‘কিং-মেকার’ হতে পারে বাম-কংগ্রেস জোট! কীভাবে? পড়ুন বিস্তারিত

‘কিং-মেকার’ হতে পারে বাম-কংগ্রেস জোট! কীভাবে? পড়ুন বিস্তারিত

কলকাতা: বাম-কংগ্রেস জোট কিংবা আসন সমঝোতা হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। কিন্তু, বাম-কংগ্রেসের ঐক্যবদ্ধ লড়াই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কিংবা বিজেপির পথে পথে কাঁটা হতে পারে। বাম কংগ্রেসের মিলিত শক্তি হতে পারে ‘কিং-মেকার’।

তৃণমূল কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টি -এর জন্য আসন্ন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বাম এবং কংগ্রেসের ভোট ভাগের পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। শেষ কিছু নির্বাচনে  জেলাগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে এই দুই দল দুর্বল হয়ে পড়েছে। শহরেও একই অবস্থা। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এই দুই দলের ভূমিকা পর্যবেক্ষণে রেখেছে বিশ্লেষকরা।

কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের আসন সমঝোতা হয়েছিল সিপিআই (এম) এর নেতৃত্বে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের পর সুখকর চিত্র ছিল না। ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ২১১ টি আসন নিয়ে তৃণমূল ক্ষমতা বজায় রাখে। কেউ বাধা দিতে পারেনি। যেহেতু কংগ্রেস জোট থেকে বেশি উপকৃত হয়েছে এবং বামদের ৩২টি আসনের পরিপ্রেক্ষিতে তারা ৪৪ টি আসন লাভ করেছে। এই জোটটি টেকেনি। মতবিরোধ প্রকাশ পেতে থাকে।

২০১৯ সালে শেষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮টি আসন জিতেছিল। ৪০.৬৪ শতাংশ ভোট তারা নিশ্চিত করেছে। যা ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের থেকে ২২.৭৬ শতাংশ বেশি। এই ব্যাপক ভোট বৃদ্ধি ইঙ্গিত করে কোনও কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। তা যে ধর্মীয় মেরুকরণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লোকসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে যদি বিধানসভায় বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামদলগুলি ফলাফল বিচার করতে হয় তবে দেখা যাবে বিজেপি প্রায় ১২২টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ৪৩.৬৯ শতাংশ ভোট নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ২২টি আসনে জিতেছিল। লোকসভার ফলাফল বিচার করলে ১৬৩টি আসলে তৃণমূলের এগিয়ে থাকার কথা। আপাতদৃষ্টিতে লোকসভার নিরিখে বিচার করলে বোঝা যায় তৃণমূল অন্তত ৪১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।

কিন্তু এখানে দুটি বিষয় খেয়াল করা জরুরি। ১) বাম-কংগ্রেস জোট এবং পাহাড়ে গোর্খা-নেপালি জনজাতির ভোট। ২) ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পর রাজ্যে পরবর্তী ভাগের রাজনীতি। পরিসংখ্যান বলছে, কংগ্রেসের ৫.৬৭ শতাংশ এবং সিপিএমের ৬.৩৪ শতাংশ ভোট পরিস্থিতির সঠিক ব্যাখ্যা করছে না। কারণ, ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় সিপিএম (১৬.৭২ শতাংশ) এবং কংগ্রেস (৪.০৯ শতাংশ) ভোট কমে গিয়েছে। কিন্তু, এই (১৬.৭২+৪.০৯)=২০.৮১ শতাংশ ভোট কথায় গিয়ে পৌঁছল, তা নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়ে গিয়েছে। আলোচকদের একটি বৃহৎ অংশের মতে ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের থেকে বিজেপি ২২.৭৬ শতাংশ বেশি ভোট পাওয়াটা পরিসংখ্যান অথবা রসায়ন যাই বলুন না কেন, এইখানেই লুকিয়ে রয়েছে। সিপিএম এবং কংগ্রেসের মিলিতভাবে যে ২০.৮১ শতাংশ ভোট কম পেয়েছে, তা চলে গিয়েছে বিজেপির দিকে। অল্প কিছু গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেও। সিপিএম, অন্যান্য বাম দলগুলি এবং কংগ্রেসের ভোটব্যাংক ভোট কি বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি লুঠ করতে পারবে? অথবা, বাম-কংগ্রেস কী নিজের ভোটক্ষয় রোধ করতে পারবে? তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গিয়েছে।

এখন প্রশ্ন, বিজেপি কি তাদের ৪০.৬৪ শতাংশ ভোট ধরে রাখতে পারবে? তৃণমূল কী তাদের ৪৩ শতাংশ ভোট ধরে রাখতে পারবে? বাম কংগ্রেস জোট কি (৬.৩৪ + ৫.৬৭ ) শতাংশ ভোটে আটকে থাকবে। তার থেকে বৃদ্ধি পাবে। নাকি ক্ষয় হবে। বাম কংগ্রেসের এই মিলিত ১২ শতাংশ কোন দিকে যাবে? এক তৃণমূল নেতার বক্তব্য, “বাম বা কংগ্রেস কেউই কখনও বিজেপিকে সমর্থন করেনি। এই দলগুলির উচিত হয় তাদের নিজস্ব ভোট নিরাপদ করা বা আমাদের সমর্থন করা উচিত।” অন্যদিকে, এক বিজেপি নেতা বলেন, “আমি বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসে আমাদের বন্ধুদের কাছে তাদের দলের সমাবেশে অংশ নিতে আবেদন করছি তবে বাংলার স্বার্থে আমাদের ভোট দিন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × three =