কলকাতা: এনআরসির আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বাংলা! রাজনৈতিক দলের এনআরসির জিগির, বাংলার জনতার মনে যে কতটা প্রভাব ফেলেছে তা কার্যত পরিষ্কার সরকারি দপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান! ভয়াবহ সেই রিপোর্টে কার্যত জনবিস্ফোরণের ইঙ্গিতে স্তম্ভিত পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷
খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভা থেকে ঘোষণা করেছিলেন, বাংলায় এনআরসি হবে৷ তবে কোন শরণার্থীকে বাদের খাতায় ফেলা হবে না৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহা বাংলায় নির্বাচনী প্রচারে এসে এনআরসির প্রসঙ্গ তুলতে ছাড়েননি৷ নির্বাচনী প্রচারে পর দুর্গাপুজোর উৎসবের মধ্যেও বাংলা সফরে এসে এনআরসি নিয়ে সাফ জানিয়ে বিজেপির অবস্থান৷ হিন্দু বাঙ্গালিদের বাংলা থেকে তাড়ানো হবে না বলেও দিয়েছিলেন আশ্বাস৷ সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের মন্তব্যের পর রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছিলেন, বাংলা থেকে ২ কোটি মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে৷ পাল্টা এনআরসি ইস্যুতে পিছু পা হননি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বেঁচে থাকা পর্যন্ত বাংলা এনআরসি করতে দেবেন না৷ বিজেপি-তৃণমূলের টানাটানির মাঝে বামেদের তরফেও জানানো হয়েছে তাদের অবস্থান৷ সূর্যকান্ত মিশ্র তো বলেই ফেলেছিলেন. বাংলায় এনআরসির ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হলে তা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে৷ এনআরসি নিয়ে রাজনৈতিক মহলের চাপানউতোর চলছে৷ কিন্তু বাংলার বাসিন্দাদের মন থেকে কাটেনি আতঙ্ক৷ আর সেই আতঙ্কে কিছুটা ইঙ্গিত মিলল রাজ্য সরকারের রেশন কার্ড সংক্রান্ত পরিসংখ্যান৷
খাদ্য দপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে বাংলার একটি দৈনিক সংবাদপত্র৷ সেখানে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে৷ জানানো হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে ১৮ দিনের বিশেষ শিবিরে নতুন রেশন কার্ড করার জন্য ১১ লক্ষ ৩২ হাজার ২৯৫টি আবেদন জমা পড়ে৷ পরিবারের নতুন সদস্যের জন্যরেশনে নামে তোলার জন্য আবেদন জমা পড়েছে ২৮ লক্ষ৷ কার্ডে তথ্য সংশোধনীর সংক্রান্ত প্রায় ১ কোটি আবেদন জমা পড়েছে বলে খবর৷ ফলে, বাংলার অধিকাংশ মানুষ চাইছেন, তাঁদের নথপত্র গুছিয়ে রাখতে৷ প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ কেন নতুন রেশন রার্ড পেতে বিপুল পরিমাণ আবেদনের প্রবণতা? এতদিন কেন এই ১১ লক্ষ মানুষ আবেদন করলেন না? এতদিন কি তাঁদের রেশন বা কার্ডের কি কোনও প্রয়োজনীয়তা ছিল না?
আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷ কেননা অনলাইনে ভোটার ভোটার তালিকা সংশোধনী নিয়ে ইতিমধ্যেই তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়েছে বাংলায়৷ ইতিমধ্যেই আবেদনের প্রবণা বিপুল মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে৷ আর তার জেরে নির্বাচন কমিশনের ওয়েব পোর্টাল ‘ভোটার হেল্পলাইন’ অ্যাপ খুলতে সমস্যা হচ্ছে৷ ওয়েবসাইটের বহনক্ষমতা ওপরে একসঙ্গে বেশি মাত্রায় তা ব্যবহারের জেরে সার্ভারে পড়ছে চাপ৷ আর তাতেই মাঝেমাঝেই বিকল হয়ে পড়ছে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তথ্য যাচাই করার অনলাইন পদ্ধতি৷ এখনও পর্যন্ত কতজন অনলাইনে তথ্য যাচাই করেছেন, তার পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে না এলেও ওয়েবসাইটের ওপর যে হারে চাপ পড়ছে তা থেকে খানিকটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷
আগামী ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে ভোটার তালিকা যাচাই পর্ব চলবে৷ আর আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে নতুন ডিজিটাল রেশন কার্ডের আবেদন করা যাবে৷ ফলে একদিকে ভোটার কার্ডের তথ্য যাচাই ও রেশন কার্ডের আবেদন, নতুন করে মাত্রা পেতে শুরু করেছে বাংলার জনবিস্ফরণের আতঙ্ক৷ কেননা, আর কিছুদিন পরই শুরু হবে জনগণনা৷ পরপর তিনটি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে কী হারে বেড়েছে বাংলার জনসংখ্যান৷ নতুন রেশন কার্ডের জন্য বিপুল আবেদন ও ভোটের তালিকা নাম তোলা তুমুল উৎসাহ কার্যন্ত জনবিস্ফোরণে প্রাথমিক ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন পর্যপেক্ষক মহলের আশঙ্কা৷ তবে, জনগণনার রিপোর্ট আসার পরই বাস্তবে বোঝা যাবে কী অবস্থা বাংলার৷