নিজস্ব প্রতিনিধি: ডিএ ইস্যুতে রাজ্য সরকার যে কতটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে সেটা প্রতিদিনই টের পাওয়া যাচ্ছে। রাস্তায় নেমে নিয়মিত আন্দোলনে ঝড় তুলছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। একই ভাবে বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে তাঁরা সুর চড়াচ্ছেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। অথচ একটা সময়ে রাজ্য সরকারি কর্মীরা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পেতেন। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সামনে বিভিন্ন ইস্যুতে আসা প্রশ্ন নিয়ে কিছু বলতে চাইতেন না। সকলের মুখে একটা কথাই শোনা যেত, এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যা বলার বলবেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই যেন হঠাৎ ভয়ডরহীন হয়ে গিয়েছেন।
আগে দেখা গিয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মীদের সংগঠনগুলির তরফ থেকে শুধুমাত্র নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া দিতেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সরকারি কর্মীরা ডিএ ইস্যুতে রাজ্য সরকার, এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেও নজিরবিহীন আক্রমণ শানাচ্ছেন। একেক জন যে ভাষায় বা ভঙ্গিতে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করছেন তা কয়েক মাস আগেও দেখা যায়নি। আমলা মহল মনে করে এভাবে সরকারি কর্মীরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেন না। পঞ্চায়েত নির্বাচনের কাজ বয়কট করা হবে, এমন কথা বলার অধিকার রাজ্য সরকারি কর্মীদের নেই। এমনটাই বলছে আমলা মহল। নিয়ম ভাঙলে সরকারি কর্মীদের শো-কজ করার ব্যবস্থাও আছে। দীর্ঘদিন ধরে এমনটাই চলে আসছিল। তাই অনেকেই ‘ব্ল্যাকলিস্টেড’ হওয়ার ভয় পেতেন। সরকার ঠিক কাজ করছে না এটা বুঝতে পেরেও রীতি অনুযায়ী নীরব থাকতেন সরকারি কর্মীরা। বাম বা তৃণমূল আমল, সবসময় এটাই কিন্তু দেখা গিয়েছে। তবে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সেই ছবিটা এবার বদলাতে শুরু করেছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
গত বছর ডিএ ইস্যুতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মী এবং অবসরপ্রাপ্তদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও আটকে রাখা যাচ্ছে না সরকারি কর্মীদের। প্রকাশ্যে তাঁরা ঘোষণা করে ‘পেন ডাউন’ করছেন। বিধানসভায় বাজেট পেশ করতে গিয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করার পর সেটিকে রীতিমতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে ‘ভিক্ষার দান’ বলছেন সরকারি কর্মীদের একটা বড় অংশ। এছাড়া কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে ধর্মতলায় রিলে অনশন করছেন সরকারি কর্মীরা। উল্লেখ্য আগেও ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীরা বহু আন্দোলন করেছেন। কিন্তু এখন আন্দোলনে যে ঝাঁজ দেখা যাচ্ছে তা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। তাই এটা বলতেই হচ্ছে কোনও এক অদৃশ্য জাদুদণ্ডের ছোঁয়ায় রাজ্য সরকারি কর্মীদের একটা বড় অংশ হঠাৎই রাতারাতি বেশি সাহসী হয়ে উঠেছেন। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে তৃণমূল সরকারকে। এই ধারায় আন্দোলন যদি চলতেই থাকে তবে তা তৃণমূলের পক্ষে একেবারেই যে ভাল বিজ্ঞাপন নয়, সেটা সকলেই বোঝেন। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকারি কর্মীদের আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বাড়ে কিনা, তাঁরা আরও বড় কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন কিনা এখন সেটাই দেখার।