কলকাতা: রাজ্য সরকারের আয়োজিত দুর্গা কার্নিভাল ঘিরে এবার বিস্ফোরক দাবি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের৷ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে অপমান করার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন৷ অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁকে অপমান করা হয়েছে বলে সরাসরি তুললেন অভিযোগ৷ এবার সেই ‘অপমানিত’ রাজ্যপালের পাশে দাঁড়িয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷
মঙ্গলবার দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রতি রাজ্যপালের অভিযোগ সঠিক৷ পুজোর কার্নিভালে রাজ্যপালকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পৃথক মঞ্চে বসিয়ে রেখেছিল রাজ্য সরকার৷ রাজ্যপালের সঙ্গে এমন ব্যাবহার একদম ঠিক নয়৷ রাজ্য সরকার সবসময় অসুহিষ্ণতার অভিযোগ তুলে আমাদের আক্রমণ করে৷ এবার খোদ রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের থেকে রাজ্যের প্রতি অসৌজন্যতার অভিযোগ মেনে নেওয়া যায় না৷ রেড রোডে পাঠশালার নাম করে একজন সার্কাস চলছে৷ সেই সার্কাস নিয়ে এবার রাজ্যপালও সরব হয়েছেন৷
মঙ্গলবার রাজ্যপাল জানান, আমাকে ডেকে এনে অপমান করা হয়েছে৷ প্রায় ৪ ঘণ্টা আমাকে ব্ল্যাক আউট করে রাখা হয়েছিল৷ দুর্গা কার্নিভালে গিয়ে আমি কিছুই দেখতে পারেননি৷ যেখানে আমাকে বসতে দেওয়া হয়েছিল, সেখানে জনতার ভিড় ছিল৷ ১১ অক্টোবরের ঘটনায় আমি মর্মাহত৷’’ এইটা জরুরি অবস্থার শামিল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷ কেন রাজ্যের প্রথম নাগরিককে পৃথক মঞ্চে বসানো হল? এরকম প্রশ্ন তুলে রাজ্যপাল৷
রাজ্যপাল কী বোঝাতে চাইছেন আমরা বুঝতে পারছি না৷ রাজ্যপালের কাছে এমন তথ্য শোভা পায় না৷ এই রাজ্যপাল প্রচার চান৷ তা পাননি বলে এমন মন্তব্য করে থাকতে পারেন তিনি৷ রাজ্যপালের জন্য নির্দিষ্ট মঞ্চ রাখা ছিল জানিয়েছেন বলে মন্তব্য তৃণমূলের পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায়ের৷
West Bengal Governor: This bad taste in my mouth has been created by people who perhaps do not have the mindset and the large heart that people of West Bengal have. Insult was not to me, insult was to the culture of West Bengal. It was an insult to every person of the state. https://t.co/AtDf3uATAg
— ANI (@ANI) October 15, 2019
দুর্গা কার্নিভালের আয়োজন করেছিল রাজ্য সরকার৷ সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েও ‘ব্রাত’ ছিলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান৷ রাজ্য সরকারের বিশ্ববাংলা পুরস্কারজয়ী দুর্গা পুজো কমিটির প্রতিমা নিয়ে কার্নিভালের চতুর্থ বর্ষে পা দিয়েছে৷ আর এই বছরই প্রথম রাজ্যপালের পদার্পণ ঘটেছে৷ অনুষ্ঠানে এবার পুজোয় কার্নিভালে সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল৷ মুখ্যমন্ত্রীর বন্দোপাধ্যায়ের ফোন করে তাঁকে অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বলে রাজভবন সূত্রে খবর৷ রাজ্যপাল সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে কার্নিভালে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ কিন্তু অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে যে আচরণের অভিযোগ উঠেছে তা সংবিধানের প্রতি অবমাননা বলে রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ৷
গত শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে রেড রোডের উপস্থিত হন রাজ্যপাল৷ তার কিছুক্ষণ আগেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ গাড়ি থেকে নেমে মূলমঞ্চে আসার পর এগিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী৷ দু’জনের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়৷ কিন্তু এরপর যা ঘটে তা দেখে বিস্মিত পর্যবেক্ষক মহল৷ অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে স্থান হয়নি রাজ্যপালের৷ তাঁকে দেখা গিয়েছিল মূলমঞ্চের থেকে বেশ কিছুটা দূরে তৈরি ছোট একটি আলাদা মঞ্চে৷ অথচ মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে রাজ্যের অন্য মন্ত্রী, তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতাদের পাশাপাশি ভিড় করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও বিশিষ্ঠজনেরা৷ স্বাভাবিকভাবেই সেখানে মধ্যমনি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রচারে সম্পন্ন ছিল তাঁকে ঘিরে৷ কিন্তু রাজ্যপালের মূল মঞ্চ থেকে একেবারে ‘ব্রাত্য’ করে রাখার ঘটনা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷ আর এই নিয়ে এবার মুখ খুললেন রাজ্যপাল৷