আমেরিকার আপত্তি উড়িয়ে রাশিয়া থেকে তেল কিনে লক্ষ্মীলাভ ভারতের!

আমেরিকার আপত্তি উড়িয়ে রাশিয়া থেকে তেল কিনে লক্ষ্মীলাভ ভারতের!

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাশিয়া থেকে ভারত যাতে তেল আমদানি না করে সেই আবেদন  বারবার জানিয়েছে আমেরিকার পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলি। এমনকী এ ব্যাপারে ভারতকে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি পর্যন্ত দিয়েছে ওয়াশিংটন। কিন্তু ভারত সবার আপত্তি অগ্রাহ্য করে তেল আমদানি করেই চলেছে। আর এভাবে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার ফলে প্রচুর লাভ হয়েছে নয়াদিল্লির। সূত্রের খবর, এতে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে নয়াদিল্লি। এমনকী সেই লাভের অঙ্ক আরও বেশি হতে পারে বলে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। শুধু তাই নয়, রাশিয়া থেকে সস্তায় জ্বালানি তেল পাওয়ার কারণে বহুদিন ধরেই ভারতে নতুন করে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়েনি।

 

পরিসংখ্যান বলছে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরুর আগে ভারত ব্যারেল প্রতি ১১০ ডলারে বিদেশ থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করত। এরপর গত বছরের মে মাসে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৬ ডলার করে কমিয়ে দেয় রাশিয়া। শুধু তাই নয়, শুধুমাত্র ভারতের জন্য ব্যারেল প্রতি আরও ৩০ ডলার করে দাম তারা কমিয়ে দেয়। এর ফলে আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে ভারত রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারছে। যুদ্ধের আগে রাশিয়া পশ্চিমী দুনিয়ার দেশগুলিতে অপরিশোধিত তেল বিক্রি করত। কিন্তু যুদ্ধের কারণে আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ রাশিয়া থেকে তেল নেওয়া বয়কট করলে এশিয়ার বাজারে তেল বিক্রি বাড়াতে বিশেষ পরিকল্পনা করে মস্কো। আর সেই সূত্রে রাশিয়ার কাছ থেকে তেলের শীর্ষ ক্রেতাদের মধ্যে ভারত অন্যতম প্রধান হয়ে ওঠে। জানা  গিয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিন দৈনিক ১৩ লক্ষ ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রাশিয়ার কাছ থেকে ক্রয় করেছে ভারত। বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা সেই  তেলের ষাট শতাংশ ক্রয় করেছে। ভারতের বিপুল পরিমাণ তেল আমদানির ফলে রাশিয়ার শেয়ার বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ১৮ শতাংশ। যা যুদ্ধের আগে ছিল মাত্র এক শতাংশ।

 

ভারত এভাবে তেল আমদানি করায় খুশি নয় আমেরিকার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ। যদিও এ বিষয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি স্পষ্ট বলেছেন দেশের স্বার্থে ভারত কোন কোন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করবে, কাদের থেকে বেশি তেল কিনবে সেটা পুরোপুরি নয়াদিল্লির নিজস্ব ব্যাপার। এখানে অন্য কোনও দেশের কিছু বলার থাকতে পারে না। সেই সঙ্গে জয়শঙ্কর জানিয়েছেন ভারতও চায় যুদ্ধ বন্ধ হোক। আর তেল আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের অনড় মনোভাব দেখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে আমেরিকার পাশাপাশি অন্যান্য দেশ। এ সম্পর্কে ভারতে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ফিলিপ অ্যাকারম্যান বলেছেন, “রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত তেল কিনবে কিনা সেটা নিয়ে জার্মানি মাথা ঘামাবে না।” এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ কবে থামবে তা জানা নেই কারও। কিন্তু রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল আমদানি যে চলতেই থাকবে তা স্পষ্ট। আর রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল পাওয়া যাচ্ছে বলেই ভারতে পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে আর বাড়েনি। এটা দেশবাসীর কাছে নিঃসন্দেহে বেশ স্বস্তির খবর। যদিও দেশবাসী চায় তেলের দাম আরও কমানো হোক। সেই পথে কেন্দ্র হাঁটে কিনা এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *