বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্যে বাড়ছে হুমকি-উস্কানি! কোন পথে বাংলার ভোট-ভবিষ্যৎ?

বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্যে বাড়ছে হুমকি-উস্কানি! কোন পথে বাংলার ভোট-ভবিষ্যৎ?

তপন মল্লিক চৌধুরী : রাজ্যে ভোটের পরিবেশনেই বলছেন বিজেপি নেতৃত্ব।তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও নির্বাচন কমিশনকে নালিশ জানাতে চলেছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।সংসদ চলাকালীনই দল বেঁধে গিয়ে এই অভিযোগ জানানোর পরিকল্পনা করছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতা সহ সাংসদেরা। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আগামী ছ’মাস কীভাবে বাংলায় প্রচার চালানো হবে, তা ঠিক করতেই দিল্লিতে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে রোজ বিরোধী নেতা-কর্মী হত্যা হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদী ও মাওবাদীদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। যার জেরে রাজ্যে এক আতঙ্কের বাতাবরণের সৃষ্টি হয়েছে।এরমধ্যে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হওয়া কখনই সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন তাঁরা।

রাজ্যে ভোটের পরিবেশ নেই-এই অভিযোগ যখন তোলা হচ্ছে, রাজ্যের পরিবেশকে যখন সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেওয়া হচ্ছে; তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাক্ষসী বলছেন বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ। গত মঙ্গলবার বর্ধমানে দলের এক সভায় যোগ দিয়ে সৌমিত্র খাঁ বলেন, রাক্ষসী মমতা আর বাটপার ভাইপো কি দশকোটি মানুষের কন্ঠরোধ করবেন? সভায় দাড়িয়ে সৌমিত্র খাঁঘোষণা করেন, ফের বিজেপিকর্মীদের ওপর হামলা হলে তৃণমূলের নেতাদের চ্যালাকাঠ দিয়ে ঠ্যাঙানি দেওয়া হবে।

সৌমিত্র খাঁ এদিনের সভায় শুধু যে মুখ্যমন্ত্রীকে অশালীন মন্তব্য করেছেন তাই নয়, তিনি ওই সভায় দাড়িয়ে পুলিশকেও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জেলার এসপি কান খুলে শুনে নিন সময় এলেই বোঝা যাবে। আমরা ক্ষমতায় আসছিই। পুলিশকে দিয়ে বিজেপিকে আটকানো যাবে না।

বিজেপি নেতার এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে তৃণমূলের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, বিজেপি অসভ্য বর্বরের দল। যেমন দল তেমনই ওদের নেতাদের মুখের ভাষা। কালচারও তেমনই। তবে এদিন দেবু টুডু পাল্টা হুঁশিয়ারী দিয়ে যা বলেন, সেই ভাষাকে কতখানি সভ্য ও মানবিক বলা যাবে সেটাও ভাবনার বিষয়। তিনি বলেন,কেন্দ্র রাজ্যের বকেয়া পাওনা ৫৪ হাজার কোটি টাকা এখনও দেয়নি। তারপরেও মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যকে বিজেপি নেতারা কটু কথা বলে চলেছে। এরপর থেকে বিজেপির সোমিত্র খাঁ ও রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমানে এসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ালে ওদের কার্জনগেট চত্ত্বরে ল্যাম্পপোষ্টে বেঁধে রেখে কৈফিত চাওয়া হবে।

ক্ষমতায় এলে পুলিশকে দিয়ে পায়ের জুতো চাটাবেন, এই হুঁশিয়ারিহামেশাই দিয়ে থাকেন রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি পূর্ব বর্ধমানের কালনা থানায় ডেপুটেশন দিতে গিয়ে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘বিজেপি কর্মী রবিন পালকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের পুলিশ দু’দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার না করলে থানা জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।’ পাশাপাশি রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলছ’মাস পরে বিকাশ দুবে হয়ে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।  বিজেপি নেতার এমন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন শাসক দল।

এ রাজ্যে সন্ত্রাসের আবহাওয়া সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন বিজেপি নেতারা। তাদের অভিযোগকে একশোভাগ সত্যি মানতে অসুবিধা হয়না। কারন যে রাজ্যে প্রকাশ্য জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীকে অশালীন মন্ত্যব্য করা যায়, যে রাজ্যে জেলা পুলিশ সুপারকে উদ্দেশ্য করে পুলিশবাহিনিকে হুঁশিয়ারি দেওয়া যায়, থানা জ্বালিয়ে দেওয়া যায় সে রাজ্যের মানুষ যে সত্যি সন্ত্রাসের মধ্যে রয়েছেন তা অস্বীকার করার কোনও কারণ থাকতে পারে না। তবে এই সন্ত্রাস তৈরি হচ্ছে কিভাবে, কারা এই সন্ত্রাস সৃষ্টি করছেন? বিজেপি নেতৃত্ব কি নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তাদের নামগুলি জানাতে পারবেন?

বিজেপির যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ কিংবা রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়তেই হুমকি, হুঁশিয়ারি শেষ হয়ে যাচ্ছে না।তৃণমূল নেত্রীর অনুগামী ভাইদের সবক শেখানোর দাওয়াই দিতে কসুর করেন নি বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সভাপতি অগ্নিমিত্রা পল। গত সোমবার মেমারি শহরে অনুষ্ঠিত দলের সভায় যোগদিয়ে অগ্নিমিত্রা পল সভায় উপস্থিত মহিলাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অস্ত্র ধরতে বলবো না। তবে বাড়িতে আঁশ বটি আছে তো। যদি বাড়িতে ঢুকে আপনাকে কেউ আক্রমণ করতে আসে, ধর্ষণ করতে আসে কিংবা শ্লীলতাহানি করতে আসে তাহলে আপনারা মহিলারা প্রথম সবাই এক হয়ে লড়াই করবেন। আর বাড়িতে থাকা আঁশ বটি দিয়ে দিদির ছোট্ট ছোট্ট ভাইদের পুরুষত্বটা কি করে বের করে দিতে হয় সেটা আপনারা বটি দিয়ে করে দেখিয়ে দেবেন’।

ভোটের আগে রাজনীতির ময়দান গরম করতে প্রকাশ্য জনসভায় পুলিশকে হুমকি দিচ্ছেন, ক্ষমতায় আসার পর থানা জ্বালিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, মানুষকে আঁশ বটি দিয়ে খুন করার উস্কানি দিচ্ছেন যারা, তারাই আবার বলছেন এ রাজ্যে শান্তির পরিবেশ নেই। তবে কি যতক্ষণ থানায় আগুন না ধরাতে পারছেন, আঁশ বটি দিয়ে মানুষ খুন না করছেন ততক্ষণ রাজ্যে শান্তির পরিবেশ ফিরবে না?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 4 =