ধৃত মাওবাদী অর্ণব ওরফে বিক্রম দামকে বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি দিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে ঝুলে থাকা ২৪টি মামলায় তিনি আগেই জামিন পেয়েছিলেন। বেঞ্চের এদিনের নির্দেশ, ১০ হাজার টাকার পাঁচটি জামিনের বিনিময়ে এই নির্দেশ কার্যকর হবে। তবে একদিন অন্তর তাঁকে সোনারপুর থানার আইসি’র সঙ্গে দেখা করতে হবে এবং ওই থানা এলাকার বাইরে তিনি যেতে পারবেন না।
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে জেলে বন্দি মেধাবী মাও নেতা বিক্রম৷ জেলে বন্দি থেকেও স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট বা সেট পরীক্ষায় বসে সফল হন মাও নেতা বিক্রম ওরফে অর্ণব দাম৷ ৬৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে সেটে উত্তীর্ণ হন তিনি৷ সেটে উত্তীর্ণ হওয়ায় ইতিহাসে অধ্যাপনা করবেন করতে পারবেন তিনি৷ করবেন গবেষণা৷ তাঁর এই সাফল্য খুশি মাও নেতার পরিবার৷ খুশি হওয়া বিক্রমের অনুগামীদের মধ্যেও৷ পরীক্ষায় সাফল্য আসার পর জামিনের খবরে আপ্লুত অর্ণবের পরিবার৷
গত পয়লা ডিসেম্বর সংশোধনাগারে বন্দি হয়ে থেকেই স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট বা সেট পরীক্ষায় বসেন ধৃত মাও নেতা বিক্রম। প্রেসিডেন্সিতে কারাবাস করা ধৃত মাও নেতা বিক্রম ওরফে অর্ণব দাম কলকাতায় ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশন কলেজে পরীক্ষা দেন৷
অর্ণব দাম৷ প্রাক্তন বিচারকের ছেলে এই ধৃত মাও নেতা বিক্রম ২০১২ সালের ১৬ জুলাই পুরুলিয়ার অয্যোধ্যা পাহাড়তলির বলরামপুরের বিরামডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় একে ৪৭–র মতো অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের সুভাষগ্রামের আরএন চক্রবর্তী রোডের বাসিন্দা বিক্রম৷ ১৯৯৮ সাল থেকে নকশাল সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। মেধাবী এই ধৃত মাও নেতা বারাসত প্যারীচরণ সরকার রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন।
তারপর নরেন্দ্র রামকৃষ্ণ মিশনে উচ্চমাধ্যমিক। সেখান থেকে খড়গপুর আইআইটি। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অর্ণব হঠাৎ ১৯৯৮ সালে নিখোঁজ হয়ে যান আইআইটি ক্যাম্পাস থেকে। ২০০৫ সালের জানুয়ারি মাস নাগাদ মাও নাশকতায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে জামিনও পান তিনি। তারপর বাড়িতে দু’মাস থাকার পর আবার নিখোঁজ হয়ে যান। প্রাক্তন বিচারপতির ছেলে হয়ে যান মাও নেতা।
খড়্গপুর আইআইটিতে তিন বছর পড়ার পর মাওবাদী দলে ভিড়ে যান অর্ণব। পুরুলিয়ায় ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ওই দলের হয়ে কাজ করেন। ইতিমধ্যে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শিলদায় ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলসের ছাউনিতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ২৪ জন জওয়ানকে হত্যার ঘটনায় তিনি ও তাঁর গেরিলা বাহিনী অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে ইউএপিএ আইনে অভিযোগ আনা হয়। যে মামলার কারণে তাঁর জামিনের আবেদন বারংবার খারিজ হয়েছে। এদিন প্রায় ৪০ বছর বয়সি অর্ণব দামের তরফে আদালতকে জানানো হয়, ২০১১ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত সেই মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। ৩০ জন সাক্ষীর কেউই তাঁকে টিআই প্যারেডে চিহ্নিত করতে পারেননি।
সিপিআই(মাওবাদী) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য। বিহার-ঝাড়খন্ড-ওড়িশা সীমান্ত আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক। পুরুলিয়া-পূর্ব সিংভূম-সরাইকেলা খরসোঁওয়া সীমানা জোনাল কমিটি ও পুরুলিয়ার অয্যোধ্যা স্কোয়াডের দায়িত্ব নিয়ে মাও ভিতকে মজবুত করেন এই জঙ্গলমহলে। পাতলা, ছিপছিপে, রোগাটে গড়নের বছর ৪০-এর এই ধৃত মাও নেতাকে দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি সিপিআইএমের (মাওবাদী) শীর্ষ নেতা ছিলেন। দলে তিনি ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ হিসাবে পরিচিতি পান। আসলে ছেলেবেলা থেকেই নানা কমিউনিজমের বই পড়তেন তিনি।