ইংরেজবাজার: নিজের অজান্তে বাংলাদেশ সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নাগরিকত্ব ইস্যুতে কেন্দ্রকে আক্রমণ করতে গিয়ে অজান্তেই বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন তিনি! মালদহের কালিয়াগঞ্জ সবার থেকে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘বাংলাদেশ থেকে এসেছে, সবাই নাগরিক, নাগরিকত্ব পেয়েছে৷ নতুন করে কী দেওয়ার আছে?’’ যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের অংশ তৃণমূল কংগ্রেসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের লাইভ অনুষ্ঠানে ভিডিওতে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু কেন ওই অংশ বাদ দেওয়া হল? তা অবশ্য জানা যায়নি৷
এদিন উদ্বাস্তুদের বিষয়ে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উদ্বাস্তুদের কেউ নাগরিকত্ব কাড়তে পারবে না৷ নাগরিকত্ব নতুন করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই৷ আপনারা সবাই এই দেশের নাগরিক৷ বিজেপির মিথ্যে কথাই কেউ ভুলবেন না৷ আপনার ছেলে মেয়েরা এখানে পড়াশোনা করে৷ তাইতো আপনি বাজারে যান৷ আপনি হাসপাতালে যান৷ আপনার একটা সাইকেল আছে৷ আপনার একটা বাড়ির ঠিকানা আছে৷ আপনি ভোট দেন৷ আপনার ভোটার কার্ড আছে৷ আপনার রেশন কার্ড আছে৷ বাচ্চা জন্মালে, বাচ্চার সার্টিফিকেটে বয়স লেখাতে হলে একটা একটা ভোটার কার্ড দেখাবেন, হয়ে যাবে৷ আমাদের তো কত কি আছে৷ ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে৷ ভোটার কার্ড আছে৷ বাড়ির ঠিকানা আছে৷ কেউ কাজ করে৷ তার ঠিকানা আছে৷ কারোর জমিতে চাষ করে, ঠিকানা আছে৷ এর জন্য নতুন করে বিজেপির ওই কার্ডের প্রয়োজন নেই৷’’
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেখলেন তো, যারা যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে সবাই নাগরিক, নাগরিকত্ব পেয়েছে৷ নতুন করে দেওয়ার কী আছে? নাগরিক মানে তো জনগণ৷ ভোট দেন সবাই? সবাই ভোট দিয়েছেন? ভোট দেন সবাই? কী মা-বোনেরা? মা-ভাই-বোনেরা? যাদের ভোটার কার্ড আছে, যাঁরা ভোট দেন৷ ভোট দেন তো? আপনারা ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করবেন৷ বিধানসভার নির্বাচিত করবেন৷ জেলা পরিষদ নির্বাচিত করবেন৷ আর বলবে, আপনি নাগরিক নন৷ এটা বিশ্বাস করবেন না৷ একদম বিশ্বাস করবেন না৷ আপনারা সবাই নাগরিক৷ আপনারা এই দেশে বোনাফাইট নাগরিক৷ বাংলা থেকে একটা মানুষকে আমরা তাড়াতে দেব না৷ বাংলাতে একটাও মানুষকে আমরা তাড়াতে দেব না৷ এটা মাথায় রাখবেন৷’’
অন্যান্য সভার মতো এদিনও মুখ্যমন্ত্রীর সভা ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচারিত হয়েছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের প্রোফাইলেও সেই লাইভ সম্প্রচার হয়৷ একইসঙ্গে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লাইক সম্প্রচারিত হয় মুখ্যমন্ত্রীর সভা৷ ৩৭ মিনিট এক সেকেন্ডের নাতিদীর্ঘ ভাষণ দেন তিনি৷ (Public distribution programme in Uttar Dinajpur district | উত্তর দিনাজপুর জেলায় পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে #3) শীর্ষক মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের ৩৭ মিনিট ১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুক লাইভ সম্প্রচার হয়৷ কিন্তু গোটা ভিডিওটিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাংলাদেশ সংক্রান্ত ভাষণের অংশ লাইভ সম্প্রচারিত হওয়ার সময় কোথাও প্রযুক্তিগত সমস্যা দেয়! ‘বিতর্কিত’ অংশের ভিডিওটিতে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় আসার একটি ফুটেজ কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখানো হয়৷
মুখ্যমন্ত্রী যখন বলছেন, ‘‘বাচ্চা জন্মালে হাসপাতলে বাচ্চার সার্টিফিকেটের বয়স লেখাতে হলে…’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই ভাষণটি যখন ভিডিওতে ১১ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড সম্প্রচারিত হচ্ছিল, তখনই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় আসার একটি ছবি ভিডিও প্রকাশ করা হয়৷ ওই সময় তিনি বাংলাদেশ সংক্রান্ত একটি মন্তব্য করেন৷ যা লাইভ সম্প্রচারে দেখানো হয়নি৷ ভিডিওটির ১২ মিনিট ২ সেকেন্ড থেকে ফের মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ শোনা যায়৷ সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘‘জমিতে চাষ করে আছেন৷ এর জন্য নতুন করে বিজেপি ওই কার্ড এর প্রয়োজন নেই…’’৷ ফের গোটা ভিডিওটির ১২ মিনিট ১১ সেকেন্ড থেকে ১২ মিনিট ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত অন্য একটি ভিডিও দেখানো হয় লাইভ সম্প্রচারের মধ্যে৷ এরপর ১২ মিনিট ২০ সেকেন্ড পর থেকে ফের মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ শুরু হয়৷ ফের কয়েক সেকেন্ড পর ১২ মিনিট ২৯ সেকেন্ড থেকে ফের লাইভ সম্প্রচারের মধ্যেই অন্য একটি ভিডিও সম্প্রচারিত করা হয়৷ ১২ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের পর থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে দেখানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের লাইভ সম্প্রচার৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন হঠাৎ করে ওই সময় লাইভ সম্প্রচার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ রেখে অন্য কোন ভিডিও প্রকাশ করা হল? প্রশ্ন তুলছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷