দেবময় ঘোষ: বামফ্রন্ট ২০১৯ লোকসভায় জেতা সিট (রায়গঞ্জ) কংগ্রেসকে ছাড়তে পারেনি। জোট হয়নি। অথচ, এমন কী হল কে, ২০২১ এর জেতা সিট আই এস এফ-কে ছেড়ে দিতে হল?
আজ বামপন্থীরা অনেকেই বলছেন, গোটা পার্টির শরীরে অজস্র ভুল রাজনীতির অসুখ দানা বাড়ছে। এক প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য প্রথমে বলেছিলেন। তারপর বলেছেন, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় এবং অশোক ভট্টাচার্য। অনেকেই বলেছেন, সংযুক্ত মোর্চার ধারণাটি ভুল ছিল। আবার অনেকেই ২০১৬ থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার পক্ষে বা বিপক্ষে। মূল আট দলের বামফ্রন্ট ফিরে আসুক – দাবি উঠেছে।
তন্ময় ভট্টাচার্য হিসাব দিয়েছেন, ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের পর বাম-কংগ্রেস জোটের সঙ্গে তৃণমূলের তফাৎ ছিল ৩০ লক্ষ ভোট। বুথ প্রতি ৪২টি ভোট মাত্র। কিন্তু, নির্বাচনের ফলাফলে তা দেখা যেত না। নেগেটিভ কথাবার্তা শুরু হয়। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েতে জোট হল না। ২০১৯ সালের লোকসভায় জোট হল না। কিন্তু ২০২১ বিধানসভায় জোট হল। তন্ময়ের কথাতেই পরিষ্কার – প্রতি নির্বাচনের পরই সিপিএম চমক দিয়েছে।
বাম-কংগ্রেসের সম্পর্ক অনেক প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিমের জেতা কংগ্রেস আসন ছাড়তে চায়নি সিপিএম। দীপা দাসমুন্সীর জেদাজেদিতে কংগ্রেস ও সেই আসন ছাড়বে না। তাই নিয়মমাফিক আসন সমঝোতা সেখানেই বাতিল হল। বাম শরিক দলগুলিও ছিল চরম অখুশি। কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীকে অগ্রাহ্য করে প্রার্থী দিয়েছিল আর এস পি। সংবাদমাধ্যমে তৎকালীন আর এস পি সর্বভারতীয় সভাপতি ক্ষিতি গোস্বামী তা ঘোষণা করেন। মালদা আসনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিএম। বাম-কংগ্রেসের বিশ্বাসের ভিত্তি সেখানেই ভেঙে পড়ে।
২০২১ এর বিধানসভায় সিপিএমের জেতা বসিরহাট উত্তর আসন আই এস এফ -কে ছেড়ে দিতে হয়েছে। তাহলে, ২০১৯ শে কংগ্রেসকে কেন রায়গঞ্জ আসন ছাড়া গেল না? আই এস এফ-কে আনার পিছনে পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম ভূমিকা নিয়েছেন বলে শোনা যায়। সিপিএমের জেতা আসন তিনি আই এস এফ-কে দিতে পারেন। কিন্তু, নিজের জেতা রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র তিনি কংগ্রেসকে দিতে পারেননি। তবে, আই এস এফ-কে সেলিম একা নিজের কৃতিত্বে নিয়ে এসেছেন তা বলা যায় না। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বোস, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং পার্টির সাধারণ সম্পদক সীতারাম ইয়েচুরি দায় এড়াতে পারেন না। ২০১৬ এবং ২০২১ সালে কংগ্রেসের সাথে জোট হল। কিন্তু, ২০১৮ এবং ২০১৯ শে হল না। আম জনতার কাছে বাম রাজনীতি পরিষ্কার ‘নীতিভ্রষ্ট’ হয়ে গিয়েছে।