রাজ্যে একাই লড়বে তৃণমূল, ছন্নছাড়া বিরোধী শিবির

কলকাতা: আগামী লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে জোট করতে রাজি নয় বিজেপি বিরোধী কোনও দলই৷ বৃহস্পতিবার দিল্লিতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যে একলাই লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস৷ একইভাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, একই চলার নীতি এ রাজ্যে তাদেরও৷ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানান, তৃণমূল কংগ্রেস তো দুরের কথা, তাঁরা এবারের নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গেও হাত

রাজ্যে একাই লড়বে তৃণমূল, ছন্নছাড়া বিরোধী শিবির

কলকাতা: আগামী লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে জোট করতে রাজি নয় বিজেপি বিরোধী কোনও দলই৷ বৃহস্পতিবার দিল্লিতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যে একলাই লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস৷ একইভাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, একই চলার নীতি এ রাজ্যে তাদেরও৷ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানান, তৃণমূল কংগ্রেস তো দুরের কথা, তাঁরা এবারের নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গেও হাত মেলাতে রাজি নন৷

আগেই কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রশ্নে আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের আপত্তি ছিল৷ কংগ্রসের সঙ্গে সমঝোতা করে বামফ্রন্টের কী উপকার হয়েছে? এই প্রশ্ন তোলে আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লক৷ পার্টি সূত্রে খবর, প্রকাশ্যে না বললেও সমঝোতার বিপক্ষেই সুর চড়িয়েছে এই দুই বাম শরিক৷ আরএসপি’র সাধারন সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরীর স্পষ্ট বক্তব্য, বাম ভোটের কাঁধে ভর করে কংগ্রেস এখন রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দল৷

কংগ্রেসের ভোট তো বামেদের দিকে আসে না৷ কংগ্রেস সমর্থকরা বামেদের ভোট দেয় না৷ দরকার পড়লে সেই ভোট যায় তৃণমূলে৷ বামেদের ‘পকেট ভোট’ ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস দিকে ওই ভুল সমঝোতার ফলে চলে গেছে বলে মনে করেন তিনি৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র জানিয়েছেন, আমরা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট চাই না৷ তবে, সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যবস্থা নেবেন৷

বৃহস্পতিবার সোমেন মিত্র বলেন, পশ্চিমবঙ্গে কোনও জোট হচ্ছে না৷ দিল্লিতে জোট সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা বিজেপির দুর্নীতির বিরুদ্ধে, জাতীয় স্বার্থে৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বরাবরের মতই তৃণমূলের বিরোধিতা করবে কংগ্রেস৷ তাঁর কথায়, এর আগেই এসম্পর্কে কথা হয়ে গেছে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে৷ এ ব্যাপারে তিনি মোট দিয়েছেন বলেও এদিন জানান তিনি৷ তিনি আরও বলেন, চিটফান্ড কান্ডে তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আগেও পথে নেমেছিল কংগ্রেস৷ এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না৷ আগামীদিনে আবারও চিটফান্ড আমানতকারীদের চিহ্নিত করে তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিতে খুব শীঘ্রই পথে নামতে চলেছেন বলেই এদিন জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি৷

জোটের ব্যাপরে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলানোর বিরুদ্ধে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা দলের পরিষদীয় সচেতক মনোজ চক্রবর্তী প্রমুখ৷ এর আগেই কংগ্রেস রাজ্যে তৃণমূলের কাছে চারটি আসন চেয়েছিল৷ বহরমপুর, জঙ্গিপুর, দক্ষিণ মালদহ এবং রায়গঞ্জ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তিনটি দিতে রাজি৷ বহরমপুর, জঙ্গিপুর ছাড়াও দক্ষিণ মালদহ এবং রায়গঞ্জের মধ্যে একটি৷ এতেই আটকে গেছে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট৷ আসলে তৃণমূল নেতৃত্ব রাজ্য জুড়ে কংগ্রেসকে নিস্ক্রিয় বা ‘অফ’ রাখতে চাইছে৷ যাতে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের ভোটটা কংগ্রেসে না যায়৷ এছাড়াও বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ভোট এক জায়গাতেই থাকে৷

সূত্রের খবর, তৃণমূলের প্রথম সারির এক নেতার সঙ্গে এ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছেন কংগ্রেস কোষাধক্ষ আহমেদ পটেল। তবে কেউই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি৷ এদিকে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিষয়ে অনাহার কথা জানিয়েছেন৷ কংগ্রেসের প্রবীণ নেতৃত্বের একাংশ অবশ্য মমতার সঙ্গে জোটে আগ্রহী৷  আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি দলের কোর কমিটির বৈঠক ডেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর আগেই তিনি জোটের নিষ্পত্তি চাইছেন৷ আহমেদ পটেলের সঙ্গে এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়েছে বলে সূত্রের খবর৷ কিন্তু সেই মধ্যস্থতা ফলপ্রসু হয়নি৷ তবে রাহুলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির৷ সেখানে রাহুলকে ১৭-১৭-৮ ফর্মূলা দিয়েছেন তিনি৷ কংগ্রেস ১৭টি, সিপিএম ১৭টি এবং বাকি বাম দলগুলি আটটি আসনে লড়বে বলেই সিপিএম সাধারণ সম্পাদকের প্রস্তাব৷ যদিও কেউই প্রকাশ্যে এ নিয়ে কিছু বলেননি৷ প্রদেশ কংগ্রেস সিপিএমের প্রস্তাবে খুশি৷ মুর্শিদাবাদ ও মালদহ ছাড়া সব জেলাতেই আসন ছাড়তে রাজি প্রদেশ নেতারা৷ তাতে অবশ্য রাজি নয় আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআইয়ের মত বাম দলগুলি৷ এদিন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, দিল্লিতে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কোনও রকম জোট হচ্ছে না৷ তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পার্টি থেকে সাফ নির্দেশ আছে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট বরাবরের মতই বিজেপি সহ তৃণমূল ও কংগ্রেসের বিরোধিতা করবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − seventeen =