মুখ্যমন্ত্রী মুখ নেই! মোদীর হাওয়ায় একুশের নির্বাচন জিততে পারবে বিজেপি?

মুখ্যমন্ত্রী মুখ নেই! মোদীর হাওয়ায় একুশের নির্বাচন জিততে পারবে বিজেপি?

দেবময় ঘোষ:  এটা ঠিক যে অনেক বিজেপি নেতা বলে বেড়াচ্ছেন, একুশে তাদের একমাত্ৰ মুখ নরেন্দ্র মোদি। বাংলার জনতা মোদিকে দেখেই ইভিএম-এ পদ্ম ফুল চিহ্নের পাশের বোতামে চাপ দেবে। কিন্তু, স্বাভাবিক প্রশ্ন, মোদি কী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হবেন, নাকি এখানে ভোটে দাঁড়াবেন? যদি উত্তর না হয়, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে তার জায়গায় কে বসবেন ক্ষমতার চেয়ারে? বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন? এই উত্তর পরিষ্কার ভাবে না দিতে পারলে বাংলায় বিজেপির সুযোগ সীমিত থেকে যাবে। “ভোটে জিতব, তারপর দল দেখবে, কাকে মুখ্যমন্ত্রী করা যায় … ।” – এই যুক্তিতে বাংলার জনতা কতটা প্রভাবিত হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

বাংলার রাজনীতিতে মুখ কেন এত প্রাসঙ্গিক ? প্রশ্ন উঠতে পারে। উত্তরটি শুধু বাংলার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। কারণ, মুখ বিহীন ভারতীয় রাজনীতি সম্ভব নয়। কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শের গতিধারা হয়ে ভারতীয় জনতা তথা ভোটার সরকার নির্বাচিত করেছে, তা আংশিক ভাবে সত্য। কোনও উচ্চ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপর ভরসা করেই ভোটবাক্সে সুনামি উঠেছে, তা-ই বরং বৃহৎ সত্য। ইন্দিরা থেকে নরেন্দ্র মোদি – এই ঐতিহ্য চলছেই। বাংলার রাজনীতি তার থেকে পৃথক নয়। ১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সব থেকে বড় পরিবর্তন আসে। বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেন জ্যোতি বসু। বামফ্রন্ট যতই যুক্তি দিক যে, বঙ্গবাসী কমিউনিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী হয়েই বারবার বাম সরকারকে ফিরিয়ে এনেছে এবং এতে কোনও ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নেই – তা অনেকাংশেই বাস্তব চিত্র নয়। জ্যোতিবাবুর দিকে তাকিয়ে মানুষ বামফ্রন্টকে ভোট দিয়েছে। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছাড়ার ১০ বছরের মধ্যেই বামফ্রন্টকে রাইটার্স ছাড়তে হয়েছে।

সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে গেলে এক উজ্জ্বল, উচ্চ গুনসম্পন্ন বাঙালি মুখ প্রয়োজন, তা দিল্লিতে বসে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ-জগৎ প্রকাশ নাড্ডা – সহজেই অনুমান করতে পারেন। ২০১৬ সালে অসম, ২০১৭ তে উত্তরপ্রদেশ এবং ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় নরেন্দ্র মোদির মুখ এবং ম্যাজিকের সাহায্যেই বাজিমাত করেছে বিজেপি। কিন্তু, আসল ম্যাজিক শুরু হয় তার পরেই। অসমে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনওয়াল একসময় ‘অসম গণ পরিষদের’ নেতা ছিলেন। যদিও তিনি আগে থেকেই ঘোষিত মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী ছিলেন। তবে বিজেপি ভোটে জিতেছিল মোদি ‘ইমেজ’কে কাজে লাগিয়েই। উত্তর প্রদেশের ওই সাধু যোগী মুখ্যমন্ত্রী হবেন অনেকেই ভাবেননি। যে রাজ্যে জনপ্রিয় মুখ পাওয়া না যায়, সেখানে মোদির মুখোশ পরেই নির্বাচনে লড়াই করতে পছন্দ করে বিজেপি। সফলও হয়। কিন্তু, এও ঠিক যে সাম্প্রতিক অতীতে অনেক রাজ্যেই ক্ষমতা হারিয়েছে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ে জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রীকে ধরে নির্বাচন সংগঠিত করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। ওই রাজগুলিতে প্রশাসনিক ক্ষমতা পুনরায় চেয়ার ফরিয়ে দেয়নি। সেক্ষেত্রে মোদি ম্যাজিকের দ্বারস্থ হলে রাজ্য বেঁচে যেত, মনে করেছেন অনেকেই। মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটের ২০১৭ সালের নির্বাচনে জোর বাঁচা বেঁচে গিয়েছেন বিজয় রূপানি। অনেকেই বলছেন মোদীজিই ত্রাতা হিসাবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গে কী হবে? বর্তমানে বাংলার শাসকদলের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হ্যা, ভুল লিখিনি। বাংলায় বাম বিরোধিতার প্রধান মুখ ছিলেন মমতা। প্রায় এক দশক বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে দেন শুধুমাত্র মমতার কথা ভেবেই। তৃণমূলের তাবড় নেতা অস্বীকার করার দুঃসাহস দেখবেন না। আর তাই জন্যই হয়ত, আজ একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন মাঝে মধ্যেই উঠে আসে, তৃণমূলে মমতার পর কে? হয়ত নিশ্চয়ই কেউ আছেন। তাকে সন্তর্পনে তৈরি করে রাখা হচ্ছে। হয়ত আমার আপনার নজরে বাইরে তিনি তৈরি আছেন। বা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু, একথা অস্বীকার করা যায় না, সেই ব্যক্তিত্বকে মমতার ছায়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। মমতার ছায়া’ই তার সব থেকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে মমতার বিরুদ্ধে এক শক্ত রাজনৈতিক মুখের প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − eleven =