দুর্গাপুর: তাঁর দল ভাঙানোর কৌশল নিয়ে আগেই উঠেছিল প্রশ্ন৷ পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধায়ক ভাঙিয়ে আনার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটেছে ‘ঘর ওয়াপসি’৷ ফলে, দলের অন্তরে ক্রমাগত চাপে পড়ছিলেন মুকুল রায়৷ এবার প্রকাশ্যেই দল ভাঙানোর কৌশল নিয়ে ভুল হয়েছিল বলে মেনে নিলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়৷
চিন্তন বৈঠক শেষে তৃণমূল বিধায়ক মণিরুল ইসলামকে দলে যোগদান করানোর প্রসঙ্গে তুলে মুকুল রায় রাগঢাক না করেই জানিয়ে দেন, ‘‘আমি কাউকে আঘাত করতে চাইনি৷ মণিরুল ইসলামকে দলে আনা আমার ভুল হয়েছিল৷ ভবিষ্যতে সতর্ক থাকব৷’’
মুকুল রায়ের হাত ধরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ৫ দিনের মাথায় দল ছাড়তে চেয়ে চিঠি দেন মণিরুল ইসলাম৷ দল ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে চিঠি পাঠান মণিরুল৷ চিঠির প্রাপ্তি স্বীকারও করেন মুকুল৷ ঢোকঠোল পিঠিয়ে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরপরই বিজেপি ছাড়তে চেয়ে মণিরুল জানান, তিনি দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার৷ তাঁকে কেউ মেনে নিচ্ছে না৷
একের পর দলবদল ও পরে ‘ঘর ওয়াপসি’র পর দলে বেনোজল আটকাতে ইতিমধ্যেই মুকুল রায়ের ডানা ছাঁটেছে সংঘ৷ মুকুল রায়ের হাত ধরে প্রতিদিন তৃণমূল ও বামেদের থেকে ঝাঁকেঝাঁকে নেতা, নেত্রীরা এসে বিজেপিতে যোগদান করছিলেন৷ দলের রাজ্য নেতৃত্বকে এড়িয়ে মুকুল রায় তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে যোগদান করাচ্ছেন বলে অভিযোগ৷ পরে আবার তাঁরা ফিরছেন পুরানো দলে৷ আর তার জেরেই ক্ষুব্ধ সংঘ পরিবার৷ এই ধরনের প্রবণতা কমাতেই মুকুল রায়ের ডানা ছাঁটার সিদ্ধান্ত গেরুয়া শিবিরের৷
লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বিজেপিতে যোগদানের পরেই বেনোজল আটকাতে মরিয়া হয়ে ওঠে সংঘ পরিবার৷ সংঘের প্রবল আপত্তি রয়েছে বন্দরের কংগ্রেস নেতা রাকেশ সিংয়ের যোগদানে৷ এমনকি তৃণমূলের প্রাক্তন ছাত্রনেতা শঙ্কুদেব পাণ্ডা বিজেপিতে যোগদান নিয়েও কেশব ভবনের তীব্র আপত্তি রয়েছে৷ সংঘের কর্তারা মনে করছেন, মুকুলের ডানা ছাটা না হলে আগামী দিনে বিজেপি আদর্শ চ্যুত হবে৷ এর পরেই মুকুলের হাত ধরে বেনোজল আটকাতে সংঘ পরিবার রাজ্য বিজেপিকে পরামর্শ দেন৷ সংঘের পরামর্শ মেনে তারপরেই রাজ্য বিজেপির সংগঠন সম্পাদক জানিয়েদেন, ‘‘আর দিল্লিতে গিয়ে যোগদান হবে না৷’’
দলে আসতে হলে আগে রাজ্য কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে৷ রাজ্য নেতা হলে রাজ্য কমিটিতে আবেদন৷ আর জেলার নেতা হলে জেলা কমিটিতে আবেদন করতে হবে বলে ফরমান জারি করেন সুব্রত চট্টোপাধ্যায়৷ তারপর রাজ্য নেতৃত্বর নির্দেশ মেনেই এবার থেকে দলে আসতে পারবেন নব্যরা৷ বিজেপিতে সংগঠন সম্পাদকের পদ সংঘের৷ কেশব ভবনের প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্য বিজেপির এই পদে আসীন হয়েছেন সুব্রত চট্টোপাধ্যায়৷ তাই তার এই নতুন নির্দেশে এবার রাজ্য বিজেপিতে মুকুলের হাত ধরে প্রস্থান অনেকটাই কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিজেপির একাংশ৷
তাছাড়া বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজেও সংঘের ঘনিষ্ঠ৷ দলের ৪ সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু, দেবশ্রী চৌধুরী, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় সংঘের ঘনিষ্ঠ৷ রাজ্য কমিটিতে এবার থেকে মুকুলের হাত ধরে আসতে গেলে সংঘের প্রবল বাঁধায় পরতে হবে৷ তার কারণ দলের রাজ্য কমিটিতে এখনও সেভাবে মুকুল রায়ের কোন অনুগামী নেই৷ সেই কারণে রাকেশ সিং, শঙ্কুদেব পাণ্ডা ও মনিরুল ইসলামের মতো বিতর্কিত নেতাদের বিনা বাধায় বিজেপিতে আসার দিন প্রায় শেষ হতে চলেছে৷
মুকুলের হাত ধরে নব্যদের দলে ঢোকা ঠেকাতে বিশেষ স্ক্রুটিনি কমিটি তৈরি করল রাজ্য বিজেপি। দলের চিন্তন বৈঠকে নতুন স্ক্রুটিনি কমিটি গঠন হয়েছে বলে জানান বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি জানান, দলে নব্যদের নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। তা আটকাতে বিজেপি বদ্ধপরিকর বলে জানান দিলীপ ঘোষ।