কলকাতা: অবশেষে ছুটি পেলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ বেডে শুয়ে ফিরছেন বাড়িতে৷ হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছুটি ঘোষণা করা হলেও বুদ্ধবাবুর বাড়িতেই চলবে চিকিৎসা৷ জানিয়েছে উডল্যান্ড কর্মপক্ষ৷ দীর্ঘ চিকিৎসার পর বিপদ কাটতে না কাটতেই বাড়ি ফিরে যাওয়ার জেদ ধরে বসেন তিনি৷ পরিবারকেও জানিয়ে দেন সে কথা৷ পরে, পরিবারের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন চিকিৎসকরা৷
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রক্ত ও অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তাঁর৷ চিকিৎসা সামগ্রী তাঁকে বাড়িতেই ব্যবস্থা করা হবে৷ অ্যাম্বুলেন্স করে তাঁকে বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ যদিও বুদ্ধবাবু চেয়েছিলেন তাঁকে তাঁর গাড়িতে করেই বাড়িতে নিয়ে দেয়া হোক৷ কিন্তু চিকিৎসকরা সেই অনুমতি না দেওয়ায় পরে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে বাড়িতে পাঠানো হয় তাঁকে৷ বর্তমানে বুদ্ধদেববাবুর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল৷ তবে তাঁর এখনও চিকিৎসার প্রয়োজন বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা৷ বুদ্ধবাবুর ইচ্ছাতেই তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার হচ্ছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর৷
গুরুতর অসুস্থ হয়ে শুক্রবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে৷ রক্তচাপ প্রবল ভাবে কমে যাওয়ায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়৷ হাসপাতালে বুদ্ধদেবের শারীরক অবস্থার খোঁজ খবর দিয়ে রাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগের থেকে কিছুটা ভাল আছেন তিনি৷
শুক্রবার সন্ধ্যায় উডল্যান্ড নার্সিং হোমে তাঁকে ভর্তি করা হয়৷ প্রবল কষ্ট নিয়ে ওই দিন সন্ধ্যা আটটা নাগাদ তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়৷ বুদ্ধদেবের রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে গেলেও আপাতত স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে হাসপাতালে যান ফুয়াদ হালিম৷ বুদ্ধদেবের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল দলে রয়েছেন ফুয়াদ৷
জানা গিয়েছে, ওই দিন সন্ধ্যায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বুদ্ধবাবু৷ তাঁকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ রক্তচাপ স্বাভাবিকের থেকে অনেকেটাই মেনে যাওয়ায় সমস্যা তীব্র আকার নেয়৷ সঙ্গে তীব্র শ্বাসকষ্ট বিপত্তি আরও বাড়িয়ে তোলে৷ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় তাঁর চিকিৎসা৷
বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ ফুসফুসে গুরুতর সংক্রমণ রয়েছে তাঁর৷ গুরুতরভাবে অসুস্থ থাকার কারণে লোকসভা নির্বাচনের আগে বামেদের ডাকা ব্রিগেড সমাবেশে অংশ নিতে পারেননি তিনি৷ তবে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন ব্রিগেডের মাঠে৷ দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে কার্যত অবসর নিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ সম্প্রতি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল৷ সেখানে দু’জনের বেশ খানিকক্ষণ কথা হয়৷ গত মাস খানেক ধরে বুদ্ধবাবুর শারীরিক অবস্থার বেশ খানিকটা অবনতি ঘটে৷ পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে তাঁর চিকিৎসা চলছিল৷ দীর্ঘ দিন ধরে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিসে ভুগছেন তিনি৷ পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায়, তাঁর নাকে অক্সিজেন নল বসিয়ে রাখা হয়৷ কিন্তু, এদিন সন্ধ্যায় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তাঁকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়৷
এমনিতেই হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা চালাতে তাঁর অনীহা ছিল৷ চাইতেন না তাঁকে ঘিরে ভিড় জমুক৷ নিজের দু’কামরার ফ্ল্যাটেই রয়েছে তাঁর গোটা দুনিয়া৷ সঙ্গী বই৷ লেখা, খবর শোনা৷ দৃষ্টিশক্তি কমে গেলেও পার্টি কর্মীরা এসেই বই, সংবাদপত্র পড়ে তাঁকে শোনাতেন৷ খোঁজ নিতেন দলেরও৷ শোনা যায়, দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁর পরামর্শ নেওয়া হত৷ লোকসভা নির্বাচনের আগেও দলীয় মুখপত্রে কলম ধরে মোদি-মমতাকে তীব্র সমালোচনা করেন বুদ্ধবাবু৷