প্রশ্ন তুলেও পতঞ্জলি নিয়ে কেন বারবার পিছিয়ে আসছে সরকার? কতটা নিরাপদ রামদেবের সংস্থার এই পাঁচটি ওষুধ?

প্রশ্ন তুলেও পতঞ্জলি নিয়ে কেন বারবার পিছিয়ে আসছে সরকার? কতটা নিরাপদ রামদেবের সংস্থার এই পাঁচটি ওষুধ?

নিজস্ব প্রতিনিধি: ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এল যোগগুরু রামদেবের পতঞ্জলি সংস্থা ও তাদের পাঁচটি ওষুধ। পতঞ্জলির পাঁচটি ওষুধ উৎপাদনের উপর যে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল উত্তরাখণ্ড সরকার, তা প্রত্যাহার করা হল মাত্র দু’দিনের মধ্যেই। ওই পাঁচটি ওষুধ উৎপাদিত হতো দিব্যা ফার্মেসিতে। উত্তরখণ্ডের আয়ুর্বেদ ও ইউনানি লাইসেন্সিং অথরিটি বিষয়টি নিয়ে জানিয়েছে, পতঞ্জলির ওই পাঁচটি ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত তাড়াহুড়ো করে নেওয়া হয়েছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা এবার প্রত্যাহার করে নেওয়া হল।

দিব্যা ফার্মেসিতে যোগগুরু রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলির যে পাঁচটি ওষুধ তৈরি হতো সেগুলি হল বিপিঘৃত, মধুঘৃত, থাইরোঘৃত, লিপিডোম এবং আইঘৃত গোল্ড ট্যাবলেট। সম্প্রতি ওই ওষুধগুলি তৈরির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কি কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? উল্লেখ্য পতঞ্জলি সংস্থা বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছিল এই ওষুধগুলি ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, গয়টার, গ্লুকোমা ও উচ্চ কোলেস্টেরলের মতো উপসর্গের ক্ষেত্রে ভাল কাজ করে। কিন্তু সেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। উত্তরাখণ্ডের আয়ুর্বেদ ও ইউনানি লাইসেন্সিং অথরিটি জানায় ওষুধগুলির প্রক্রিয়াকরণ ও  উপযোগিতা আদৌ পরীক্ষিত হয়নি। এই যুক্তিতেই ওষুধগুলি উৎপাদন বন্ধের  নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই নির্দেশের দু’দিনের মধ্যেই কীভাবে তা প্রত্যাহার করে নিল সরকার? রাজ্যের আয়ুর্বেদ ও ইউনানি লাইসেন্সিং অথরিটি নতুন নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, ওই পাঁচটি ওষুধ আগের মতোই তৈরি করতে পারবে দিব্যা ফার্মেসি। কিন্তু প্রশ্ন হল ওষুধগুলি উৎপাদন করার ব্যাপারে যে সবুজ সংকেত নতুন করে দেওয়া হয়েছে, তার আগে সেগুলির গুণমান পরীক্ষা করা দেখা হয়েছে তো? যে রোগগুলির বিরুদ্ধে ওষুধগুলি ভাল কাজ দেয় বলে দাবি করছে পতঞ্জলি সংস্থা, তা কতটা সত্যি তা আদৌ খতিয়ে দেখা হয়েছে তো? সমালোচকদের দাবি রামদেব বরাবরই বিজেপির খনিষ্ঠ। তাই তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাই মাঝেমধ্যে একটু ফোঁস করেই দায় এড়িয়ে যায় সরকার।

তবে এই প্রথম নয়। অতিমারি করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০ সালে করোনিল কিট বাজারে আনে পতঞ্জলি সংস্থা। সেই সময় টানা লকডাউনের কারণে বিভিন্ন ব্যবসা যখন মুখ থুবড়ে পড়েছে তখন মাত্র চার মাসের মধ্যেই করোনিল কিট বিক্রি করে পতঞ্জলি সংস্থা ২৫০ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল বলে শোনা যায়। তখন ওষুধটি নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠে। যদিও পতঞ্জলি প্রচার করে তাদের তৈরি ওষুধ করোনা ঠেকাতে একশো শতাংশ সফল। তারা জানায় করোনিল এবং শ্বাসরি নামে দুটি ওষুধ নাকি মাত্র সাত দিনে করোনা রোগীদের সারিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু নানা মহল থেকে পরামর্শ পেয়ে সেই সময় ওই ওষুধ সংক্রান্ত সমস্ত রকম বিজ্ঞাপন কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ করে দেয়। কেন্দ্র জানায় কোভিড সংক্রান্ত ওষুধের ক্ষেত্রে আয়ুষ মন্ত্রকের অনুমোদন না নিয়েই রামদেবের পতঞ্জলি সংস্থা সেগুলি বাজারে ছেড়েছে। এর পাশাপাশি উত্তরাখণ্ড সরকার চাঞ্চল্যকর দাবি করে জানায়, লাইসেন্স নেওয়ার সময় সেগুলি করোনা সারাতে পারে তার উল্লেখ করা হয়নি।

শুধু বলা হয়েছিল জ্বর, কাশিতে কাজ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে ওষুধগুলি। সেই শর্তেই নাকি করোনিলকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। এরপর পতঞ্জলি সংস্থার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়। তখন পতঞ্জলি সংস্থা কিছুটা ব্যাকফুটে গিয়ে বলে, আমরা বলছি না এই ওষুধ করোনা সারায়। আমরা শুধু ওষুধটিকে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করেছি। সেই সঙ্গে সংস্থা জানায় এই ওষুধ মানুষের শরীরে ইমিউনিটি বাড়াবে। কিন্তু ২০২১ এর ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এবং কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গড়কড়ির উপস্থিতিতে করোনিলের বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন পতঞ্জলির প্রতিষ্ঠাতা রামদেব। রামদেব দাবি করেন তাঁরা নাকি বিশ্ব সংস্থার কাছ থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন এই ওষুধ ব্যবহার করা নিয়ে। তখন বিজেপির একাধিক নেতা পতঞ্জলিকে প্রশংসায়  ভরিয়ে দিতে থাকেন। যদিও পরে ‘হু’ জানিয়ে দেয় এমন কোনও ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। এরপরই প্রশ্ন ওঠে তখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী যিনি ছিলেন সেই হর্ষ বর্ধন নিজে একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক। তাই তাঁর উপস্থিতিতে কীভাবে এমন ভ্রান্ত দাবি করেছিলেন রামদেব? রামদেব ও তাঁর সংস্থার পিছনে গেরুয়া শিবিরের সরাসরি সমর্থন রয়েছে সে কথা সকলেই জানেন। কিন্তু অতিমারি করোনার সময় যেভাবে তিনি একটি ওষুধ বাজারে এনে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে গেলেন, তা কীভাবে মেনে নিয়েছিল কেন্দ্র, সেই বিতর্ক আজও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রামদেবের পাঁচটি ওষুধের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেও পিছিয়ে এল উত্তারাখণ্ড সরকার। যা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ এই ওষুধগুলি গ্রহণ করলে কতটা নিরাপদ থাকবেন, সে প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসক মহলের একাংশ। সব মিলিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেই গেল যোগগুরু রামদেবের পতঞ্জলি সংস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + two =