কলকাতা: দীর্ঘ জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঘরে ফেরার প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ ভাতৃদ্বিতীয়া দিন কালীঘাটে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে ফোঁটা নিয়েছেন কানন৷ বিজেপিতে নাম লেখানো দু’মাস পর শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে এবার মুখ খুললেন অভিনেত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়৷
সর্বভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শোভন পত্নী (বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে) রত্না বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘কাল দিনটি যা হয়েছে, তাতে খুব ভালোই খবর৷ দিদি তো এতদিন ওঁকে ছোট ভাই হিসাবেই দেখেছে৷ গতবছর ফোটা দিতে পারেনি৷ আমার মনে হয়, শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে৷ এই শুভবুদ্ধিটা যেন উনি ধরে রাখতে পারেন এবং মমতাদির হাত ধরে যেমন উন্নতি করেছেন, আশা করি ফের মমতাদির হাত ধরেই আগামী দিনে একই ভাবে চলবেন৷ দিদি কিন্তু মায়ের মতো৷ যেকোনও বড়-ছোট ভাইয়ের কাছে দিদি কিন্তু তাঁর মায়ের স্নেহ দিয়ে থাকেন৷ মমতা দিদিও মায়ের স্নেহ দিয়ে এসেছেন৷’’
গত ১৪ আগস্ট বিজেপিতে যোগ দেওয়ার মুহূর্ত থেকে শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি৷ ‘ডাল-ভাত’ থেকে ‘পরকীয়া’ বিতর্কে বিদ্ধ হন দলের অন্দরে৷ বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে নতুন দলে যোগ দেওয়ার ১৬ দিনের মাথায় বিজেপি ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেনশোভন-বৈশাখীর৷ এই নিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে শুরু হয় নয়া চর্চা৷ শোভন-বৈশাখীর ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের ঘটনায় বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যায় বঙ্গ বিজেপি শিবির৷ আর এই পরিস্থিতিতে এবার দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে খোদ নেত্রীর বাড়িতে গিয়ে ‘গেরুয়া কাননে’র ফোঁটা, ‘ঘর ওয়াপসি’র জল্পনা বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল৷ দল ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে আগেই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের নিষ্কৃতি দেওয়া হোক৷ প্রয়োজনে পদত্যাগ পাঠাতে পারি৷ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছি৷ বারংবার অসত্য কথা বলা হচ্ছে৷ ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে৷ পুরানো চিটিতেই যদি পাই গলাতে চাই, তাহলে তো পুরানো দলেই থাকা যেত৷ শোভন চট্টোপাধ্যায়ও চান দল ছাড়তে৷’’
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার শর্ত হিসাবে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, দেবশ্রী রায় যেদিন বিজেপিতে যোগ দেবেন, সেটাই হবে তাঁর বিজেপিতে শেষ দিন! শোভন চট্টোপাধ্যায়ের এহেন হুঁশিয়ারি পর দেবশ্রীকে নিরাশ করেছিল বিজেপি নেতৃত্ব৷ কিন্তু, পরে সেই বিজেপি দেবশ্রীকে দলে যোগদানের তৎপরতা শুরু করায় ক্ষুব্ধ হন শোভন৷
কেননা, বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে আগেই সরব হয়েছিলেন শোভনবাবুর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ ঘিরেও তৈরি হয় বিতর্ক৷ বিতর্ক আরও বাড়িয়ে ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ শোভন-বৈশাখীকে ডাল-ভাতের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন তিনি৷ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রথম সাংবাদিক বৈঠক করে দিলীপ ঘোষের পাশে বসেই ডাল-ভাত মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন বৈশাখীদেবী৷ মুখ খুলেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ সেই বিতর্ক মিটতে না মিটতেই দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে শোভন-বৈশাখীর গরহাজিরা নিয়ে নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক৷ সেই নিয়েও দানা বেঁধেছিল বিতর্ক৷ আমন্ত্রণ পাননি বলে সভায় অনুপস্থিত থাকার কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হলেও শোভন-বৈশাখী নিয়ে বিজেপির অন্দরে বাড়তে থাকে নানান জল্পনা৷