কলকাতা: গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে অত্যন্ত নিম্নমানের এবং কুরুচিকর বক্তব্য শোনা গিয়েছে ইউটিউবার রোদ্দূর রায়ের মুখে। রবীন্দ্রনাথের গান যে ভঙ্গিমায় এবং যে ভাষা সহযোগে তিনি গেয়েছিলেন, তা নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে সর্বত্র। এর অবশ্যই প্রতিবাদ হওয়া উচিত, এমনটাই মনে করেন রুচিসম্মত মানুষজন। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন তিনি তার জেরেই গ্রেফতার হতে হয়েছে তাঁকে। পুলিশ রোদ্দূরকে গ্রেফতার করেছে গোয়া গিয়ে। অনেকেই বলছেন যেভাবে দিনের পর দিন নানা বিষয় নিয়ে কুরুচিকর বক্তব্য পেশ করে গিয়েছেন তিনি, তাতে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে। যা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
কুরুচিকর বক্তব্য বিভিন্ন সময় শুনেছে বাংলা তথা দেশের বহু রাজনীতিকের মুখ থেকে। অনুব্রত মণ্ডল, দিলীপ ঘোষ, অনিল বসু, বিনয় কোঙার, তালিকা অনেক লম্বা। কয়েক মাস আগে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমনকে অত্যন্ত কুরুচিকর ভাষায় ফোনে কথা বলতে শোনা গিয়েছে জনৈক সাংবাদিকের সঙ্গে। সেই কণ্ঠস্বর যে তাঁরই সেটা অস্বীকার করেননি সুমন। সেখানে শুধু ওই সাংবাদিক নন, গোটা বাঙালিজাতিকে অত্যন্ত নিম্নমানের নোংরা, কদর্য ভাষায় অপমান করেছেন তিনি। তবে মজার কথা হচ্ছে এই ধরনের বক্তব্য পেশ করার পরেও তাঁদের কাউকে গ্রেফতার হতে হয়েছে, সেটা আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। তবে কী প্রভাবশালী রাজনীতিক বলেই পুলিশ তাঁদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। তাই সকলেই মনে করছেন এবার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন বলেই গ্রেফতার হতে হয়েছে রোদ্দূরকে। তবে কি সাধারণ মানুষ বা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সমাজ সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করে পার পাওয়া যেতে পারে? তেমনটা হলে পুলিশ কি তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না? একমাত্র চরম প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এই প্রশ্ন উঠছে। যদিও ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, কুরুচিকর ভাষা যার উদ্দেশেই বলা হোক না কেন, সেটা অপরাধ হিসেবেই গণ্য হওয়া উচিত।
কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে রোদ্দূর রায়কে গ্রেফতার করার ব্যাপারে পুলিশ অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। বিরোধীদের অভিযোগ দাগী ক্রিমিনালদের ধরার ব্যাপারে বহু ক্ষেত্রে পুলিশের এমন সক্রিয়তা দেখা যায় যায় না। শুধুমাত্র যদি কুকথার জন্যই কাউকে গ্রেফতার করতে হয় তাহলে বিচার সব ক্ষেত্রে সমান হচ্ছে না, এই প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। এর আগে দেখা গিয়েছে কবীর সুমনের বিরুদ্ধে পুলিশ স্টেশনে এফআইআর দায়ের হয়েছে। কু-কথা বলার জন্য ডান-বাম-গেরুয়া নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। কিন্তু কটা ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে বা নেওয়ার চেষ্টা করেছে? এই প্রশ্ন আজ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। রোদ্দূর বরাবর যে ভাষায় এবং যে ভঙ্গিমায় কথা বলেছেন বা গান গেয়েছেন, তা সমর্থন যোগ্য নয়। কিন্তু আইন সবার জন্যই সমান হবে, এটাই বলছে ভারতীয় সংবিধান। যা বহু ক্ষেত্রেই আজ কিন্তু ‘মিসিং’। এই পরিস্থিতিতে ইউটিউবার রোদ্দূর রায়ের গ্রেফতারি এই চিরকালীন প্রশ্নগুলিকে নতুন করে আবার তুলে দিল সবার কাছে।