নেতা ছাড়াই নিচুতলার কর্মীদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পুলিশ, অভিযান সামলাতে হিমশিম খেল পুলিশ

নেতা ছাড়াই নিচুতলার কর্মীদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পুলিশ, অভিযান সামলাতে হিমশিম খেল পুলিশ

নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কয়লা পাচার, গরু পাচার-কাণ্ড, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বহু দিন ধরেই বিরোধীরা এই সমস্ত বিষয় নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। সেই ইস্যুতেই পুজোর আগে গা-ঝাড়া দিয়ে মাঠে নামল বিজেপি। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার নবান্ন অভিযান করল গেরুয়া শিবির। মূলত দলের তিন শীর্ষ নেতা দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে নবান্ন অভিযানের প্রস্তুতি নেয় তারা। আর কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে তিন নেতার নেতৃত্বে কলকাতা এবং হাওড়ার তিন দিক থেকে মিছিল এগোনোর চেষ্টা করেছে নবান্নের দিকে। যথারীতি তাদের বাধা দিয়েছে পুলিশ। টিয়ার গ্যাস, জল কামানের পাশাপাশি দেদার লাঠিচার্জ করতে হয়েছে পুলিশকে। অন্যদিকে বিজেপি কর্মীদের একাংশকে পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়তে দেখা গিয়েছে। তবে এদিন নবান্ন অভিযান ঘিরে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে সাঁতরাগাছি। সেখানে তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয়। দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগে পর্যন্ত বিজেপি কর্মীদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে। বস্তুত সাঁতরাগাছির ঘটনাপ্রবাহের জন্যেই নবান্ন অভিযান সফল হয়েছে বলে বিজেপির নেতৃত্বের দাবি। তবে বিজেপি নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে যাই বলুন না কেন, সেখানে শীর্ষ নেতাদের ছাড়াই অভিযান অনেকাংশে ‘সফল’ করেছেন কর্মীরা।

আসলে নবান্ন অভিযানের মতো কর্মসূচির ক্ষেত্রে তীব্র বিশৃঙ্খলা, ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগের মতো ধুন্ধুমার ঘটনা না ঘটলে সেটিকে যেন সফল বলে মনে করা হয় না। বছরের পর বছর বিষয়টিকে রাজনৈতিক মহল সেভাবেই দেখে আসছে। যত বেশি গণ্ডগোল তত বেশি সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতি আর ক্যামেরার ফোকাস, এটাই যেন চেনা চিত্রনাট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক  দলগুলির জন্য। শুধুমাত্র প্রচুর লোক নিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিল করলে তা খবরের বাজারে ‘মাইলেজ’ পায় না। সেখানে চাই বিশেষ ‘ফ্লেভার’! আর সেই ‘ফ্লেভার’ এদিন পুরোমাত্রায় দেখা গেল সাঁতরাগাছিতে। এটাই যদি সাফল্যের মাপকাঠি হয় তবে নির্দ্বিধায় বলতে হবে সাঁতরাগাছিতে বিজেপি কর্মীরা যেভাবে পুলিশের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়েছেন তাতে তাঁরা অবশ্যই সফল। আর সেটা তাঁরা করে দেখিয়েছেন নেতাদের অনুপস্থিতিতেই।

এদিন নবান্ন অভিযান শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। মহিলা পুলিশকর্মীর সঙ্গে একদফা বচসার পর শুভেন্দু নিজেই পুলিশের গাড়িতে উঠে পড়েন। এরপর তাঁকে লালবাজার নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এরপর বেলা যত গড়িয়েছে ততই উত্তপ্ত হয়েছে সাঁতরাগাছির পরিবেশ। একটা সময় সাঁতরাগাছির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রণক্ষেত্র পরিস্থিতি তৈরি হয়। স্টেশনের ভেতরে ঢুকে পড়েন বহু বিজেপি কর্মী। সেখান থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে অনেককে ইট ছুড়তে দেখা গিয়েছে। কেউ তেড়ে গিয়েছেন লম্বা মোটা বাঁশ নিয়ে। তখন পুলিশ বিজেপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটাচ্ছে, সঙ্গে রয়েছে জলকামান। কিন্তু তাতেও দমানো যায়নি বিজেপি কর্মীদের। পাল্টা বিজেপি কর্মীরাও তাড়া করতে থাকে পুলিশকে। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে এই পরিস্থিতি। একটা সময় পুলিশ বাধ্য হয় ব্যারাকপুর থেকে অতিরিক্ত বাহিনী আনতে। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না।

এই ঘটনার বহু আগে দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ নবান্ন অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। যদিও তখন সুকান্ত মজুমদারকে রাস্তায় বসে অবস্থান বিক্ষোভ করে বলতে শোনা গিয়েছে দিলীপবাবু তাঁর মিছিলের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ সুকান্তবাবুদের কর্মসূচি তখনও শেষ হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই তাতে বিজেপি নেতৃত্বের সমন্বয় নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। কিন্তু এসব বিষয়কে আমল না দিয়ে সাঁতরাগাছিতে জমায়েত হওয়া বিজেপি কর্মীরা টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছেন। আর সেটাই চাইছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই দিনের শেষে দেখা গিয়েছে প্রতিটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সাঁতরাগাছির ঘটনা শিরোনামে এসেছে। আর সেটাকে যদি রাজনৈতিক পরিভাষায় বিজেপির সাফল্য বলতে হয়, তবে তার পুরো কৃতিত্ব কিন্তু দিতে হবে দলের নিচুতলার কর্মীদেরই। রীতিমতো ‘গেরিলা কায়দা’য় তাঁরা পুলিশকে যতটা পেরেছেন নাস্তানাবুদ করে গিয়েছেন। সবমিলিয়ে দিনের শেষে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছে সাঁতরাগাছিতে জমায়েত হওয়া কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − 4 =