নয়াদিল্লি ও কলকাতা: সারদাকাণ্ডে রাজীব কুমারের হাজিরা সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম রায়ে বড়সড় ধাক্কা খেল সিবিআই। তড়িঘড়ি সারদা কাণ্ডের বিচার হবে না। তেমনই রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তার নয়, জেরা করতে পারে সিবিআই।এজন্য শিলঙে সিবিআইয়ের দপ্তরে হাজিরা দিতে হবে সিপিকে। আজ বা কালের মধ্যে সিবিআইয়ের তরফ থেকে রাজীব কুমারের কাছে হাজিরার নোটিস যাবে। তার পরেই দুএক দিনের মধ্যে সিবিআই আধিকারিকরা শিলঙে পৌঁছাবেন, সেখানেই তদন্তকারীদের মুখোমুখি হবেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। এদিন রাজীব কুমার সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে,সেখানেই এই রায় শোনান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
গোটা ঘটনায় সিবিআই তথা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নৈতিক জয় পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারদা কাণ্ডে গত রবিবার নগরপালকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করতেআসেন সিবিআই কর্তারা। তবে আগেভাগেই খবর পেয়ে কলকাতা পুলিশ সেই গ্রেপ্তারি রুখে দেয়। উলটে সিবিআই কর্তাদের আটক করে শেকসপীয়ার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনায় প্রথম থেকেই নগরপালের পাশে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, সিবিআই কর্তাদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর সিপির বাড়িতে জরুরি বৈঠকে বসেন তিনি।তারপর সেখান থেকে সোজা ধর্মতলার ধরনা মঞ্চে রবিবার রাত থেকে মেট্রো চ্যানেলেই রয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। আগামী আট তারিখ পর্যন্ত তাঁর এই ধরনা চলবে।
ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল মমতার পাশে দাঁড়িয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় ধরনা মঞ্চে এসে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে থাকার বার্তা দিয়ে গিয়েছেন তরুণ আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। বার্তা দিয়ে ফোন করেছেন চন্দ্রবাবু নায়ডু ও এম কে স্ট্যালিন। আজ ধর্মতলার ধরনা মঞ্চে আসছেন অন্ধ্রপ্রেদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা তেলুগুদেশম পার্টির মুখ চন্দ্রবাবু নায়ডু।
বিশ্বস্ততার সঙ্গে রাজীব কুমারকে সমস্ত বলতে হবে রাজীব কুমারকে। দিল্লিতে বা কলকাতাতে নয় শিলঙে তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করা হবে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, রাজীব কুমার তদন্তে সহযোগিতা করছেন না।অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনুসিঙভির অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণে হেনস্তা করা হচ্ছে কলকাতার নগরপালকে। তবে রাজীব কুমারকে সিবিআইয়ের তদন্তের স্বার্থে বারবার হাজিরা দিতে হলেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
তৃণমূলের সলিসিটারের দাবি, রাজীব কুমার সহযোগিতা করবে না বলেননি, নিজেকে নির্দোষও বলেননি। এবার সিবিআইয়ের কাজ হল রাজীব কুমারকে দোষী প্রমাণ করতে হবে।তাছাড়া কোনও রকম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই সেদিন রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছিল সিবিআই,তাই গোটা প্রক্রিয়াকে রুখে দিয়েছে পুলিশ। এদিকে ডিজি, মুখ্যসচিব ও রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিস ধরিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানি, সেদিনই ঠিক হবে এই পুলিশকর্তাদের সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা দিতে হবে না। ইতিমধ্যেই শীর্ষ আদালতের রায়ের কপির জন্য অপেক্ষা করে আছেন কলকাতার সিবিআইয়ের কর্তারা। সেই কপি হাতে পেলেই তা পৌঁছে দেওয়া হবে শিলঙের অফিসে।তারপর সেখানে রাজীব কুমারকে হাজিরা দিতে হবে।
এই ঘটনায় গণতন্ত্র তথা দেশের মানুষের নৈতিক জয় দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী। শীর্ষ আদালতের রায় শোনার পরেই মোদিকে একহাত নেন তিনি। মোদি দেশের সংবিধান নষ্ট করে দিয়েছেন, গণতন্ত্র নেই দেশে। বন্দুক আর গো-রক্ষকদের দিয়ে দেশ চালানো যায় না। মোদি যে ফের ক্ষমতায় আসছেন না তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।