সিপিএমের ইডি অফিস অভিযান কতটা তাৎপর্যপূর্ণ? চাপ বাড়বে তদন্তকারীদের উপর?

সিপিএমের ইডি অফিস অভিযান কতটা তাৎপর্যপূর্ণ? চাপ বাড়বে তদন্তকারীদের উপর?

নিজস্ব প্রতিনিধি: দুর্নীতির অভিযোগের পাহাড় জমে গিয়েছে। আর সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে রয়েছে আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি উপযুক্ত  পদক্ষেপ করছে না। এই অভিযোগ এনে ইডি অভিযানের  ডাক দিয়েছে সিপিএম তথা বামেরা। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যার যথেষ্ট তাৎপর্য আছে বলে মনে করা হচ্ছে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করেছে ইডি। সেই সঙ্গে ডাকা হয়েছে অভিষেক পত্নী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। এখানেই শেষ নয়, হাজিরার জন্য নোটিস পাঠানো হয়েছে অভিষেকের বাবা অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মূলত ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ মামলায় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। উল্লেখ্য এই সংস্থার সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার যোগসূত্র রয়েছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। নতুন করে আদালতের কোনও নির্দেশ না এলে এই চারজনকে শীঘ্রই জিজ্ঞাসাবাদ করবেন ইডি আধিকারিকরা।

তবে বিরোধীদের দাবি শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হবে না, উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে। আর সেটা হচ্ছে না বলে বহুদিন ধরেই তৃণমূল বিরোধীরা সিবিআই-ইডির উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে। সবচেয়ে বড় কথা কলকাতা হাইকোর্টে দিনের পর দিন এই ইস্যুতে তিরস্কৃত হচ্ছেন সিবিআই ও ইডির আইনজীবীরা। কেন তদন্ত এত ধীর গতিতে চলছে, সেই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি আদালতের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা কী কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন? আর আদালতের এই সংক্রান্ত মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই সিপিএম তদন্তকারীদের উপর চাপ বাড়ানোর জন্য ইডি অভিযান করছে। অবিলম্বে যাতে দোষীদের গ্রেফতার করা হয় সেটাই তাদের প্রধান দাবি। তাই বামেদের সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান নিয়ে যথেষ্ট রাজনৈতিক কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

যদিও বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ জানাচ্ছেন, সিবিআই বা ইডি চট করে কাউকে গ্রেফতার করে না। দিনের পর দিন ধরে তদন্ত চালিয়ে, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করে, হাতে একশো শতাংশ নিশ্চিত তথ্য প্রমাণ নিয়ে তবেই তারা গ্রেফতারের রাস্তায় যায়। তাই দুর্নীতি কাণ্ডে যুক্ত মাথাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দিকে অভিযোগের আঙুল যেভাবে তুলছে বিরোধীরা, তা ঠিক নয় বলে বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ মনে করছেন। তাঁরা মনে করছেন সমস্ত তথ্য প্রমাণ হাতে এলে যে কোনও সময় গ্রেফতার হতে পারেন তথাকথিত ‘বিগ শট’ নেতনেত্রী। কিন্তু তৃণমূল বিরোধীদের দাবি সিবিআই ও ইডি আর কত প্রমাণ চাইবে? কেন এখনও পর্যন্ত আদালতের নির্দেশ থাকলেও নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র ভয়েস স্যাম্পল টেস্ট করা হল না? সুজয়ের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির যে কথোপকথন হয়েছে তার কলরেকর্ড তদন্তকারীতে হাতে রয়েছে বলেই খবর। যা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্য রাজনীতিতে ‘ভূমিকম্প’ ঘটিয়ে দিতে পারে বলে বিরোধীদের দাবি। কিন্তু বঙ্গ রাজনীতিতে সেই ‘ভূমিকম্প’ কী আদৌ ঘটবে? সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই সমস্ত দাবি-দাওয়া হাতে নিয়েই সিপিএম সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের ডাক দিয়েছে। তারা বিক্ষোভ দেখাবে সিবিআই দফতরের সামনেও। এরপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা কতটা নড়েচড়ে বসেন এখন তারই অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *