নয়াদিল্লি: একদিকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার শাসকদল তৃণমূল, অন্যদিকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে গৃহযুদ্ধের আগুন বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে৷ দলের অন্দরে খোদ রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে উঠেছে ‘একনায়কতন্ত্রে’র অভিযোগ৷ বাংলা ভোটের আগে দলের অন্দরে ‘গৃহযুদ্ধ’ সামাল দিতে দিলীপ ঘোষকে নিয়ে আজ সন্ধ্যায় বৈঠকে বসছেন জেপি নাড্ডা৷ বৈঠকে অংশ নেওয়ার আগে দলের বিক্ষুদ্ধদের বিরুদ্ধে দিলীপ ঘোষের হুঁশিয়ারি, ‘সবার জন্য দরজা খোলা আছে৷’
বিজেপির অন্দরে তৈরি হওয়া নেতৃত্ব বিতর্ক নিয়ে রাজধানী থেকে মুখ খোলেন দিলীপ ঘোষ৷ বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ সব সময় ফ্রন্ট ফুটে খেলে৷ কাউকে পরোয়া করে না৷ কারোর দয়ায় রাজনীতি করে না৷ আমি গতবার রাষ্ট্রীয় সভাপতির কাছে সময় চেয়েছিলাম দেখা করার জন্য৷ বাংলার কিছু সমস্যা নিয়ে৷ সামনে বিধানসভা নির্বাচন৷ আলোচনা করার আছে৷ সভাপতি আমাকে ফোনে বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করতে৷ আমি আজ এসেছি৷ আজ সন্ধ্যায় বৈঠক আছে৷’’
মুকুল প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘মুকুলদাকে সার্টিফিকেট দেয়ার আমি কেউ নই৷ মুকুলদা বিজেপিতে আছেন৷ এইটুকু আমি জানি৷ উনি বলেছেন, বিজেপিতে আছেন৷’’ অভিযোগ উঠছে, দিলীপ ঘোষ নিজের ইচ্ছেমতো দল পরিচালনা করছেন৷ একাধিপত্য বিস্তার করছেন৷ সবাইকে নিয়ে কাজ করছেন না৷ এই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষের জবাব, ‘‘লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত আমি ৪ বছর সভাপতিত্ব ছিলাম৷ তখন কিন্তু অভিযোগ আসেনি৷ আর আমরা জিতেছি৷ আর আমরা জিতে না পারতাম, তাহলে আমাকে পুনর্নির্বাচন করা হত৷ কীভাবে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হল? যদি কেউ বলে থাকেন, তাহলে তাঁদের নিজেদের স্বার্থ আছে৷ আমি কারও স্বার্থহানি করিনি৷ কাজে বাধা দিইনি৷ সবাইকে সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করেছে৷ হতে পারে আমার কিছু ভুল হয়েছে৷ কিন্তু যারা এই সমস্ত বলছে তাঁদের আমি বলব, একবার তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে দেখুন৷’’
বহু নেতাকে বাদ দিয়ে দিলীপ ঘোষ নিজের মতো দল তৈরি করছেন৷ এমন অভিযোগও উঠেছে৷ সেই প্রসঙ্গে দিলীপের মন্তব্য, ‘‘আমি কাদের তাড়িয়ে দিয়েছি, তাদের লিস্ট দিয়ে দেব৷ কোন পার্টি থেকে কতজন এসেছে, কাকে কী কাজ দেওয়া হয়েছে, তার তালিকা আমার কাছে আছে৷ কেউ যদি কাজের যোগ্য না হয় পার্টি তাঁকে সামনে রাখবে না৷ যে যোগ্যতাকেই সামনে আনা হবে৷ অন্য দল থেকে যারা এসেছে, তাঁদেরকে টিকিট দিয়েছি৷ এমপি, এমএলএ বানিয়েছি৷ আমরা হিম্মত আছে৷ তাঁদের দায়িত্ব দিয়েছি৷ আর যারা এই সমস্ত কথা বলছেন, তা কাজ করতে জানেন না কিংবা কাজ করতে চান না৷ প্রত্যেকের জন্য দরজা খোলা আছে৷’’
দিলীপ ঘোষের নেতৃত্ব নিয়ে ইতিমধ্যেই দলের অন্দরে শুরু হয়েছে বিদ্রোহ৷ সরাসরি দিলীপ বনাম বিক্ষুব্ধদের পরস্পর বিরোধী দুটি গোষ্ঠীর তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর৷ দিল্লির উপর মহলে ইতিমধ্যেই একে অপরের বিরুদ্ধে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে এসেছে৷ কিন্তু নির্বাচনের আগে বঙ্গ বিজেপি-র অন্দরে তৈরি হও গৃহযুদ্ধের উত্তাপ ঘিরে বেশ চিন্তিত কেন্দ্রীয় নেতারা৷ সূত্রের খবর সেই সমস্ত সমস্যার সমাধানে এবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকে দিল্লিতে তলব করা হয়েছে৷
একদিকে যখন বিজেপির অন্দরে নেতৃত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে ‘গৃহযুদ্ধ’, অন্যদিকে শাসকদল তৃণমূলের অন্দরেও শুরু হয়েছে চরম গোষ্ঠীকোন্দল৷ স্বাধীনতা দিবসের পতাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ থেকে শুরু করে এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে আদি বনাম নব্যের সংঘর্ষ ইতিমধ্যেই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কপালে৷ বিধানসভা নির্বাচনের আগে দু’দলের গোষ্ঠী কোন্দল নতুন করে তপ্ত হতে শুরু করেছে বঙ্গ রাজনীতির ময়দান৷