দেবময় ঘোষ: ২০২১ এর মহাগুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন কী গত ১০ বছরে সব থেকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করবে 'তৃণমূল কংগ্রেস সর্বাধিনায়ক' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে? আনলকডাউনের মাঝে অস্বস্তিকর লকডাউন। করোনা পরিস্থিতি দিনদিন ভয় বাড়াচ্ছে। কিন্তু, ইতিউতি যে প্রশ্ন সব থেকে বেশি উঠেছে তা আপনার-আমার মত সাধারণ ভোটারের মনে বাসা বেঁধে আছে। ২০২১ নির্বাচনের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ভবিষ্যৎ কী? নীল-সাদা প্রশাসনের রং কী বদলাবে? '২১শে জুলাইয়ে'র ঠিক ১০ দিন আগে একগুচ্ছ বেয়াদপ প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই তৈরি রেখেছেন মমতা। করোনা পরিস্থিতিতে ২১ জুলাইয়ের স্বাভাবিক চিত্রের পরিবর্তন হবে। কিন্তু, মমতার আগুনে বক্তব্যের আঁচ যে কমবে না, তা বলাই যায়।
মনে রাখা প্রয়োজন, ৮-৯ মাস বাদেই ২১-এর নির্বাচন। তার আগে শেষ বার ২১-এর মঞ্চে দাঁড়াতে পারবেন মমতা। চুরি, দুর্নীতি থেকে প্রশাসনিক গাফিলতি – তাঁর সরকার এবং পার্টি – বেশ কিছু কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি। আগুনে বক্তব্যে সব অভিযোগ পুড়িয়ে ছারখার করে দেবেন মমতা , তা-ই স্বাভাবিক। কিন্তু, ক্ষুব্ধ ভোটারের মনের আগুন মিটবে কী? কারণ দুর্নীতির প্রশ্নে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে তৃণমূল। রাজ্যের করোনা পরিস্থিতিতে রেশন দুর্নীতি থেকে চাল চুরি – এই রকম ভয়ঙ্কর অভিযোগের মুখে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত সরকার শাসক দলের কিছু নেতা কর্মীর বেলাগাম দুর্নীতি থামাতে পারেনি। সংবাদ মাধ্যমে তা উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে। সরকারের রাগ গিয়ে পড়েছে সংবাদ মাধ্যমের উপর। প্রচলিত জনপ্রিয় খবরের কাগজের সম্পাদকের উপর সরকারি আক্রোশ বর্ষিত হয়েছে। নিজের বক্তব্যে আনন্দবাজার পত্রিকার উপর 'বাক্য বোমা' বর্ষণ করেছেন মমতাও। তবে শাসক দল এবং সরকার উভয়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পুলিশের থেকে রেহাই পাননি ইউটিউব চ্যানেল আরামবাগ টিভির মালিক সফিকুল ইসলামও।
আপাতদৃষ্টিতে যা মনে হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ কালে রাজ্য জুড়ে রেশন বন্টন নিয়ে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ এবং আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বণ্টনে ব্যাপক চুরির অভিযোগ থেকে মুক্তির পথ খুঁজেছেন মমতা। তবে কলকাতা পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে হাজরা মোড়ে দাঁড়িয়ে বুধবার মমতা যা বললেন, তা একপ্রকার স্বীকারোক্তি। তিনি বলেছেন, সিপিএমের আমলে পঞ্চায়েতে ১০০ শতাংশ চুরি হত। তাঁর আমলে ৭-৮ শতাংশ হয়। বাস্তব হল, আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বানাতে টাকা দিচ্ছে রাজ্য। দো-তলা পাকা বাড়ির মালিক তৃণমূল নেতারা সেই টাকা পকেটে পুরছেন। গণমাধ্যমের প্রচারে বিরোধীদের একটু সাহস বেড়েছে। তাই, এক প্রকার বাধ্য হয়েই রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল সেই টাকা লুঠেরাদেরবথেকে ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় শুরু করেছে। তৈরি হচ্ছে নতুন তালিকা। এর মাঝেও খবর পাওয়া গিয়েছে, সেই তালিকাতেও নাকি দূর্নীতি। ফের চুরির অভিযোগে উঠেছে।
তবে এটা ঠিক দুর্নীতির অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নতুন নয়। ২০২১-১৩ সালে সারদা কেলেঙ্কারি সারা দেশে আলোড়ন ফেলেছিল। কিন্তু, ২০১৬ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে অসুবিধা হয়নি মমতার। তেমনই, ২০১৪ সালের নারদা কেলেঙ্কারি লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিজয়রথ থামাতে পারেনি। ২১ জুলাই মঞ্চে সেই হিসাব বুঝিয়ে দেবেন মমতা। তবে, ২০১৯ সালে ২১ শে জুলাই তৃণমূলের অন্যতম প্রধান ইস্যু ছিল ইভিএম নয়, ব্যালট চাই। তার পর খড়গপুর সদর, কালিয়াগঞ্জ এবং করিমপুরে উপনির্বাচন ইভিএম-এ যেতেন মমতা। আপাতত,বই দাবী আর শোনা যায়না। -ফাইল ছবি৷