কলকাতা: বনগাঁ পুরসভার অাস্থা ভোট ঘিরে রণক্ষেত্র বনগাঁ৷ পুলিশের সামনে বোমাবাজি৷ লাঠিচার্জ পুলিশের৷ তৃণমূলের পুরপ্রধান পুরসভায় ঢুকতেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়৷ মাইকিং করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা চেষ্টা পুলিশের৷ ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও কেন তৃণমূল-বিজেপি কর্মীদের জমায়েত? পুলিশের ভূমিকা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন৷
বনগাঁ পুরসভার বিজেপির দুই কাউন্সিলর কার্তিক মণ্ডল ও হিমাদ্রি মণ্ডলকে আগামী সাতদিন গ্রেপ্তার করতে পারবে না পুলিশ৷ নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চের৷ অভিযোগ, হাইকোর্টের নির্দেশের পরও ওই দুই কাউন্সিলকে পুরসভার মধ্যেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না৷ এমনকি, বিরোধী দলের ৯ জন কাউন্সিলরকে তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে খবর৷ ফলে, কার্যত বিরোধী-শূন্য আস্থা ভোট করা হয় বনগাঁ পুরসভায়৷ পরে, বিরোধী দলের কাউন্সিলরদের হাজির না থাকায় জয়ী হয় তৃণমূল৷
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আজ ছিল বনগাঁ পুরসভার আস্থা ভোট৷ তিনটে থেকে ভোট নেওয়ার কথা থকলেও পুরসভা চত্বরে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশান৷ অভিযোগ, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানো ৯ কাউন্সিলরকে পুরসভার গ্যারেজের মধ্যে তালা বন্ধ করে রাখা হয়৷ বাকি দুই কাউন্সিলর কার্তিক মণ্ডল ও হিমাদ্রি মণ্ডলকে আটকে দেয় পুলিশ৷ বিজেপির অভিযোগ, হাইকোর্টের নির্দেশ দেখানোর পরও তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ ততক্ষণে তৃণমূলের তরফে ১০ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে আস্থা ভোট কানিয়ে নেন নির্বাচনী আধিকারিক৷ তিনটেয় ভোট হওয়ার কথা থাকলেও ৩টে ২৫ মিনিটে বর্তমান পুরবোর্ডের উপর আস্থা রাখা হয়৷ নির্বাচনী আধিকারিকের প্রশাসনিক কাজ শেষ হওয়ার পর বিজেপির ১১ কাউন্সিলরকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ পরে, বনগাঁ পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান বলেন, যাঁরা অনাস্থা এনে ছিল, তাঁরা কেউ উপস্থিত ছিলেন না৷ ফলে, নির্বাচনী আধিকারিক আমাদের বোর্ড চালিয়ে যেতে ছাড়পত্র দিয়েছেন৷ পুলিশকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল বোর্ড গঠন করেছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের৷ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানো বিশ্বজিৎ দাস জানান, আজ বাংলার গণতন্ত্রের কালো দিন৷ কলকাতা হাইকোর্টেও নির্দেশ মানছে না প্রশাসন৷ আজ পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে পুরসভার দখল নিল তৃণমূল৷ আমাদের কোনও কাউন্সিলরকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি৷ আটকে রাখা হয়৷ গোটা ঘটনায় প্রতিবাদে ফের কলকাতা হাইকোর্টে যাচ্ছে বিজেপি৷
অভিযোগকারী তৃণমূল কাউন্সিলর শম্পা মোহান্তের দাবি, তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অপহরণ করা হয়৷ চাওয়া হয় ২০ লক্ষ টাকার মুক্তিপণ৷ ৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার পরেও মুক্তি না দেওয়ার তিনি কোনওক্রমে পালিয়ে বনগাঁ থানায় অভিযোগ করেন৷ বনগাঁ আদালতে তাঁর জবানবন্দি নেওয়া হয়৷ অভিযুক্ত দুই কাউন্সিলরের খোঁজ পুলিশ৷ গোটা ঘটনা ‘সাজানো’ বলে দাবি করে বিজেপি৷ গেরুয়া শিবিরের দাবি, পুরসভা দখল করতে তৃণমূল পুলিশকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী কাউন্সিলরদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে৷
দুই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করে দায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান৷ মঙ্গলবার মামলার শুনানি চলাকালীন মামলার কেস ডায়েরি আদালতে জমা না হওয়ার কারণে আগামী সাতদিন এই দুজন বিজেপির কাউন্সিলরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে না। অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে বিচারপতি বাকচীর৷ নির্দেশদেন, প্রতিদিন বনগাঁ থানার তদন্তকারী আধিকারিকের কাছে এই দুই কাউন্সিলর হাজিরা দিয়ে আসবেন৷