নয়াদিল্লি: সদ্য বিজেপিতে নাম লেখিয়েছেন কলকাতার প্রাপ্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ তৃণমূল ছেড়ে নাম লিখিয়েছেন গেরুয়া শিবিরে৷ পারিবারিক কারণে দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় নবান্নে দমকল বিভাগের অনুষ্ঠানের মঞ্চ ছেড়ে পদত্যাগ করেন শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ গত ২০ নভেম্বর সাংবাদিক বৈঠক করে দমকল মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন তৃণমূলের কানন৷ পরে মেয়র পদও ছেড়ে দেন৷ কিন্তু, মন্ত্রী হিসাবে পদত্যাগের ৯ মাস পর দমকল মন্ত্রী হিসাবে এখনও জ্বলজ্বল করছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নাম৷ সরকারি ওয়েবসাইট বলছে, শোভন এখনও মন্ত্রী৷
রাজ্য দমকল দপ্তরের সরকারি ওয়েবসাইট wbfes.gov.in-এর হোমপেজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির নিচে বর্তমান দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু নাম থাকলেও দপ্তরের কর্তাদের যোগাযোগ তালিকায় এখনও উজ্জ্বল শোভনবাবুর নাম৷ সেখানে সাফ উল্লেখ করা হয়েছে, দমকল মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, মন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ৯ মাস পরও কেন মোছা হল না প্রাক্তন দমকল মন্ত্রীর নাম৷ সরাকরি ওয়েবসাইটে কেন সাধারণ জনতাকে বিভ্রান্তিতে ফেলা হচ্ছে? নাকি ওয়েবসাইট থাকলেও তা দেখভাল করার কোনও লোক নেই৷ যদিও বিষয়টি নজরের আসার পর ঘুম ভেঙেছে দপ্তরের৷ (https://wbfes.gov.in/wbfes/contact-of-honble-mic-and-other-sr-officers)-এই লিঙ্কে থাকা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নাম মুছতে শুরু হয়েছে তৎপরতা৷
অন্যদিকে, নতুন দলে যোগ দিতে না দিতেই নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার আর্জি তৃণমূলের কাননের৷ নিরাপত্তা চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি শোভনের৷
শোভনবাবুর দাবি, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণে তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন৷ হতে পারে হামলা৷ এর আগেও তিনি মাধ্যরাতে হামলার শিকির হয়েছিলেন বলেও করা হয় উল্লেখ৷ ফলে, তিনি চান, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা৷ যদিও, মেয়র-মন্ত্রী থাকার সময় নিরাপত্তা পেতেন তিনি৷ মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর তুলে নেওয়া হয় তাঁর নিরাপত্তা৷
বুধবার বিজেপিতে যোগ দিয়ে শোভন বলেন, ‘‘আজ বিরোধীদের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না৷ নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে৷ কেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের প্রার্থী দিতে দেওয়া হল না? আমি এই নিয়ে দলে প্রশ্ন করেছিলাম৷ আর তাতেই আমাকে কোণঠাসা করে দেওয়া হল৷’’
এদিন শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে রত্না চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আজ শোভনবাবু নৈতিকতার কথা বলছেন৷ কিন্তু, নিজে দুই সন্তানকে ফেলে চলে গিয়েছেন৷ তার পরও শোভনের মুখে নৈতিকতার কথা মানায় না৷’’ রত্নাদেবী আরও বলেন, ‘‘শোভনকে বিজেপি নিয়েছে, তা মেনে নেওয়া যেতে পারে৷ কিন্তু,বৈশাখী? ও কবে নেত্রী ছিল জানি না৷ ও আমার ঘর ভেঙেছে৷ এই কলকাতার আরও বহু ঘর ভেঙেছে৷ আজ বিজেপি বৈশাখীকে দলে নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য হারিয়েছে৷ আর মুকুল রায় কীভাবে ওকে দলে নিল৷’’ বলেন, ‘‘যতই দল পরিবর্তন করো না কেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই তোমাকে ফিরতে হবে৷’’
ইতিমধ্যেই তৃণমূলের প্রায় সমস্ত পদ থেকেই এবার সরে দাঁড়িয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ মঙ্গলবার বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে ইস্তফা দেন শোভন৷ বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে খবর সূত্রের৷ আপাতত শুধু বিধায়ক ও কাউন্সিলর পদে রয়েছেন শোভনবাবু৷ শোভনের দলবদল নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই জল্পনা ছিল৷ শোভনকে ফেরাতে শেষ চেষ্টাও করেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ কিন্তু, পার্থর প্রস্তাব ফিরিয়ে তৃণমূলের কানন এখন পদ্মে৷