বিপুল বাহিনীতেও ভোটে অশান্তি হচ্ছে! কী করা উচিত কমিশনের?

নিজস্ব প্রতিনিধি:  পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোট যে নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে হবে সেটা বহু আগেই জানিয়ে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হওয়ার কথা…

কেন্দ্রীয় বাহিনী

নিজস্ব প্রতিনিধি:  পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোট যে নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে হবে সেটা বহু আগেই জানিয়ে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হওয়ার কথা কমিশন প্রথমে বললেও বাহিনীর সংখ্যা আরও বাড়ছে বলেই খবর।

তা সত্ত্বেও গত দুটি দফার নির্বাচনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি হয়েছে। তাতে রক্তও ঝরেছে। বেশ কিছু জায়গায় ভোটাররা বুথে যেতে ভয় পেয়েছেন। তাঁদের বাধা দেওয়া হয়েছে। মন্তেশ্বরের একটি গ্রামের ৩০০ পরিবারকে ভোট দিতে দুষ্কৃতীরা বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের একটি গ্রামে ভোটাররা আতঙ্কে ভোট দিতে যেতে পারছিলেন না।

এরপর সিপিএম প্রার্থী এম সাদির নেতৃত্বে তাঁরা ভোটকেন্দ্রে যেতে পেরেছিলেন। এমন আরও অভিযোগ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে এসেছে। তাই পুরোপুরি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন চতুর্থ ও পঞ্চম দফায় হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ষষ্ঠ ও সপ্তম দফার নির্বাচনে নিশ্চিন্তভাবে বুথে এসে যাতে সবাই ভোট দিতে পারেন সেই লক্ষ্যে কমিশনের বিশেষ পদক্ষেপ করা দরকার বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে। সেক্ষেত্রে শুধু বুথ দখল বন্ধ করলেই হবে না। কমিশনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল ভোটারদের নির্বিঘ্নে বুথে নিয়ে আসা। সেটা করতে পারলেই ষোলো কলা পূর্ণ হবে।

ঘটনা হল গত কয়েকটি লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে কেউই বলতে পারবেন না যে একের পর এক বুথ দখল হয়ে গিয়েছে। কারণ প্রত্যেকটি বুথ কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় মোড়া ছিল। কিন্তু প্রশ্নটা হল ভোটারদের একাংশ যদি বুথেই আসতে না পারেন তাহলে ভোটটা দেবেন কী করে? বিরোধীদের অভিযোগ বহু জায়গায় শাসকদলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা গ্রামে গ্রামে ঢুকে ভোটারদের ভয় দেখিয়ে, ভোটার কার্ড কেড়ে নিয়ে তাঁদের ঘর থেকেই বেরোতে দেয় না।

যে অভিযোগ প্রবল ভাবে উঠেছে সন্দেশখালিতে। গত কয়েকটি নির্বাচনে সেখানকার বহু মানুষ ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। যদিও তৃণমূল এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাই ভোটারদের নির্বিঘ্নে বুথে নিয়ে যাওয়াটাই যে কমিশনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সেটা স্পষ্ট। তার পাশাপাশি রয়েছে বুথ জুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।

শাসক বিরোধী নির্বিশেষে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল ও নির্দল প্রার্থীদের এজেন্টদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। তবেই পুরো নির্বাচন পর্ব সুষ্ঠুভাবে করানো সম্ভব হবে। অর্থাৎ শুধু বুথে নিরাপত্তা বাড়ালেই হবে না, গ্রামের ভিতরে ভিতরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের রুট মার্চ করিয়ে, এরিয়া ডমিনেশন করিয়ে, ভোটারদের মনে আস্থা জাগানোর চেষ্টা করতে হবে কমিশনকে। রাজ্য জুড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের যাতে নিখুঁতভাবে ব্যবহার করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে কমিশনকে। বহু ক্ষেত্রে অভিযোগ ওঠে বাহিনী নাকি এক জায়গায় বসে আছে।

তাতে ৯২০ কোম্পানি কেন, ১০ হাজার কোম্পানি বাহিনী আসলেও কাজের কাজ কিছু হবে না। তাই সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়ে কমিশন বাকি দুটি পর্বের নির্বাচন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট কৌতুহল রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। পঞ্চম দফার নির্বাচনে হাওড়ার একটি আবাসনে দুষ্কৃতীরা তালা দিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। দীর্ঘ সময় পর কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে তালা খোলায় সেখানকার বাসিন্দারা ভোট দিতে পারেন।

ভোটে এভাবে বাধা দেওয়ার অভিযোগ একাধিক লোকসভা কেন্দ্র থেকে পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু জায়গায় বুথ থেকে বিরোধী দলের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। অর্থাৎ প্রচুর বাহিনী থাকলেই যে শেষ দুটি দফার নির্বাচন সম্পূর্ণ অশান্তি মুক্ত হবে, তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। তাই গত পাঁচ দফা থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কোনও বড় পদক্ষেপ করে কিনা এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *