রুদ্ধশ্বাস নাটকের সমাপতন, শেষ হাসি হাসল বিজেপিই

রুদ্ধশ্বাস নাটকের সমাপতন, শেষ হাসি হাসল বিজেপিই

বীরেন ভট্টাতার্য: পড়তে পড়তে রহস্য, যে রহস্যের যবনিকা পড়ল বুধবার ভোরে। টানটান গণনা শেষ বিহারে ফুটল পদ্মফুল। ৭৪টি আসন পেয়ে বিহারে নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখে এনডিএ সরকারের বড় শরিক হল তারা। নীতীশ কুমাররের ঝুলিতে পড়ল ৪৩টি আসন। অন্যদিকে, সকাল থেকে বারবার এগিয়ে থেকেও শেষরক্ষা করতে পারলেন না আরজেডি নেতা তথা লালুপুত্র তেজস্বী যাদব। তবে ৭৫টি আসন পেয়ে বিহারের বৃহত্তম দল হিসবে উঠে এল তারা। 

আরও পড়ুন- মোদী ঝড়ে বিহারের মসনদে এনডিএ জোট,  মহাজোটের রথ থামল ১১০-এ

মঙ্গলবার সকালে ইভিএম খোলার পর প্রথমদিকেই এগিয়ে ছিল আরজেডি নেতৃত্বাধীন মহাগটবন্ধন। পরে দিনভর এনডিএ এগিয়ে থাকলেও সূর্য অস্ত যেতেই ফের এগিয়ে থাকে লালু প্রসাদ যাদব ও তেজস্বী যাদবের দল আরজেডি। তবে সারাদিন বা রাতে আর কখনই এগিয়ে যেতে পারেনি মহাগটবন্ধন। করোনা ভাইরাস এবং স্বাস্থ্যবিধির কারণে এবার গণনা কেন্দ্রের সংখ্যা অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়, প্রায় অর্ধেক করে দেওয়া হয় গণনা কেন্দ্রের সংখ্যা। ফলে ফলাফল সম্পূর্ণ প্রকাশিত হতে যে মধ্যরাত হয়ে যাবে, তেমনই জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। রাত যতই বাড়তে থাকে, বিহারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে সারা দেশের। প্রায় ভোররাতে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের সম্পূর্ণ ফলাফল প্রকাশিত হয় এবং শেষহাসি হাসে এনডিএ তথা বিজেপি। এর আগে বিহারে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোটে সরকার গড়লেও, সেখানে জেডিইউ ছিল প্রধান দল, বিজেপি ছিল ছোটো শরিক। তবে এবারের নির্বাচনে সম্পূর্ণ উল্টো ছবি। এনডিএ -এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট গেল বিজেপির ঝুলিতেই। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা এবং বিকাশশীল ইনসান পার্টি চারটি করে আসনে জয়লাভ করে। 

এবারের বিধানসভা নির্বাচন ফলাফল থেকে গণনাচিত্র সবদিক থেকেই সম্পূর্ণ আলাদা। করোনার পর এই প্রথম কোনও রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এবারের নির্বাচনে এনডিএ জয়লাভ করলেও ভাল ফল করেছে মহাগটবন্ধন এবং তার বড় শরিক আরজেডি। বিকেলের পর থেকে অনেকটা সময় এগিয়ে থেকে ৭৫ আসনে শেষ করে তারা। ৭০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও গতবারের থেকে মাত্র ৮টি আসনবৃদ্ধিতে সক্ষম হয়েছে কংগ্রেস। ১১ থেকে আসন বেড়ে শতাব্দী প্রাচীন দলটি শেষ করেছে মাত্র ১৯টিতে। তবে বিরোধীজোটের দলগুলির মধ্যে নজরকাড়া ফল করেছে বামেরা। তিনটি বামদল মোট ১৬টি আসনে জয়লাভে সক্ষম হয়েছে। তারমধ্যে ১২টি আসনে জয়লাভ করেছে সিপিআই(এম-এল)।

আরও পড়ুন- ‘উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছে বিহারের মানুষ’ টুইটে শুভেচ্ছা মোদীর

মঙ্গলবার রাতেই গণনা চলাকালীনই জয়ের আভাস চলে আসে দিল্লিতে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুইজনেই “উন্নয়নের আদর্শকে সমর্থন করার জন্য” বিহারবাসীকে ধন্যবাদ জানান। শেষ দফার প্রচার চলাকালীন বিহারের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জানিয়ে দেন, এটাই তাঁর শেষ বিধানসভা নির্বাচন। ফলে এবারেই তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর কূর্সিতে বসা শেষ। ফলে সেক্ষ্ত্রে জয়লাভ করতে মরিয়া ছিল এনডিএ। এদিকে, ভোটের চূড়ান্ত ফলাফলে এনডিএ জোটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে বিজেপি। ফলে নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন কিনা, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তারাই। নির্বাচন চলাকালীন নীতীশ কুমারকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে ভোটে লড়েছিল এনডিএ। ফলে এখন নীতীশ কুমারকে এখন মুখ্যমন্ত্রী না করা হলে, পরে হয়তো মহারাষ্ট্রের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সে সংঘাতের আবহ অবশ্য বিজেপি এড়িয়ে চলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − 10 =