নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের আগে এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে নির্বাচনী বন্ডের বিক্রি। এবছর মাত্র তিনমাসে ১,৭১৬ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছে, যেখানে ২০১৮’তে গোটা বছরে বিক্রি হয়েছে ১,০৫৬ কোটি টাকা। তথ্যের অধিকার আইনে পুনের বিহার দুর্বে যে নোটিস পাঠিয়েছিলেন, তার জবাবে এক বিবৃতিতে একথা জানিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া।
নির্বাচন কমিশনের কাছে বিজেপি গত আর্থিক বছরের যে অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য। ২০১৮’তে, যে ১,০৫৬ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছে, তার ৯৪.৫ শতাংশই পেয়েছে একা বিজেপি। সিপিআই(এম) তার নির্বাচনী ইশ্তেহারে নির্বাচনী বন্ড বাতিল করার কথা বলেছে। পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, বিজেপি কেন মানুষকে জানাতে চাইছে না, তার কোন বন্ধুরা এই অর্থ দিয়েছে, কত করে দিয়েছে? কারণ, মানুষ জেনে যাবেন কীভাবে এই সরকার তার বন্ধুদের এই পাঁচ বছরে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে, আর কীভাবে তারা এই বন্ড কেনার মধ্যে দিয়ে বিজেপি’কে অর্থ পুষিয়ে দিচ্ছে।
গত বছর জানুয়ারিতে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্র। বিধি অনুযায়ী ভারতীয় নাগরিক এমন যে কেউ এবং ভারতের কোনও সংস্থা এই বন্ড কিনতে পারবে। একমাত্র নথিভূক্ত রাজনৈতিক দল, যাদের গত লোকসভা কিংবা বিধানসভা নির্বাচনে সমর্থনের হার ১ শতাংশের উপর, তারা এই বন্ড পাওয়ার যোগ্য থাকবে। ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লক্ষ এবং ১ কোটির বন্ড পাওয়া যায়। প্রতি ত্রৈমাসিকে দশদিনের জন্য এই বন্ড খোলা হয়। আর নির্বাচন সামনে থাকলে এই মেয়াদ থাকবে ১৫দিন। ২০১৮-তে নির্বাচনী বন্ড বিক্রির ব্যাপারে স্টেটব্যাঙ্ক যে তথ্য দিয়েছে, তাতে সবচেয়ে এগিয়ে মুম্বাই। তারপরেই কলকাতা।
এরপর রয়েছে দিল্লি, হায়দরাবাদ। নির্বাচনী বন্ড বাতিলের আরজি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস। সিপিআই(এম)’র বক্তব্য, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে আসলে করফাঁকির ব্যবস্থা পাকা করা হয়েছে। অরুণ জেটলি স্বচ্ছতার অজুহাত খাড়া করেছেন। কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে টেবিলের তলা দিয়ে আগে দলের ভাঁড়ার ভরানো হত। তা বন্ধ করার দাবি করে মোদী সরকার এই বন্ড ব্যবস্থা চালু করেছে। কিন্তু এর ফলে মোটেই স্বচ্ছতা আসবে না। বরং, সেই কাটমানির দুর্নীতিকেই আইনি রক্ষাকবচ ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হচ্ছে। স্বচ্ছতাই যদি উদ্দেশ্য হয়, তাহলে কোন কর্পোরেট সংস্থা, কোন রাজনৈতিক দলকে কত টাকা সাহায্য করছে, তা প্রকাশ্যে আসা উচিত। তা করা হচ্ছে না কেন ? কেন সে পথ খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়নি?