তপন মল্লিক চৌধুরী : আগামী ২৮ অক্টোবরবিহারে বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার রায়দান। নির্বাচনের আগে উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ঘটনা রীতিমতো বিহারের দলিত সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। দলিত অধ্যুষিত বিহারের অধিকাংশ জায়গায় হাথরসের ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে। রাজনীতিকদের মতে, বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমীকরণপাল্টাতে পারে। ইতিমধ্যে হাথরস বিহারের বিধানসভা নির্বাচনেপ্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
হাথরসে দলিত সম্প্রদায়ের মেয়ের ওপর যে ঘটনা ঘটেছে, তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ইএ শুরু করেছে বিহারের দলিত অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে। ফলে বিজেপি জোটের কাছে এই ঘটনা ক্রমেই অশনি সংকেত হয়ে উঠছে। গোটা ঘটনার দায় উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতাসীন বিজেপি পরিচালিত যোগী আদিত্যনাথ সরকারের কাঁধেই বর্তেছে।বিশেষ করে হাথরসে নির্যাতিতার মৃত্যুর পর যেভাবে পুলিশ প্রশাসন বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং যেভাবে বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধিদের আটকানোর চেষ্টা করেছেতা নিয়ে দেশজুড়ে ক্ষোভ বাড়ছে। তার ওপর সংবাদমাধ্যমকে যেভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে বিশেষ করে মহিলা সাংবাদিকদের প্রতি পুলিশের যে ব্যবহার তার নিন্দায় সরব হয়েছে দেশবাসী। ফলে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের ওপর যেমন চাপ বেড়েছে, তেমনি ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বিজেপিরও।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বিহারের বিজেপি শিবিররাজনৈতিকভাবে ভাল অবস্থানেই ছিল। কিন্তু আচমকা ঘটে যাওয়া হাথরসের ঘটনা বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে অনেকটাই ধাক্কা দেবে। বিরোধী শিবির ইতিমধ্যে হাথরসের ঘটনা সামনে তুলে ধরে বিজেপিকে তুলোধুনো করতে শুরু করেছে। অন্যদিকেবিহারের দলিত সম্প্রদায়ের মানুষরা হাথরসের ঘটনাকে নিজেদের জীবনের প্রতিফলন হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন। ফলে বিজেপির পক্ষে বিহারের দলিত ভোটারদের নিজেদের দিকে টেনে আনা বেশ কঠিন বলেই মনে করছ্র রাজনীতিকরা।
পাশাপাশি হাথরসের ঘটনা বঙ্গ বিজেপি শিবিরকেও বেশ বিপাকে ফেলে দিয়েছে। এ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অভিযোগের হাতিয়ার করে আগামী বিধানসভা ভোটে সুফল কুড়োনোর ছক দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়রা বেশ কিছুদিন ধরেই কষছিলেন। কিন্তু হাথরসের নৃশংস ঘটনার পর রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কারও মুখেই কোনও কথা ফোটে নি।যোগী সরকারের পক্ষে সওয়াল করার মতো যুক্তিও যে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব খাড়া করতে পারেন নিসেকথা বলাই বাহুল্য।
তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের যুক্তি, ‘ওখানে এসপি, ডিএম, ওসি, আইসি সবাইকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অভিযুক্তরা ধরাও পড়ে গিয়েছে। কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে’। এ যুক্তি যে ধোপে টেঁকে না তাবুঝেই এ রাজ্যেরপ্রসঙ্গ টেনে এনে দিলীপের বক্তব্য, ‘এখানে পাড়ায় পাড়ায় খুন হচ্ছে। ধর্ষণ হচ্ছে। মহিলাদের বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা নেই। সরকার বলছে, দুষ্টু ছেলেদের কাজ!
বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পলও পাঁচ জন পুলিশ আধিকারিককে সাসপেন্ড করার জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা নিয়েও সরব হয়েছেন বিজেপির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তার বক্তব্য, ‘উত্তরপ্রদেশে অনেক পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে সক্রিয় হয়ে বিচার প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত করতে বলেছেন। নির্মম ঘটনা। নিন্দার ভাষা নেই। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলব, উত্তরপ্রদেশ নিয়ে মিছিল করছেন করুন, বাংলায় ধর্ষণের ঘটনা নিয়েও পথে নামুন। তখন চুপ থাকেন কেন!’
প্রকাশ্যে বিজেপি যাই বলুক না কেন, রাজ্য বিজেপির বেশ কয়েক জন শীর্ষনেতা স্বীকার করছেন, বিরোধীরা ঘরে বসে হাতে অস্ত্র পেয়ে গেল। এর পর বিজেপি যখনই এ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, তখনই তারা উত্তরপ্রদেশের উদাহরণ টানবে। মোটকথা বিজেপি এখন যথেষ্ট বিপাকে।সম্প্রতি বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুলে ধরে ‘উমা’ নামে একটি প্রচার অভিযান শুরু করেছিল। কিন্তু হাথরসের ঘটনা তাতে কার্যত জল ঢেলে দিল।
এ রাজ্যে দলিত ভোটব্যাঙ্ক বলে বাস্তবিকই কিছু নেই। সেক্ষেত্রে আলাদা করে তাদের জন্য কোনও উদ্যোগ বা ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার পড়েনি কারও। তবে হাথরসের ঘটনায় গোটা দেশ যেভাবে ধিক্কার দিচ্ছে তা তো আসলে বিজেপির বিরুদ্ধেই।সেই বিরোধিতা বিজেপি ভোটকে কিছুটা হলেও ড্যামেজ করল।