কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যে ধরণের কেলেঙ্কারি সামনে আসছে, তাতে প্রশ্ন ওঠে কীভাবে দিনের পর দিন এই দুর্নীতির বিষয়ে না জেনে রইল শাসক দল। যখন জানল তখন নাকি অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। কীভাবে সম্ভব প্রশ্নটা এখানেই?
পথে নেমে যাঁরা আন্দোলনে। তাঁরা সত্যিই কি সরকারকে কালিমালিপ্ত করতেই এতটা বেপরোয়া, নাকি নিজের প্রাপ্য চাকরিটা পেতে পথে নেমেছেন। এই জায়গায় কি আসতে পারছেন বা আগেও পেরেছেন শাসকরা? হয়ত না। তাহলে ২০০৯ সালেও ঠেকানো যেত নিয়োগে দুর্নীতি। বাম শাসনেও যেমন ঠেকানো গেল না, তৃণমূলের শাসনেও ঠেকানো গেল না। কারণ, চাকরি তে এ রাজ্যের দুর্নীতি নতুন নয়।
ক্যাগের রিপোর্ট বলছে , বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জমানায় চাকরিপ্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরে ব্যাপক গরমিল হয়। শুধু ২০০৯ সালের সহকারি শিক্ষক নিয়োগের দশম আরএলএসটিতেই ৪৬,৬৪৭ জন প্রার্থীর শিক্ষাগত নম্বর বা অ্যাকাডেমিক স্কোরে গরমিল ধরা পড়ে। এদের মধ্যে ৩২,৯৭০ জনের নম্বর বাড়ানো হয়েছিল বলেও খবর। আবার নম্বর কমানো হয় ১৩,৬৭৭ জন প্রার্থীর। চূড়ান্ত মেধা তালিকায় ২,৪৮৩ জনের প্রাপ্ত নম্বরেও গরমিল থাকে।
• ২০০৯ সালে বাংলায় অঞ্চল ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করত স্কুল সার্ভিস কমিশন
• ক্যাগের তথ্যে, পূর্বাঞ্চলে ৬, ৪৯৩ জনের নম্বরে হেরফের দেখা যায়
• উত্তরাঞ্চলে সেই সংখ্যা ১১ হাজার ২১
• দক্ষিণাঞ্চলে ৮ হাজার ৩৪ জনের অসঙ্গতি মিলেছে
এই তথ্য যখন সামনে আসছে তখন আরও একটি দুর্নীতির আভাস মিলছে। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাসনে আসার পর, ২০১২ সালে এসএসির মেধা তালিকা সামনে আসে। সেখানেও দেখা যায় গরমিল। সেই প্রকাশিত মেধা তালিকা আসলে ছিল বাম জামানার।
সুতরাং, নিয়োগ দুর্নীতি চলেছে। ফারাক টা হয়ত দুর্নীতির পদ্ধতিতে। তৃণমূল জামানায় হয়ত বা এই দুর্নীতি অনেক বেশি প্রকাশ্যে হয়েছে। যেখানে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় হেফাজতে আসার পরই গ্রেফতার হয়েছে একে একে৷ মার্চ মাসেই টানা জেরার পর গ্রেফতার করা হয় শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধক্ষ্য শান্তনুকে গ্রেফতার করেছে ইডি। তারও আগে গ্রেফতার করা হয়েছে তৃণমূলের যুব কংগ্রেসের সম্পাদক কুন্তল ঘোষকে। শুধু তাই নয় একই মামলায় শান্তনু ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলকে গ্রেফতার করেছে ইডি। যার কাছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ পাওয়া যায়। তারও আগে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য ও তার ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্জল। গ্রেফতারের তালিকা হয়ত আরও দীর্ঘ হতে পারে।
বিশ্লেষকদরে মত, বাম আমলেই নিয়োগ দুর্নীতির প্রযুক্তি রেখা তৈরি হয়। আবার তৃণমূলের আমলে সেই প্রযুক্তি রেখা থাকলেও বদল ঘটে পদ্ধতিগত। সুতরাং, প্রশ্ন থাকছে, কে কতটা দুর্নীতির সূচকে এগিয়ে? যেখানে থেকে যাচ্ছে সেই নানা মুনির নানা মত, কেউ বলছেন বাম আমলে মেধা অনুযায়ী চাকরি হয়নি, কেউ বলছেন তৃণমূল জমানায় চাকরিটাই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বাম আমলে হয়ত বা সুপারিশের চাকরি ছিল। তৃণমূলের আমলে সেই চাকরি লটে লটে বিক্রি হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ঘুরেফিরে তাই শাসক দলের পরিহাস পরিস্থিতিই সামনে। যেখানে সরকার হঠাত্ জানতে পারে তাদেরই দলের নেতা-মন্ত্রী-সাকরেত রা দুর্নীতির টাকায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি করছেন। আর সব হারিয়ে আন্দোলনে পথে বসা শিক্ষিত চাকরিপ্রার্থীরা প্রাপ্যটুকু পেতে লড়ে যাচ্ছেন।