ভগীরথ ঘোষ: আপনাদের মেদিনীপুরের শিলাদিত্যর কথা মনে আছে, যে সারের দাম কত জিজ্ঞাসা করায় প্রকাশ্য সভায় কোন রকম তদন্ত ছাড়াই মাননীয়া তাকে মাওবাদী ঘোষণা করেন। তাকে জেলে যেতে হয়৷
অম্বিকেশ মহাপাত্রের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যান নি, যিনি মাননীয়ার একটি কার্টুন ছবিকে ফরোয়ার্ড করেছিলেন মাত্র। তিনি খুব সাধারণ মানুষ নন, তিনি যাদবপুরের মতো বিখ্যাত ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপক। .. ব্যাঙ্গচিত্র ফরোয়ার্ড করার অভিযোগে তাকেও জেল খাটতে হয়৷
এই দীর্ঘ তালিকায় আর একটি নাম যুক্ত হল সন্ময় ব্যানার্জী। তিনি একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক, সমাজসেবী, মানবাধিকার কর্মী এবং জাতীয় কংগ্রেস দলের মুখপাত্র। দীর্ঘ ২০ বছর তিনি সাংবাদিকতা করছেন। তিনি চিরদিন বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে এবং স্বৈরাচারী শাষকের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। তাই তিনি শাষকের চোখে শত্রু। পিসি ভাইপোর অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে কলম ধরে আজ তিনি জেলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। শাষকের নির্দেশে থানার লক আপে তাকে একজন সাধারণ কয়েদির মতো পেটানো হয়েছে। সমস্ত রকম মানবাধিকারকে তুচ্ছ করে তাকে খালি গায়ে, স্রেফ পাজামা পরিয়ে, তার নিম্নাংগে পর্যন্ত আঘাত করা হয়েছে। তার অভিযোগ মিথ্যা হতে পারে। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষের প্রশ্ন তোলার গণতান্ত্রিক অধিকার রাষ্ট্র কেড়ে নিতে পারে না। তার উপর তিনি একজন সাংবাদিক৷
আমরা পুলিশের এই অমানবিক অত্যাচারের স্বাক্ষী। আমরা ভুলিনি কল্যাণীর ঘটনা। সে রাতের দুঃস্বপ্ন আজো আমাদের তাড়া করে নিয়ে বেড়ায়। ন্যায্য অধিকার চাইতে গিয়ে আমাদের যে পাঁচ বন্ধু লক আপে ছিল, তাদের গায়ের কালসিটে দাগ এখনো লুকিয়ে যায় নি। কৃষ্ণাদির ছেঁড়া ব্লাউজ আমাদের শিক্ষক মনের গভীর ক্ষত চিহ্ন হয়ে আছে আজো। আমরা ভুলি নি …!
অনেকে প্রশ্ন করেন আমাদের খবর মিডিয়ায় প্রচার করতে। যেন আমরা চাইলেই সেটা পারি। আমাদেরও কিছু যোগাযোগ আছে। চেষ্টা করেছি কিন্তু পারি নি। প্রথম শ্রেণীর চ্যানেল গুলো সবই আজ নির্ভীক সাংবাদিকতা ছেড়ে, সরকারের তাঁবেদারী করে টাকার বিনিময়ে। তাই অতি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা তর্ক করলেও, ৪৮ হাজার বঞ্চিত, সরকারি ঔদাসীন্যে মৃতপ্রায় পার্শ্ব শিক্ষকদের নিয়ে ঘন্টাখানেক আলোচনার তাদের সময় নেই৷
গত বছর ১৯ শে নভেম্বরের ধর্মতলা সমাবেশের কথা মনে আছে? আমাদের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সমাবেশের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করতে উদ্যত হয়। আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। তখন একজন নির্ভীক সাংবাদিক আমাদের স্টেজে উঠে আমাদের কথা বলতে থাকেন, প্রশাসনের ন্যাক্করজনক ভুমিকার কঠোর নিন্দা করেন … আমাদের পক্ষে তিনি বার বার কলম ধরেছেন এমনকি বই লিখছেন তিনি এই সন্ময় ব্যানার্জী৷
পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ সন্ময় ব্যানার্জীর উপর পুলিশি অত্যাচারের কঠোর নিন্দা করছে। বাংলার ৪৮ হাজার পার্শ্ব শিক্ষক সন্ময় ব্যানার্জীর পাশে আছি। অত্যাচারী শাষকের বিরুদ্ধে তার কলম আরো শাণিত হোক, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে তার সংগ্রামের পাশে আমরা থাকব, অঙ্গীকার করছি৷
লেখক পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের অন্যতম নেতা৷ মতামত নিজস্ব৷