কলকাতা: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এবার আইনে পরিণত হয়েছে৷ কিন্তু রাজ্যে এই আইন কার্যকর হতে দেবেন না বলেই অবস্থানে অনড় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ইতিমধ্যেই শুক্রবার এনআরসি আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র৷ আইনের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ তৃণমূলের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুঁশিয়ারি দিয়ে সংবাদমাধ্যমে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম পাকিস্তান ভেবে থাকেন, বা পশ্চিম বাংলাদেশ ভেবে থাকেন, তাহলে ভুল করছেন৷ এটা সারা দেশের জন্য আইন হয়েছে৷ সংসদে পাস হয়েছে৷ রাষ্ট্রপতি সই করেছেন৷ অর্থাৎ সারাদেশে এই আইন কার্যকর হবে৷ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের একটা অভ্যাস আছে সবকিছু বিরোধিতা করার কেন্দ্রের৷ আর তারপর আবার পিছিয়ে যান৷ বড় বড় কথা বলে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখান৷ সেই ভয়টা কেটে গিয়েছে৷ দুই আড়াই কোটি উদ্বাস্তু যারা কয়েক বছর ধরে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখছিলেন, আমরা তাঁদের স্বপ্ন সফল করেছি৷ যেমন ভাবে অসমে বিরোধিতা চলছে, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক তেমনভাবে বিরোধিতা করছেন৷ যে আইন হয়েছে, তাতে প্রত্যেকটি নাগরিকের উদ্বাস্তু হিন্দু পরিবারকে বা অন্য পাঁচটি ধর্মের লোকদের প্রত্যেকে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার আছে৷ বিজেপি সবাইকে সহযোগিতা করবে৷ যাতে কেউ না নাগরিকত্বের বাইরে থেকে না যান৷ সরকারি কর্মচারীরা যাতে গন্ডগোল করতে না পারে, সেজন্য তাঁদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ফরম ফিলাপ করিয়ে বিজেপি কর্মীরা তাঁদের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য সহযোগিতা করবে৷’’
বাংলায় কোনও ভাবেই চালু হবে না গরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি৷ সাফ ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রাস্তায় নেমে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় প্রতিবাদ জানাবে দল৷ কর্মসূচি অনুযায়ী রবিবার ছুটির দিন প্রতি জেলায় জেলায় প্রতিবাদ মিছিল করবেন দলের কর্মী ও সদস্যরা৷ সোমবার বেলা ১ টায় আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে থেকে জোড়াসাঁকো পর্যন্ত এনআরসি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করবে তৃণমূল৷ মঙ্গলবার প্রতিবাদ মিছিল হবে যাদবপুর থেকে৷ এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৭ ডিসেম্বরের দিল্লি সফর বাতিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
অন্যদিকে প্রথম থেকেই এই বিলের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন জেডিইউ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রশান্ত কিশোর৷ শুক্রবার ট্যুইটে তিনি লিখেছেন, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে৷ এখন বিচারবিভাগ ছাড়া ভারতের আত্মাকে রক্ষা করার দায়িত্ব ১৬ জন অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর উপর৷ কারণ সেই রাজ্যগুলিকেও নিজেদের জায়গায় এই আইন কার্যকরী করতে হবে৷ সিএবি ও এন আর সি-কে না করে দিয়েছেন তিন মুখ্যমন্ত্রী৷ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করার সময় এসেছে অন্যান্যদেরও৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই সু্রেই এবার নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যকে জোটবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানালেন প্রশান্ত কিশোর৷ এনআরসি আইনের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ করে তুলতে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ছত্রিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা ও পাঞ্জাবেও৷