১৫ বছরের নীতীশ-শাসনে কতটা এগিয়েছে বিহার? উন্নয়ন কি ‘অলীক স্বপ্ন’?

১৫ বছরের নীতীশ-শাসনে কতটা এগিয়েছে বিহার? উন্নয়ন কি ‘অলীক স্বপ্ন’?

তপন মল্লিক চৌধুরী : নির্বাচন কমিশন বিহার বিধানসভা ভোটের দিন ঘোষণার পরই ভোটের গতি প্রকৃতি নিয়ে সমীক্ষা হয় সে রাজ্যের ২৫,৭৮৯ জনের মধ্যে। সমীক্ষা বিহার বিধানসভার সম্ভাব্য ফল নিয়ে যে রিপোর্ট দেয় তা পুরোপুরি বিজেপি জোটের পক্ষে। সমীক্ষার পূর্বাভাষ বিজেপি-জেডিইউ জোট পাবে দুই তৃতীয়াংশ আসন।ওই সমীক্ষা রিপোর্ট বাস্তবায়িত হলে চতুর্থবারের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি নীতীশ কুমারের দখলেই আসছে।

ইতিমধ্যে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট হয়েছে। করোনা সংক্রমণের মধ্যেওভোটারদের অদম্য উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোট নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সব সময়ে বলে থাকেন,বেশি সংখ্যক মানুষ ভোট দিতে যদি ভোট কেন্দ্রে হাজির হন তাহলে বুঝতে হবে রাজনৈতিকভাবে কিছু একটা পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। বুধবার বিহার বিধানসভা নির্বাচনেরপ্রথম দফায় যত শতংশ ভোট পড়েছে তা করোনা সংক্রমণ আবহের নিরিখে বেশি। কেবল তাই নয়, তা ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের থেকেও বেশি। প্রথম দফায় বিহারের ১৬ জেলার ৭১টি কেন্দ্রের ৩৩৭১টি বুথে মোট ভোট পড়েছে ৫৪.২৬ শতাংশ। অতিমারির আবহে ভোটের শতাংশ কিছুটা হলেও নীতীশ কুমারকে চাপে রেখেছে।

এনডিএ জোটের ফিরে আসার কথা সমীক্ষা জোর দিয়ে বলেছে। সেই সঙ্গে রাজনীতিকদের ব্যাখ্যা হাথরস কাণ্ড, লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা বিহার বিধানসভায় তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারবে না। বরং বিজেপি বিহারে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসাবে উঠে আসবে।নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল পাবে দ্বিতীয় স্থান।আর তৃতীয় স্থান পাবে লালুপ্রসাদ যাদব আর তেজস্বী যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল।

কিন্তু প্রথম দফার ভোটের আগে থেকেই বিহারের আবহাওয়া বলছে নীতীশ কুমার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সব থেকে গ্রহণযোগ্য হলেও এবার তিনি বেশ চাপে রয়েছেন। তিনি ফের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শিতে বসলেও শাসনকার্য চালাতে তাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। কারণ জোটসঙ্গী বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা থাকবে বেশি।গ্রহণযোগ্যতা কিংবা জনপ্রিয়তার নিরিখে যে কোনও ভোটে মুখ একটা বড় বিষয়।যে মুখ অনেক নেতিবাচক ইস্যুর মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। নিজের দল বা জোটকে ভোটে জিতিয়ে আনার ক্ষমতা রাখে। গত লোকসভা ভোটে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন নীতীশ কুমার ছিলেন সেই মুখ। তার জেরেই টানা ১৫ বছর ধরে তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এবার আর তিনি সেই জায়গায় নেই। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকার ফলে তিনি তার সুশাসকের মর্যাদা হারিয়েছেন।

একতানা ১৫ বছর কুর্শিতে বসে থাকার কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু নেতিবাচক অভিযোগ উঠেছে। করোনাকালে লকডাউনের সময়ে তিনি বিহারের সাধারণ মানুষের পাশে সাহায্যের হাত নিয়ে দাঁড়াতে পারেন নি। পরিযায়ী শ্রমিক থেকে শুরু করে দলিত জনজাতির জন্যতিনি যে সব সুযোগযুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেলেন তার কিছুই প্রায় রক্ষা করতে পারেন নি। ফলে বিহারের দরিদ্র মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছে। বিহারের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিওএবার নীতীশের বিদায় চাইছেন। সেই তুলনায় লালু তনয় তেজস্বী যাদব এবং রামবিলাস পাসওয়ানের পুত্র চিরাগ এবার বিকল্প মুখ হয়ে উঠতে চেষ্টা করছেন।

টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় রয়েছেন নীতিশ কুমার। এই বছরগুলিতে বিহারে উন্নয়ন বলতে কী হয়েছে? দেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনায় বিহার যে জায়গায় ছিল, তার থেকে এক পাও সামনে এগোয়নি। ২০০৫ সালে বিহার ছিল দেশের সবথেকে গরীব রাজ্যক, এখনও তাই আছে। এই মুহূর্তে উন্নয়ন সূচকে বিহারের স্থান সবার নীচে।বিহারে শিক্ষার মানও অত্যন্ত দুর্বল।স্কুলগুলিতে ছাত্রীদের বিনামূল্যে সাইকেল বিতরণ করলেও রাজ্যেকর শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য কোনো ব্যেবস্থা নেননি নীতীশ কুমার। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে উন্নয়নের এই নেতিবাচক পরিসংখ্যানকে তুলে ধরছেন বিরোধীরা।

বিহার বিধানসভা ভোট ময়দানে অনুপস্থিত সেরাজ্যের তিন বর্ষীয়ান নেতা। লালুপ্রসাদ আপাতত বন্দি রাঁচি জেলে। প্রাক্তন জেডিইউ নেতা শরদ যাদবওঅসুস্থ। কয়েকদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন বিহারের দলিতদের মুখ রাম বিলাস পাসোয়ান। তাদের জায়গা দখল করেছে দুই তরুণ তুর্কি তেজস্বী যাদব ও চিরাগ পাসওয়ান। তেজস্বী নিজের প্রচারে রাখেননি লালুপ্রসাদ বা রাবরি দেবীর ছবি। বিজেপি-জেডিইউ এ নিয়ে তাকে আক্রমণ করছেন কিন্তু তেজস্বীর সঙ্গে রয়েছে তরুণ সমাজ। ভোটের ময়দানে তেজস্বীর নেতৃত্বে আরজেডির ৪৫ শতাংশ প্রার্থী এবার ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *