তপন মল্লিক চৌধুরী : উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব-সহ দলের সাংগঠনিক একাধিক সমস্যা তুলে ধরে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেসের ২৩ জন শীর্ষস্থানীয় নেতা। সোমবার তা নিয়েই বৈঠকে বসেছে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। রাহুল গান্ধীর দলের সভাপতি পদে ফিরতে অনীহা। পরিবারের বাইরে গিয়ে দলকে ভাবতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রিয়াংকাও। তাহলে কে ধরবেন কংগ্রেসের হাল?
কংগ্রেস নেতাদের একাংশ রাহুল গান্ধীকেই ফের সভাপতি করার দাবি জোরালোভাবে জানাতে শুরু করেছেন। সরাসরিই তাঁরা বলছেন, এক বছর আগের গান্ধী পরিবারের মনোভাব যা–ই থাকুক, দল ও দেশের স্বার্থে রাহুলকেই সভাপতি করা প্রয়োজন। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদেরা এক বছর আগে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, গান্ধী পরিবারের বাইরের কারও কংগ্রেসের সভাপতি হওয়া উচিত বলে রাহুল যা মনে করেন, তিনি তার সঙ্গে একমত। রাহুল–প্রিয়াঙ্কা কি এখনো এক বছর আগের মনোভাব আঁকড়ে রয়েছেন!
রণদীপ সিং সুরযেওয়ালা এক টুইটে সেই জল্পনার অবসান ঘটাতে বলেছেন, এক বছর আগের ওই সব কথা নিয়ে হইচই বাধানোটা আসলে বিজেপির কাজ। ঘটনা হল এক বছর পরও কংগ্রেসের নেতা ও কর্মীরা রাহুলকেই দলের সভাপতি দেখতে চান। তিনি এও বলেন, রাহুলই গণতন্ত্রের ওপর মোদি–শাহর আক্রমণের মোকাবিলা করছেন। তিনিই কংগ্রেসের নেতৃত্বদানের উপযুক্ত।
একমাত্র সুরযেওয়ালা নন, রাহুলের পক্ষে বলেছেন শক্তি সিং গোহিল, এক বছর ধরে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছেন রাহুল। চীন সম্পর্কে দেশকে সজাগ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর অসত্য ভাষণের স্বরূপ তুলে ধরা থেকে অর্থনীতির করুণ হাল শোধরাতে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনাও করেছেন রাহুল। তাই এই কঠিন পরিস্থিতিতে একমাত্র রাহুলই দলের কান্ডারি হওয়ার যোগ্য। দলের সাধারণ সম্পাদক ভি এম রেড্ডিও বলেছেন, রাহুল সব সময় মানুষের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন। দলের নেতা–কর্মীরা তাঁকেই নেতা হিসেবে চাইছেন। সেই দাবি শোনা ছাড়া রাহুলের কোনও বিকল্প নেই। প্রায় একই কথা ঘুরিয়ে বলেছেন শশী থারুর।
গত লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের দায় নিয়ে কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ান রাহুল। তার পর দলের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন সোনিয়া। ঠিক ছিল, নতুন সভাপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব সামলাবেন সোনিয়া। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে সোনিয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সভাপতি নির্বাচন করে উঠতে পারেনি কংগ্রেস। তা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই দলের মধ্যে অসন্তোষ জমা হচ্ছিল। প্রকাশ্যে তা নিয়ে মন্তব্যও করতে দেখা যায় একাধিক নেতাকে। দলের শীর্ষস্থানীয় ২৩ জন কংগ্রেস নেতা সম্প্রতি সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখেছেন। তাতে বলা হয়েছে, সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন, বিপদ-আপদে পাশে থাকবেন এবং ২৪ ঘণ্টা দলের মুখ হিসেবে যাকে তুলে ধরা যায়, এমন কাউকে পূর্ণমেয়াদি সভাপতিত্বের জন্য নির্বাচিত করা হোক।
অন্যদিকে গত মার্চ মাসে মধ্য প্রদেশ সরকারের পতন ঠেকাতে রাহুলকে উৎসাহী হতে দেখা যায়নি। কিন্তু রাজস্থানে কংগ্রেস সরকারের ভাঙন ঠেকাতে তিনি ও প্রিয়াঙ্কা বাড়তি উদ্যোগ নেন। সোনিয়া গান্ধী দলের সভাপতি থাকলেও রাহুলই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। রাজস্থান সংকট কাটাতে যাঁদের ওপর তিনি নির্ভর করেছিলেন, সেই সুরযেওয়ালা, অজয় মাকেন বা কে সি বেনুগোপালের মতো নেতারাও দলে রাহুল অনুগামী বলে পরিচিত। রাহুল অনুগামীদের গুরুত্বও দলে বাড়ছে। কংগ্রেস মহলের একটা বড় অংশ মনে করছে, নতুন করে কিছু না বললেও রাহুল দ্বিতীয়বার সভাপতিত্ব গ্রহণে নিজেকে প্রস্তুত করছেন। সেই অবকাশে রাহুলকে নেতা করতে তাঁর অনুগামীরা নতুনভাবে সক্রিয়।
আরেক দিকে তাঁর আমলে দল পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সোনিয়া আর দলের অন্তর্বর্তী সভানেত্রীর পদ আগলে থাকতে যে চান না,হতে পারে তা আসলে গান্ধী পরিবারের ছাতার নীচে সবাইকে রেখে দেওয়ার এক কুশলী প্রচেষ্টা।