু ভোট একত্রিত হয়েছে। সেই কারণেই এই ফল। অধীর চৌধুরীর মত কট্টর মমতা বিরোধী নেতা সেই কাজ আবার করতে চাইবেন ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে।
অঙ্ক বলছে মমতা ১৮টি আসনে হেরে গিয়েছেন তবে ভোটে হারেননি – ৪৩ শতাংশ ভোট তাঁর দিকে ছিল। বিজেপি ৪০ শতাংশ ভোট তাঁকে অবশ্য চিন্তায় রেখেছিল। কিন্তু, তা ছিল কোভিড এবং আমফান পূর্ববর্তী সময়। বাঙলার রাজনীতিতে কোভিড এবং আমফান বড় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যদিও অতীতে নারদা বা সারদা কেলেঙ্কারির মত দূর্নীতি রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলকে কোণঠাসা করলেও ভোটযন্ত্রে তার শূন্য প্রভাব পড়েছে। তা নিয়ে মমতা চিন্তিত নয়। কিন্তু, মেরুকরণের চাল মমতা ২০১৯ সালে বুঝে উঠতে পারেনি। সেক্ষেত্রে, মেরুকরণকেই অস্বীকার করার কথা ভাবতে পারবেন না মমতা। কারণ তাতে আখেরে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষতি।