বিনা চিকিৎসায় যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ! উঠছে বহু প্রশ্ন, উত্তর আছে স্বাস্থ্য দফতরের?

কলকাতা: কিছুদিন আগে বিক্রম ভট্টাচার্য নামে কোন্নগরের এক যুবকের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ আরজিকরে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে তাঁর চিকিৎসা হয়নি। যদিও সেই…

junior doctors' strike

কলকাতা: কিছুদিন আগে বিক্রম ভট্টাচার্য নামে কোন্নগরের এক যুবকের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ আরজিকরে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে তাঁর চিকিৎসা হয়নি। যদিও সেই অভিযোগ মানতে চাননি আরজিকর কর্তৃপক্ষ। এটা বলতেই হবে এমন মৃত্যু কখনই কাম্য নয়। (Junior doctors’ strike)

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু

এমন হওয়া একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। তবু এই ঘটনায় একাধিক প্রশ্ন উঠছে। ঘটনা হল জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের জন্য কলকাতার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় আউটডোর পরিষেবা অনেকটাই বিঘ্নিত হয়েছে। কিন্তু রোগী হাসপাতালে এসে বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন এমন খবর নেই। ঘটনাচক্রে সোমবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, মিডিয়া রিপোর্টস ও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে তাঁরা নাকি জানতে পেরেছেন ২২ থেকে ২৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে।

রোগী মৃত্যু, সোর্স কী?

এ বিষয়ে একটাই প্রশ্ন, বহুবার বলা হয়েছে ‘সূত্রের খবর’ বলে সাংবাদিকরা কীভাবে খবর লেখেন? তাহলে এখন যেটা বলা হয়েছে সেটা কিসের সোর্স? কিসের সূত্র? আরও বলবার আছে। করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা একটা সময় ফিক্সড হয়ে গিয়েছিল। মৃত্যু ঘটলেও বলা হচ্ছিল তাঁদের কো-মরবিডিটি আছে। সেই মৃত্যুগুলিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলা হতো না। সেই সময় বিভিন্ন মিডিয়া যখন মৃত্যুর সংখ্যা হিসেবে যা তুলে ধরত তাতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল নবান্ন। তখন প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছিল এই সংখ্যা মিডিয়া পাচ্ছে কোথা থেকে?

কতটা স্বাভাবিক এমার্জেন্সি পরিষেবা?

তাই প্রশ্ন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যে মিডিয়া রিপোর্টসের উপর ভিত্তি করে ২২-২৩ জন বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন বলা হল, কোভিড সময়কালে তখন সেই মিডিয়া রিপোর্টসকে নবান্ন অগ্রাহ্য করত কেন? তবে কি নবান্ন যেটা বলতে চায় সেটার সঙ্গে যে বা যার মত মেলে সেটাকেই অ্যাকসেপ্ট করা হবে? একাধিক সূত্র মারফত পাওয়া খবর অনুযায়ী, জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমন সুনির্দিষ্ট উদাহরণ একটিও নেই। তার কারণ মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আজ পর্যন্ত জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর পুরোপুরি ছাড়া হয়নি। নিশ্চিত ভাবে আগামী দিনেও তা হবে না। যে বা যাঁরা আন্দোলন করছেন তাঁদের উপর চিকিৎসার মূল দায়িত্ব নেই। তাই এমার্জেন্সি পরিষেবা মোটের উপর স্বাভাবিক আছে।

বিনা চিকিৎসায় যুবকের মৃত্যু?

সম্প্রতি কোন্নগরের বাসিন্দা বিক্রম ভট্টাচার্যের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগ করে বলা হচ্ছে আরজি কর হাসপাতালে কর্মবিরতির জন্য ওই যুবক নাকি চিকিৎসা পাননি। কিন্তু আরজিকর সরকারি হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসাররা যা বলছেন সেটা তো সরকারেরই বক্তব্য বলে ধরে নেওয়া উচিত। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই যুবক আহত হওয়ার পর সকাল ৯.১০ মিনিটে আরজি করে ভর্তির পর তাঁর ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করার পাশাপাশি সব ধরনের ওষুধপত্র দেওয়া হয়। এক্স-রে ও সিটিস্ক্যান করার কথাও বলা হয়। কিন্তু সিটি স্ক্যান করাতে গিয়ে বিক্রমের অবস্থার অবনতি হয়। তখন ট্রমা কেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। বেলা ১২:৩০ টায় তাঁর মৃত্যু হয়। অর্থাৎ বিনা চিকিৎসায় যুবকের মৃত্যু হয়েছে এ কথা বলা যাবে না।

রোগী মৃত্যু, উঠছে প্রশ্ন

গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন আরও রয়েছে। আহত যুবক বিক্রম ভট্টাচার্যকে কোন্নগর থেকে কলকাতা এত দূরে নিয়ে আসতে হল কেন? বহুবার মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন জেলায় জেলায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। তবে কি শ্রীরামপুর বা কোন্নগর অঞ্চলে বা কাছাকাছি জায়গায় এমন কোনও হাসপাতাল ছিল না বলেই মুমূর্ষু রোগীকে কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন পরিবারের লোকজন? প্রশ্ন আরও আছে। যদি ‘স্বাস্থ্য সাথী’ কার্ড সব জায়গায় সমানভাবে অ্যাকসেপটেড হয়, তাহলে সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা ‘না পেয়ে’ মুমূর্ষু রোগীরা কেন বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন না? তাহলে কী ধরে নিতে হবে বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে কাউকে ভর্তি করানো যাচ্ছে না? যদি সত্যিই সেটা হয় তাহলে আরও প্রশ্ন আছে।

জবাব দেবে স্বাস্থ্য ভবন?

বারবার স্বাস্থ্য ভবন থেকে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড অ্যাকসেপ্ট না করলে সেই বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাহলে এখানে যদি সত্যিই সেটা হয়ে থাকে তাহলে কতগুলি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা জানাতে হবে স্বাস্থ্য ভবনকে। সবমিলিয়ে কোন্নগরের বাসিন্দার অকাল মৃত্যুতে অনেক প্রশ্নই কিন্তু উঠে গেল। এই সমস্ত প্রশ্নের জবাব হিসেবে স্বাস্থ্য ভবন কী জানায় এখন সেটাই দেখার।

আরও পড়ুন-

পুজো মণ্ডপের বাইরে কোন দায়িত্বে থাকবেন বিজেপি নেতাকর্মীরা?

রিজওয়ানুরের পর আরজিকর কাণ্ড, ফের কলকাতা পুলিশের ভূমিকায় উঠছে প্রশ্ন

কোন অঙ্কে সুখেন্দু শেখরের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়া কঠিন তৃণমূলের কাছে?

আরজি কর-কাণ্ড: ‘বেসুরো’ শাসক ঘনিষ্ঠ কবি সুবোধ! বিলম্বিত সু-বোধ?

বামেদের মতোই কি হাল হচ্ছে তৃণমূলের? 

আরজি কর আবহের মধ্যে কোন তথ্য অস্বস্তি বাড়াল তৃণমূলের?

চেন সিস্টেমে এবার উঠে আসবে পরপর নাম? 

Politics: Vikram Bhattacharya from Konnagar died without treatment! Is it due to the junior doctors’ strike? Many questions are being raised about the incident at RG Kar Hospital. What is the Health Department’s answer? No treatment death. Junior doctors’ strike