কলকাতা : ২৮৩ বছরে কলকাতা এমন ঝড় দেখেনি। কিন্তু, ২০১১ সালে পরিবর্তনের সরকার দেখেছে। যারা, ছোট বড় সবকিছুই পরিবর্তনের দাবি করে এসেছে। সপ্তাহ খানেক আগে কলকাতা এবং দিল্লির আবহাওয়া দফতর থেকে ১০০ শতাংশ সঠিক তথ্য সম্বলিত খবর (ঝড়ের উৎপত্তি, অবস্থান, পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশস্থান, স্থলভাগে গতিবেগ, বীভৎসতা, ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা এবং সতর্কীকরণ) পাওয়া সত্ত্বেও কেন কলকাতাকে এই বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচান গেল না, সে প্রশ্ন উঠবেই।
ঘূর্ণিঝড় উমপুন দেখিয়ে দিয়েছে সি ই এস সি – বিদ্যুৎ পরিকাঠামো কতটা ঠুনক। তবে, রাজ্য সরকার এখন সি ই এস সি কেই ভিলেন বানিয়েছে। কে এম সি – এর প্রশাসক তথা রাজ্যের পুর এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম বলেছেন সি ই এস সি এর জন্যই কলকাতার মানুষ ভুগছে। পুরসভা জল, নিকাশি এবং রাস্তাঘাট দেখে। বিদ্যুৎ দেওয়া পুরসভার কাজ নয়। যথেষ্ট হয়েছে। এবার সি ই এস সি কে কাজ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, সিপিএমের আমলে কেন্দ্রীয় আইনে সি ই এস সি রয়েছে। এক সময়ের শাসক সিপিএমের আমলে 'গোয়াঙ্কাবাবু'রা সিইএসসি নিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সঙ্গে সিপিএমের কোনও সম্পর্ক ছিল না। আজ, এক্ষেত্রেও আলিপুর তার নিজের দায়িত্ব পালন করেছে। এবার … দোষ কাকে দেওয়া যায় …।
দোষ দেওয়া যায় সিইএসসি-কে। কে এম সি – প্রশাসক এবং শাসক দলের এক মুখপত্রকে টিভিতে সিইএসসি-কে কড়া কথা শোনা গেল। শাসকদলের অনেকের যুক্তি, সিইএসসি বাম আমলে তৈরি। আইন করা হয়েছে, কলকাতায় একই ব্যাবসা করতে পারবে। অবাক হতে হয়। 'পরিবর্তনের মাস্টারমশাই' এই সরকার কলকাতার প্রয়োজনে একটি আইন পরিবর্তন করতে পারেনি। সত্যি কথা বলতে, সিপিএম বা মমতা দুইপক্ষই একটু অস্বস্তিতে থাকবে। সিইএসসি কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েনকা বেশ জনপ্রিয় মানুষ। একদা বামেদের কাছাকাছি ছিলেন। ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রিয়পাত্র। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহ পান। আর বিশেষ কারণের প্রয়োজন নেই। তবে শুনলাম দিদিও নাকি ভিক্টরিয়া হাউসে গিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, কাজের লোক নেই কেন? এত লোক কেন একসাথে বাইরে? যা মুখ্যমন্ত্রীর চোখে পড়েছে, তা আম জনতার চোখে পড়তে বাধ্য।
'দ্য টেলিগ্রাফ' পত্রিকায় সিইএসসি এক পদস্থ অফিসার জানিয়েছেন, ১৪০ টি প্রশিক্ষিত দল বিদ্যুৎ পরিষেবা মেরামতির কাজে রয়েছে। কিন্তু অর্ধেকই কাজে লাগতে পেরেছে। কারণ, লকডাউন চলাকালীন তারা অনেকেই তাদের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, বিহারে আটকে পড়েছে। প্রশ্ন এসে যায়, লকডাউন ঘোষণার আগে ৫০ শতাংশ প্রশিক্ষিত কর্মীরা রাজ্যের বাইরে কেন ছিলেন? দিনের পর দিন, সিইএসসি নিজের কর্মীসংখ্যা কম করেছে কেন? ওই অফিসারের যুক্তি, সিইএসসি ভারতের অন্যতম সেরা। শেষ পাঁচ বছরে বণ্টনেই ১০ হাজার কোটি খরচ করেছে সংস্থা। নতুন ট্রান্সফরমার, নতুন কেবল, লোডশেডিং নেই। কিন্তু, বিপর্যয় মোকাবিলায় কর্মী সংখ্যা বাড়ান যেত না? উত্তর, আরও লোক লাগান যেতেই পারে। কিন্তু, বিদ্যুতের দাম তাতে বাড়বে। গ্রাহকদের বেশি টাকা দিতে হবে। প্রশ্ন এসে যায়, সিইএসসি – কে তাহলে আপনি বিদ্যুতের জন্য টাকা দেন। পরিষেবার জন্য নয়! আপনার ইলেক্ট্রিক বিল শুধুই বিদ্যুতের দাম – পরিষেবা নিজের নিজের ?
সি এ এস সি দাবি করেছে, তাদের কাছে গাছ কাটার পরিকাঠামো নেই। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে থেকে যারা বিদ্যুৎ ব্যাবসা করে তারা কি জানে না, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের একটি ভৌগলিক অভিশাপ রয়েছে। ছোট-বড় ঘূর্ণীঝড় মানুষকে সহজেই আশ্রয়হীন করে চলে যায়। বঙ্গপসাগরের উপর নিম্মচাপ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে পালা করে সফর করে। ফল – বিপর্যস্থ জনজীবন। তবে উমপুন ছিল এদের থেকে একটু আলাদা। যার গতিবেগ ঘন্টায় ১৫৫ কিলোমিটার বা তার বেশি, সে নিজেকে আলাদাভাবে মেলে ধরবেই। আমার বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেনা ডাকতে কিঞ্চিৎ দেরি করেছে, কিন্তু সেনা ডেকে ভুল করেনি। ভবিষ্যতে, সাজেশনের কমন প্রশ্ন নাও আসতে পারে। এ খুব সহজ পরীক্ষা নয়। কিন্তু সিন্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় উচিত নয়।