কলকাতা: সিবিআই তলব পেয়ে সিবিআইয়ের দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্সে প্রথম হাজির হলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ আজ দুপুরে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেন তিনি৷ প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সিবিআইয়ের দপ্তর থেকে বেরিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, ওখানে বসে ছিলাম৷ কিছুই হয়নি৷ তবে, পার্থবাবু প্রকাশ্যে কিছু বলতে না চাইলেও সিবিআই সূত্রের খবর, ডেরেক ওব্রায়েন ও পার্থ চট্টোপধ্যায়ের বয়ান মিলিয়ে দেখে ফের ডাকা হতে পারে তাঁকে৷
তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলার’র সম্পাদক পার্থ চট্টোপধ্যায়৷ তৃণমূলের মুখপত্রের সঙ্গে সারদার যোগাযোগ নিয়ে এদিন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জেরা শুরু করে সিবিআই, খবর সূত্রের৷ জানা গিয়েছে, মূলত তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলার’র সঙ্গে তৃণমূলের ঠিক কী যোগাযোগ ছিল, সারদার সঙ্গে মুখপত্রের কোনও চুক্তি হয়েছিল কি না, কোনও আর্থিক লেনদেন হয়েছিল কি না, তা জানতে চাওয়া হয়৷ এই প্রথম সারদা মামলায় তাঁকে তলব বলে জানা হয়৷ দেন প্রথম হাজিরা৷ যেহেতু তিনি তৃণমূলের মহাসচিব ও ওই পত্রিকার সম্পাদক, সেই কারণে মুখপত্র নিয়ে তাঁর কাছে কোনও তথ্য আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর৷
এর আগে একই ইস্যুতে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ওব্রায়েন৷ সূত্রের খবর, ওই জেরায় পার্থবাবুর নাম করেন তিনি৷ সেই সূত্র ধরে শিক্ষামন্ত্রীকে তলব করা হয়৷ এছাড়াও মুখপত্রের সঙ্গে সারদার লেনদেন সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে ডেরেক ওব্রায়েনকে জেরা করা হয় বলে খবর৷ সারদার সঙ্গে তৃণমূল মুখপত্রের আদৌ কোনও চুক্তি কিংবা লেনদেন হয়েছিল কি না, হলে কার মারফত হয়েছিল তা জানতে ডেরেককে এই নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ হয় বলে সিবিআই সূত্রে৷ জানা গিয়েছে, ডেরেক ওব্রায়েন দেওয়া বয়ান রেকর্ডের পর তা পর্যালোচনা করবে সিবিআই৷
জাগো বাংলার প্রকাশক হিসাবে তৃণমূল সাংসদ ডেকের ও’ব্রায়নকে নোটিস পাঠায় সিবিআই৷ সূত্রের খবর, তৃণমূলের মুখপত্র জাগো বাংলার আয়-ব্যায় ও সারদার সঙ্গে ওই মুখপত্রের কোনও যোগাযোগ ছিল কি না, তা জানতে চাওয়া হয়৷
সরদাকাণ্ডের তদন্তে এর আগেও মুখপত্র জাগোর অ্যাকাউন্টে নজর দিয়েছে সিবিআই৷ ৩১ জানুয়ারি ওই সংবাদপত্রের অ্যাকাউন্টের খোঁজখবর দিতে মুখ্যমন্ত্রীর আপ্তসহায়ক মানিক মজুমদারের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই৷ দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে জেরা৷
তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলার’ হিসাবে জানতে আগেই তাঁকে নোটিস পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ওই দিন মানিক মজুমদারের কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে এবিষয়ে তাঁকে জেরা করেন সিবিআই আধিকারিকরা৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি বিক্রি সংক্রান্ত তথ্য পেতেই ওই অভিযান বলে সিবিআই সূত্র খবর৷
জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর আপ্তসহায়ক তৃণমূলের মুখপত্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের দেখেশোনা করতেন৷ তিনিও ওই অ্যাকাউন্টের তিন এক জন সিগনেচার অথরিটি হিসাবেও ছিলেন৷ সিবিআই সূত্রে খবর, এদিন ওই অ্যাকাউন্টের সমস্ত লেনদেন খতিয়ে দেখতে চান সিবিআইয়ের আধিকারিকরা৷ ওই অ্যাকাউন্টে কোথা থেকে কত টাকা ঢুকছে, কারা কারা টাকা পাঠিয়েছে, তাও খতিয়ে দেখা হয় বলে জানা গিয়েছে৷
সূত্রের খবর, তৃণমূল ইতিমধ্যেই আয়কর বিভাগকে ছবি কেনাবেচার বিস্তারিত হিসাব দিয়ে দিয়েছে৷ যাঁরা ছবি কিনেছেন, তাঁরা চেকে টাকা দিয়েছেন৷ সেই টাকা দলের মুখপত্র জাগো বাংলার অ্যাকাউন্টে গিয়েছে৷ পুরো বিবরণ নির্বাচন কমিশনের কাছেও দেওয়া হয়৷ ত্রিনেত্র থেকে টাকা পাওয়া নিয়ে সূত্রের বক্তব্য, সব টাকা চেকে এসেছে৷ যাঁরা চেকে টাকা দিচ্ছেন, তাঁরা কারা, কী ধরনের কোম্পানি সে সব তো দল দেখতে যাবে না৷ দিল্লিতে ভোটের আগে আপ-এর অনুদান নিয়ে এ রকমই অভিযোগ উঠেছিল৷ তখন অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঠিক এই যুক্তিই দিয়েছিলেন৷
গতবছর ১০ ডিসেম্বর সিবিআই অফিসে হাজিরা দেন সর্বভারতীয় তৃণমূলের সভাপতি সুব্রত বক্সী৷ বছর নয় আগে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবির একটি প্রদর্শনী হয়েছিল৷ জানা গিয়েছে, সেখানে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গেই ছবি ক্রেতাদের তালিকায় নাম রয়েছে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার একাধিক আধিকারিকদের। যেহেতু এই তিনজন নেতা দলের তরফে মুখপত্রের তহবিলের হিসেব রক্ষণাবেক্ষণ করেন, তাই তাঁদেরকেই ডেকে ঠায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ এছাড়াও দলের অ্যাকাউন্টে টাকার হিসাবও চাইতে পারেন তদন্তকারীরা৷ সিবিআই সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বিক্রি করে যে টাকা তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’-র তহবিলে গিয়েছিল, সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই মূলত তাঁকে জেরা করে সিবিআই৷