‘ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না’, চলে গিয়েছে করোনা, ঘোষণায় দিলীপের

‘ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না’, চলে গিয়েছে করোনা, ঘোষণায় দিলীপের

তপন মল্লিক চৌধুরী : করোনা সংক্রমণের বাড় এমন বেড়েছে যে দেশজুড়ে ত্রাহিরব পড়ে গিয়েছে। গড়ে দৈনিক ১ লক্ষ সংক্রমণ ছোঁয়ার পথে দেশ। এর বাইরে নয় পশ্চিমবঙ্গও। এ রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা নিয়ম করে ৩,০০০ ছাড়াচ্ছে। সে সময় প্রকাশ্যে এল বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের ঘোষণা, ‘করোনা চলে গিয়েছে’!

অনেকেই বলছেন, এমন আশ্চর্য ঘটনা তো এই সময় ঘুমিয়ে স্বপ্নেও দেখা সম্ভব নয়। ঘুমে হোক কিংবা জাগরণে, দিলীপবাবু যাই দেখে থাকুন আর যাই বলে থাকুন, প্রতিদিন দেশে এবং এ রাজ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। আমরা অনেক কাল আগেই জেনেছি, বেফাঁস-বেলাগাম মন্তব্য করাই তাঁর অভ্যাস। এবার তিনি করোনাকে নির্বাচনী  হাতিয়ার করতে গিয়ে জনসভায় একটি বিরাট মিথ্যে ও বিপজ্জনক কথা বলে ফেলেছেন।

হুগলির ধনেখালিতে এক সভায় মেদিনীপুরের সাংসদ বলেন, ”করোনা চলে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও দিদি লকডাউন জারি করছেন। বিজেপি যাতে মিটিং-মিছিল না করতে পারে, তাই লকডাউন জারি করা হচ্ছে। আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না৷”

দিলীপবাবু আপনি কেবলমাত্র মেদিনীপুরের সাংসদ নন, একটি রাজনৈতিক দলের রাজ্য সভাপতি। এ ধরণের মিথ্যা এবং বোধবুদ্ধিহীন কথাবার্তা কি প্রকাশ্য জনসভায় করা উচিত? বেফাঁস-বেলাগাম মন্তব্য করার জন্য আপনি ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। আপনার ওই ধরণের কথা শুনতে অনেকেই ভীড় জমান, কারণ আপনার করা নানান মন্তব্যে হাসি ঠাট্টার উপাদান উপকরণ ঠাঁসা।

কিন্তু তাই বলে এত বড় একটা মিথ্যা আপনি অবলীলায় বলে দিলেন? একবারও আপনার মনে হল না, কথাটা শুধু মিথ্যা নয়, মানুষকে ভুল তথ্য দেওয়া, ভুল পথে চালিত করা। দিলীপবাবু বয়স তো কম হল না। মিথ্যা থেকে এখন বেরিয়ে আসা কঠিন। চেষ্টা করুন একটু সংযত হতে। মনে রাখবেন এটা অপরাধ, ভয়ংকর অপরাধ।

মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয় না, দিলীপ ঘোষ এবং তাঁর রাজনীতি মানুষের জীবনের থেকে ভোট ব্যাঙ্ককে অনেক বেশি মূল্য দেন। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতির রসবোধেরও নমুনা তারিফ করতে হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মোট করোনা পরীক্ষা হয়েছে ২৩ লক্ষ ৩০ হাজার ২৮৩ জনের। স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বৃহস্পতিবারের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৩ হাজার ১১২ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

এই নিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হল ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ১৭৫। তবে আশার কথা, রাজ্যে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা মোট ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ২৭ জন। রাজ্যে সুস্থতার হার হয়েছে ৮৫.৯৫ শতাংশ। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সক্রিয় করোনা রোগী ২৩ হাজার ৩৭৭ জন। মৃত্যু হয়েছে মোট ৩ হাজার ৭৭১ জনের। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও আপনি বলছেন, করোনা চলে গেছে। চিন্তা করছেন কিভাবে কত বড় মিছিল করবেন, মিটিঙে কত লোক সমাগম করবেন।

হাতে গোনা কয়েকটা মাস পরেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। ফলে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও রাজনৈতিক কর্মসূচি জারি রেখেছে প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দল। শাসক বিরোধী সব পক্ষের বিরুদ্ধেই জমায়েত করার অভিযোগ উঠেছে। তাই বলে, ‘করোনা চলে গিয়েছে’ বলে দাবি করেনি কেউ।

সম্প্রতি দিলীপ ঘোষের একাধিক নিরাপত্তারক্ষীর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার পর কয়েকদিন হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন দিলীপবাবু। ফের নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে শুরু করেছেন তিনি। আর কোনও সভাবেই সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের বিধি মানছেন না তিনি। দেখা গিয়েছে, মঞ্চে ও মঞ্চের সামনে উপচে পড়ছে ভিড়। সেই সব সভার ছবি আবার ফেসবুকে পোস্ট করছেন দিলীপবাবু ও বিজেপি।

খুব জানতে ইচ্ছে করে, কেন্দ্রীয়  স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিনে কি দিলীপবাবু এই তথ্যই পেয়েছেন? যদি না পেয়ে থাকেন তাহলে এই তথ্য তিনি কোথায় পেলেন? যেখান থেকেই পেয়ে থাকুন, বিজেপি দলের উচিত তাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতির মস্তিষ্কের পরীক্ষা করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + one =