কলকাতা: সাপ-লুডোর টানটান লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হেরেই গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ম্যাজিকে ভর করে তৃণমূল কংগ্রেস দুশো পারের বিপুল জয় পেল বটে, তবে দুগ্ধপাত্রে গোচোনার মতো নন্দীগ্রামের মর্যাদার যুদ্ধে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে ১৯৫৩ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নন্দীগ্রামে দাঁড়ানোর ঘোষণা করে তিনি যে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছিলেন, তা সার্বিক বিচারে তৃণমূলকে মাইলেজ দিলেও, জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘরে মেরুকরণের ভোটে শেষ হাসি হাসতে পারলেন না জয়ের ব্যপারে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল নেত্রী৷ আর এই ইন্দ্রপতনের পর স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে গেল, পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন?
ইতিহাস বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার ইতিহাসে তৃতীয় ব্যক্তি যিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় হারের মুখ দেখলেন৷ এর আগে ১৯৬৭ সালে আরামবাগ কেন্দ্র থেকে প্রফুল্ল সেন এবং ২০১১ সালে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে হেরে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যদিও এই দুই ক্ষেত্রেই বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল তাঁদের দলেরও৷ এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্যরকম৷ বর্তমান অবস্থায় মমতা যেমন কোনও নিরাপদ আসন থেকে জিতে এসে ফের মুখ্যমন্ত্রিত্বের গদি সামলাতে পারেন, তেমন আবার মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে ‘ভাইপো’র অভিষেক ঘটিয়ে নিজে বেছে নিতে পারেন মার্গদর্শকের পদ৷
পারিবারিক পরম্পরার এই রাজনীতিতে সিলমোহর পড়লে অবশ্য দলকে নতুন করে শক্ত বাঁধনে বেঁধে রাখার চ্যালেঞ্জ সামলাতে হতে পারে তাঁকে৷ যদিও আবার পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা যেহেতু তাঁর হাতে, তার ওপর এই তাক লাগিয়ে দেওয়া জয় আর শুভেন্দু ব্যতীত অন্য ‘গদ্দার’দের বেহাল দশায় সম্ভবত তৃণমূল নেত্রীকে এখন খুব একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে না৷ তবে সম্ভাবনা বলছে, মমতাই আবার বসতে চলেছেন নবান্নের গদিতে৷ ছ’মাসের মধ্যে কোনও উপনির্বাচনে জিতে এলেই হল৷ তা সে বিরোধীরা যতই নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে বাজার গরম করুক না কেন৷
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রী হবেন কি না, বা হলেও কবে হবেন, সে প্রশ্ন আলাদা৷ তবে একটা কথা এখনই বলা যায়, এবারের বাজিমাতে মমতার পরে তৃণমূলের ‘ম্যাচ উইনার’ তিনিই৷ প্রশান্ত কিশোরকে নিয়োগ করা থেকে তাঁর কৌশলে ভরসা করা বা ‘ভাইপো’র বিরুদ্ধে বিজেপির উত্তুঙ্গ প্রচারের মোকাবিলা ঠান্ডা মাথায় করা, সব কিছুতেই পরিণতমনস্কতার পরিচয় দিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ৷ ৩৪ বছরের অভিষেক যে মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন, তাতে বাংলায় ফের সবুজের অভিযানে তাঁর আলাদা কৃতিত্ব প্রাপ্যই৷