কলকাতা: দীর্ঘ জটিলতার পর অবশেষে মিলল রাহুল গান্ধীর সভার অনুমতি৷ নির্বাচন কমিশনের অভিযোগ জানানো পর মৌখিক ভাবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে সভার জন্য কমিশনের তরফে অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে খবর৷ ফলে, আগামী ২৩ মার্চ মালদহে রাহুলের সভা ঘিরে আরও কোনও জটিলতা আপাতত রইল না৷ মাইক বাজিয়েই সভা হতে পারে বলেই কমিশন সূত্রে খবর৷
অভিযোগ, রাহুল গান্ধীর সভার জন্য মালদহ চাঁচল বাসস্ট্যান্ডের কাছে সভা করার অনুমতি চাওয়া হলেও অনুমোদন দেয়নি জেলা প্রশাসন৷ রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, পরীক্ষার কারণে এই মুহূর্তে মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ৷ আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত বিধিনিষেধ রয়েছে৷ ফলে, জেলা প্রশাসনের তরফে কংগ্রেসের আর্জি খারিজ করে দেওয়া হয়৷ জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতৃত্ব৷ সিদ্ধান্ত হয়েছে, সভার প্রয়োজনিয় অনুমতি পেতে কলকাতা হাইকোর্টে আজই মামলা ঠুকতে পারে প্রদেশ নেতৃত্ব৷ আদালতে যাওয়ার আগে এদিন কমিশনে দ্বারস্থ হন কংগ্রেস নেতৃত্ব৷ জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল৷ পরে, সভাস্থলের পরিস্থিতি জেনে সভা করার মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয় কমিশনের তরফে৷
কিন্তু, সভার অনুমতি নিয়ে কেন এত অপত্তি ওঠে? পর্যবেক্ষক মহলের ধারনা, ভোটের বাজারে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মাইক্রোফোন ও লাউড স্পিকার ব্যবহার প্রসঙ্গে রাজ্যের জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তি ফ্যাসাদে ফেলছে প্রচারমুখী দলগুলিকে। কারণ, ওই বিজ্ঞপ্তির কারণেই বহুজন মুক্তি পার্টির মালদহ জেলা কমিটির মাইক বাজিয়ে সভা করার আবেদন ১৩ মার্চ নাকচ করেছে মালদহ সদরের সাব-ডিভিশনাল অফিসার৷ এই অবস্থায় সংগঠনটির ১৭ মার্চ হতে চলা সভাকে ঘিরে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়৷ একই এবার রাহুল গান্ধীর সভা ঘিরেও দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশ৷ পরে, কমিশনের হস্তক্ষেপে তা কাটে গিয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রে খবর৷
কী রয়েছে ২০১৩ সালের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে? বিজ্ঞপ্তিটির উল্লেখ করা হয়েছে, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বা অন্য কোনও বোর্ড ও কাউন্সিলের পরীক্ষার সময় মাইক বাজিয়ে সভা করা যাবে না৷ পাশাপাশি হাইকোর্টে ২০১১ সালের একটি মামলার রায়ে দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ দার্জিলিং ছাড়া উত্তরবঙ্গের অন্যত্র খোলা জায়গায় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের মাইক বাজিয়ে সভা করার পক্ষে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছিল। সেখানে আদালত যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, সেগুলি কার্যকর রেখে এবারও অনুমতি দেওয়া উচিত বলে সওয়াল করা হয়। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে মামলাকারীদের মাইক ছাড়া সভা করতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়৷ তবে, এই রায়টিকে ভবিষ্যতে দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না বলেও জানানো হয়৷ এমনকী ওই রায় শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গের বিশেষ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া হয়েছিল৷ ওই বিজ্ঞপ্তির বৈধতাও কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি৷ কিন্তু, ওই বিজ্ঞপ্তির বলেই সভার অনুমতি ঘিরে জারি হয় জটিলতা৷
মালদহে রাহুল গান্ধীর প্রস্তাবিত ১৫ মার্চের সভা পিছিয়ে আগামী ২৩ মার্চ নির্ধারিত হয়েছে৷ কংগ্রেসের তরফে সভার জন্য প্রাথমিক ভাবে মালদহ চাঁচল বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি মাঠকে চিহ্নিত করা হয়৷ মলদহ জেলা কংগ্রেস জানিয়েছে, রাহুলজির সভার জন্য প্রাথমিকভাবে সামসি কলেজের মাঠের কথা ভাবা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই সভার বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন দক্ষিণ মালদহের সংসদ সদস্য আবু হাসেম খান চৌধুরি (ডালু)। জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, মালদহের জনসভা দিয়েই রাহুল গান্ধী পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করবেন৷
টকংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, হেলিকপ্টারে করে মালদহে এসে পৌঁছাবেন রাহুল গান্ধী। তাঁর সঙ্গে রাজ্য কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র এবং প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরি ছাড়াও দীপা দাশমুন্সি সহ বেশ কয়েকজন কংগ্রেস বিধায়ক থাকবেন।