ইডির জালে বালু-বাকিবুর! জ্যোতিপ্রিয়র গ্রেফতারিতে সত্যিই কী বিজেপি ও শুভেন্দুর হাত রয়েছে?

নিজস্ব প্রতিনিধি: রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আর এই গ্রেফতারির পিছনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তথা বিজেপির হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার দীর্ঘক্ষণ জ্যোতিপ্রিয়র বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি। এরপর ভোর রাতে গ্রেফতার করা হয় জ্যোতিপ্রিয়কে। জ্যোতিপ্রিয় তথা তৃণমূলের অভিযোগ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপির ইশারাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? সত্যিই কি রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে জ্যোতিপ্রিয় জড়িত নন? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।
শুভেন্দু বৃহস্পতিবার জ্যোতিপ্রিয়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন,"ইনি সবটা ভাইপোকে ছেড়ে দিয়েছেন। মাঝেমধ্যে উদয় হন চোরেদের নিরাপত্তা দিতে। তিনি আজকে উদয় হয়েছেন বড় চোর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে বাঁচানোর জন্য। এর (জ্যোতিপ্রিয়) সঙ্গে বাকিবুর রহমানের সম্পর্ক ২০১২ সাল থেকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করতে চাই যে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তাঁর স্ত্রীর নামে নোটবন্দির সময় বিধাননগরের ব্যাঙ্কে চার কোটি টাকা বদল করেছিলেন। সেই টাকা কি আপনার টাকা ছিল? জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও তাঁর পিএ দিঘা ও নিউদিঘায় কতগুলো হোটেল করেছেন তার হিসেব কি আপনার কাছে আছে? জ্যোতিপ্রিয় আপনার পার্টির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন বলে ওই টাকা ৭৫-২৫ ভাগে আপনার কাছেও আসত?" যদিও মুখ্যমন্ত্রীর দাবি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই বিজেপির ইশারায় জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এরপরই শুক্রবার ভোররাতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী।
তবে এই গ্রেফতারি নিয়ে তৃণমূল যে দাবিই করুক না কেন, রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত বাকিবুর রহমানের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়ের বহু কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে ইডি সূত্রে জানা যাচ্ছে। একটি সূত্রে আগেই জানা যায় যে, বাকিবুরের এক ঘনিষ্ঠ খাদ্য দফতরে চাকরি পেয়েছিলেন। তখন খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর জ্যোতিপ্রিয়কে খাদ্য দফতর থেকে সরিয়ে বনমন্ত্রী করা হয়। আর আশ্চর্যজনকভাবে বাকিবুরের ওই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি খাদ্য দফতর থেকে রাতারাতি বদলি হয়ে যান বন দফতরে। এটা কী নিছক সমাপতন, নাকি এই ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে? সবচেয়ে বড় কথা তৃণমূল সরকারের পুলিশ কয়েক বছর আগে বাকিবুরের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করে। যদিও আশ্চর্যজনক ভাবে সেই তদন্ত প্রক্রিয়া থেমে যায়। কার হস্তক্ষেপে সেই তদন্ত প্রক্রিয়া থেমে গিয়েছিল সেটা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সূত্রের খবর, বাকিবুর ব্যাপক দুর্নীতি করে কোটি কোটি কালো টাকার মালিক হয়েছেন, এমন অভিযোগ পেয়েই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। যদিও সেই তদন্ত পরবর্তীকালে থেমে যায়। এই পরিস্থিতিতে ইডি গ্রেফতার করেছে জ্যোতিপ্রিয়কে। তাই গ্রেফতারির ঘটনা নিয়ে তৃণমূল যেভাবে বিষয়টিকে বিজেপির চক্রান্ত হিসেবে দেখছে, সেই দাবির আদৌ কতটা যৌক্তিকতা রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই। এই আবহের মধ্যে বাকিবুর ও জ্যোতিপ্রিয়কে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে পারেন ইডি আধিকারিকরা, এমনটাই জানা যাচ্ছে। তাই রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে আর কি কি তথ্য উঠে আসে এখন সেটাই দেখার।