স্বাধীনতার ৭৪ বছর পর হঠাৎ কেন জাতীয় পতাকা তুলতে গেল সিপিএম?

স্বাধীনতার ৭৪ বছর পর হঠাৎ কেন জাতীয় পতাকা তুলতে গেল সিপিএম?

কলকাতা: স্বাধীন ভারতের বয়স হয়ে গেল চুয়াত্তর। হঠাৎ রীতি বদলে স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের হিড়িক পড়ল কেন সিপিএমে? ১৯৪৮ – কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক বি টি রণডিভে বলেছিলেন – ” ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়।” সিপিএম পার্টি অফিস গুলিতে পতাকা উত্তোলনের রেওয়াজ সে যুগ থেকেই ছিল না। যদিও ছাত্র-যুবরা স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় উত্তোলন করেছেন। কিন্তু পার্টি নেতারা সে রাস্তায় ঢুকে দেখেননি।

ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে কমিউনিস্টদের একাত্মতা নিয়ে নানা সময়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। এ দেশের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে থেকেও সিপিএম কেন জাতীয় পতাকা উত্তোলন বা স্বাধীনতা দিবস পালনের কর্মসূচি নেয় না, পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক কালে দলের রাজ্য সম্মেলন বা কোনও কোনও জেলা সম্মেলনেও এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত কয়েক বছর ধরেই স্বাধীনতা দিবসে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের তরফে। এবার আর কোনও পার্টি অফিসই বাকি রইল না। দিল্লির এ কে গোপালন ভবন থেকে কলকাতার আলিমুদ্দিন স্ট্রিট – লাল পতাকার পাশে জায়গা পেল ভারতের জাতীয় পতাকা।

সিপিএম অনুধাবন করেছে, আনুষ্ঠানিক ভাবে আমরা এই কর্মসূচি আগে করা না হলেও এখন সময় এসে গিয়েছে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বামপন্থীদের যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার দাবি তারা করে আসছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হলে জাতীয় পতাকা হাতে তুলতেই হবে। পতাকা থেকে দূরত্ব রক্ষা করা চলবে না। সিপিএমের একটি প্রচলিত কথা আছে – দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আসেনি। কিন্তু, দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াইয়ের বার্তাও যে তাঁরা স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি থেকে দিতে চান, স্পষ্ট করা হয়েছে।

সিপিএম সূত্রে খবর, দলের গঠনতন্ত্রে জাতীয় পতাকা তুলতে কোনও বাধা নেই। কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রীরা স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় সরকারিভাবে স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতেন জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা। পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০ (ক) ধারায় বলা আছে, দেশের সংবিধানের প্রতি দল অনুগত থাকবে। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের আদর্শও মেনে চলবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দেশের কোথাওই সিপিএমের তরফে জাতীয় পতাকা উত্তোলনে কোনও বাধা নেই। তবে সারা দেশের সঙ্গে ব্যাতিক্রম ছিল ত্রিপুরা। ত্রিপুরার সিপিএম যেমন প্রতি বছরই রাজ্যে দলের সদর দফতর এবং প্রতি ইউনিটে ১৫ অগস্ট ও ২৬ জানুয়ারি জাতীয় পতাকা তুলে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *