তৃণমূলের ছত্রছায়ায় ছত্রধর! হারানো জমি পুনরুদ্ধার আদৌ সম্ভব?

তৃণমূলের ছত্রছায়ায় ছত্রধর! হারানো জমি পুনরুদ্ধার আদৌ সম্ভব?

কলকাতা: লক্ষ্য ২০২১ সালের নির্বাচন৷ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার দল গঠনের দলের পুনর্বিন্যাস করল তৃণমূল৷ দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে এবার ২১ জনের নতুন তালিকা তৈরি করা হয়েছে৷ সেখানে উল্লেখযোগ্যভাবে জঙ্গলমহল প্রধান্য পেয়েছে৷ জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার ৫ মাস পর তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে উঠে এলেন ছত্রধর মাহাতো৷ বাংলা বিধানসভা নির্বাচনের আগে হঠাৎ কেন তৃণমূলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল ছত্রধর? নতুন করে চড়তে শুরু করেছে বিতর্ক৷

২০০৯ সালের কাঁটাপাহাড়ি বিস্ফোরণ মামলায় গত বছর ১৯ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের তরফে ছত্রধরের যাবজ্জীবনের সাজা কমিয়ে ১০ বছর হয়েছিল৷ দীর্ঘ আইনি জট কাটিয়ে প্রায় এক দশক পর হত ফেব্রুয়ারিতে জেল থেকে মুক্তি পান জঙ্গলমহলের অবিসংবাদী নেতা ছত্রধর৷ জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ছত্রধরের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছিল তৃণমূল৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল৷ তখন শুরু হয়েছিল জল্পনা৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহল পুনরুদ্ধার করতে তৃণমূল ফের কি ছত্রধরের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে? সেই জল্পনার কাটিয়ে সরাসরি তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে চলে এলেন অবিসংবাদী নেতা ছত্রধর৷

যদিও, গত ২০১৫ সালে ইউএপিএ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতো৷ মেদিনীপুর আদালতের তরফে ছত্রধর, সুখশান্তি বাস্কে, শম্ভু সরেন ও সাগেন মুর্মুকে দোষী সাব্যস্ত করার পর প্রিজন ভ্যানে দাঁড়িয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন ছত্রধর৷ পরিবর্তনের আমলে জঙ্গলমহলের আন্দোলন পর্বে ছত্রধরের পাশে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ একই মঞ্চে দু’জন করেছিলেন একাধিক সভা৷ মমতা তখন বিরোধী নেত্রী৷ সে কথা মনে করিয়ে আদালত চত্বরে ছত্রধর জানিয়েছিলেন, তৃণমূল এখন ক্ষমতায়৷ আমাদের আন্দোলনকে স্বীকৃতিও দিয়েছিল তৃণমূল৷ অথচ, সেই আন্দোলনের জন্যই আমাদের দোষী সাব্যস্ত করা করা হয়েছে৷ তৃণমূলকে নিয়ে আন্দোলন করার পর সেই ‘বন্ধু’ ছত্রধরের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে রাষ্ট্রদোহী মামলা দেওয়া ও পরে গ্রেপ্তারির ঘটনায় বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ তুল পারেন জনগণের কমিটির নেতা৷

২০০৯ সালে সেপ্টেম্বরে লালগড়ের বীরকাঁড়ে গ্রেফতার হন ছত্রধর৷ তাঁর বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলা দায়ের হয়৷ ৩৭টিতে জামিন পাওয়ার পর এবার ২০০৯ সালে কাটাপাহাড়ি বিস্ফোরণ মামলায় মুক্তি পান ছত্রধর৷ ২০০৮ সালে জঙ্গলমহলে জিন্দালদের ইস্পাত কারখানার উদ্বোধনে গিয়েছিলেন তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ ছিলেন কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান৷ ফেরার পথে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে বুদ্ধদেবের কনভয়ে মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে৷ হতাহত না হলেও গুরুতর আহত হন এক পুলিশকর্মী৷ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য-রাজনীতিতে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়৷ মাওবাদী যোগের কারণে সিআইডির হাতে গ্রেফতার হন ছত্রধর মাহাতো৷ অভিযোগ ওঠে, সেসময় মাওবাদী নেতা কিষেনজি ও তৃণমূলের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করতেন ছত্রধর৷ কিন্তু, বাম সরকারের পতন হলেও তৃণমূল সরকারের প্রথম আমলেও বন্দিদশা কাটেনি ছত্রধরের৷ সেই নিয়ে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ছত্রধর৷

রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, ঝাড়খণ্ডে বিজেপি সরকারের প্রভাবে ছত্রধর মুক্তি পাচ্ছিলেন না৷ কিন্তু, সরকারের পালাবদল পর ছবিটা বদলে যায়৷ যদিও, ছত্রধরকে নিয়ে নির্বাচনি প্রস্তুতি ছিল তৃণমূলের৷ কেননা, গত লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে বিজেপির প্রভাব শাসকের কপালে ফেলেছিল চিন্তা৷ সেই চিন্তা দূর করতে ভোটের কথা মাথায় রেখে ছত্রধর মাহাতো সঙ্গে ভিতরে ভিতরে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছিলেন শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব৷ পশ্চিমাঞ্চলে তৃণমূলের হারানো জমি পুনরুদ্ধারে ছত্রধর ছাড়া যে তৃণমূলের কোনও গতি নেই, তা আজ ফের প্রমাণ হয়ে গেল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ৷ যদিও, বাম আমলে গ্রেফতার হওয়ার পর তৃণমূলের দ্বিতীয় পর্বের শেষাংশে ছত্রধরের মুক্তি ঘিরেও কম বিতর্ক হয়নি৷ জেল থেকে মুক্তির পর সংবাদমাধ্যমে ছত্রধর জানিয়েছেন, আমি জঙ্গলমহলে ফিরে আবার নতুন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ তবে, নিজের হাতে গড়ে তোলা জনসাধারণের কমিটির সেই নেতাকে ভোটের মুখে তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে টেনে আনা বেশ তাৎপর্যন্ত পূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনীতিক মহল৷ তবে, তৃণমূলের ছত্রছায়ায় আসা ছত্রধরকে দিয়ে হারানো জমি পুনরুদ্ধারে আদৌ সম্ভব? যদিও, ২০০৯ সালে প্রেক্ষাপট, আন্দোলনের কৌশল ২০২১ সালেও কী সমান? শেষ দেব দেবে ২১-এর মে মাসের ভোটের বাক্স৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 − four =