বিহার নির্বাচন: ভোটের প্রচারে অনেকটাই ব্যাকফুটে সুশান্ত! জুটবে রাজপুত আর্শীবাদ

বিহার নির্বাচন: ভোটের প্রচারে অনেকটাই ব্যাকফুটে সুশান্ত! জুটবে রাজপুত আর্শীবাদ

 

তপন মল্লিক চৌধুরী :   বিহার বিধানসভার ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে থেকেই বিজেপির প্রচারে উঠে এসেছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের মুখ। সুশান্ত কাণ্ডে যে রাজনীতির রং লাগবে তা আগেই অনুমান করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ভোটের মুখে বিজেপির প্রচারে সুশান্তের ছবি দিয়ে স্টিকার ও মাস্ক দেখা যায় বিহারের বহু জায়গায়। বিজেপির সাংস্কৃতিক সেল কলা সংস্কৃতি মঞ্চের স্টিকারে লেখা-জাস্টিস ফর সুশান্ত, না ভুলেঙ্গে, না ভুলনে দেঙ্গে। তাঁরা এনিয়ে মিছিল করেছেন। অনলাইনেও প্রচার চালিয়েছেন। যদিও সুশান্ত-এর মৃত্যু তাদের নির্বাচনী ইস্যু নয় বলে দাবি করেছে বিজেপি। পাটনার রাজীবনগর চকের নাম বদলে সুশান্ত সিং চক করারও দাবি উঠেছে। উল্লেখ্য, বিহার সরকার সুশান্তের মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের প্রস্তাবও দিয়েছিল।

বরাবর অরাজনৈতিক ব্যক্তিবলিউড এই অভিনেতাবিহারের সন্তান। সে দিক থেকে অভিনেতার মৃত্যুর বিচার, দোষীদের কঠোর শাস্তি চাওয়া সবাভাবিক। কিন্তু কে আগে সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন, বিহারের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, লালু, তেজস্বী যাদবথেকে নীতিশ কুমার, বিজেপি থেকে রামবিলাস, তাঁর পুত্র চিরাগ পাসোয়ান প্রত্যেকের মধ্যেই প্রতিযোগিতা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে নানা ধরণের হিসাব। বিহারের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশ মানুষ রাজপুত সম্প্রদায়ের। কয়েকলক্ষ মানুষ তথাকথিত উচ্চবর্ণের।এই বর্ণের মানুষেরা আরও কয়েক শতাংশ মানুষের ভোট কোনদিকে যাবে সেটাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। পাশাপাশি তাঁরানীতিশ কুমারের জেডিইউএবং বিজেপির সঙ্গেই বেশি থাকেন। শুধু তাই না, বিহার বিধানসভার মোট ২৪৩ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে প্রায় ৪০টি বিধানসভা আসন রয়েছে যেগুলি কোনদিকে যাবে, অর্থাৎ কে জিতবেন সেটাও অনেকাংশেই নির্ভর করে, রাজপুতদের ভোটেই। অর্থাৎ কেন্দ্রগুলিতে রাজপুত ভোট যেদিকে যাবে তিনিই জিতবেন এই সম্ভাবনা রয়েই যায়।

বিহারের বর্তমান সমাজে জাত-পাত ব্যবস্থা সেভাবে না থাকলেও, বিহারের মতো রাজ্যের নির্বাচনে জাত-পাত সম্প্রদাযয়ের রাজনীতিপ্রায় প্রতিবারই ভোটের ফলাফলের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পেরেছে। ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি, জেডিইউ-এর মহাগাঁটবন্ধনে লড়েছিলেন ১২ জন।৩০ টি আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন রাজপুত সম্প্রদায় থেকে।রাজপুত সম্প্রদায় থেকে মোট ১৯ জন জিতেছিলেন, বাকি ২৪ জন সংখ্যালঘু, ৩৮ জন দলিত সম্প্রদায়ের, ৬৮ জন যাদব সম্প্রদায়ের বাকি অন্যান্য।

বিহারের বিজেপি সভাপতি সঞ্জয় জয়সওয়াল বক্তব্য, ‘সুশান্ত সিং রাজপুতকে নিয়ে রাজনীতির কোনও প্রশ্নই নেই। তিনি বিহারের সন্তান, সত্যিটা প্রকাশ হোক। তাঁর পরিবারও বিচার চাইছেন এর মধ্যে তো কোনও ভুল নেই। অন্যদিকে লালু প্রসাদের দলের নেতা, তথা প্রাক্তন মন্ত্রী জে.পি যাদব সুশান্ত কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের জন্যপ্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। বিজেপির সংস্কৃতি বিষয়ক শাখার কার্যকর্তা বরুণ সিং বলছেন, তিনিই প্রথম চিঠি লেখেন।

বিহারের নির্বাচনে সুশান্ত সিং প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, মূলত বিহারের শহুরে এলাকা, পাটনাও তারআশপাশের একটা অঞ্চল এবং পূর্ণিয়া জেলায় সুশান্তের আদি বাড়ি,যেকারণে, সুশান্তের ঘটনা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতেই পারে। কিন্তু তাঁরা এ কথাওবলছেন, যে মানুষটি আজীবন রাজনীতি আর জাত-পাতনিয়ে আদপেইভাবলেন না, এসবে বিশ্বাসও করতেন না, সেই মানুষের মৃত্যুর পরের নির্বাচনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে এসবই যদি ‘ইস্যু’ হয়, তাহলে সেতা বেশ দৃষ্টিকটূ!

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর ভোটের দামামা পুরোদমে বেজে গিয়েছে। নির্বাচনকে পাখির চোখ করে আদা জল খেয়ে নেমে পড়েছে সব রাজনৈতিক দলগুলি। সব দলেরই নির্বাচনের রণকৌশল ঠিক করতে তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছিল আগেই। নির্বাচনের আগে একগাদা প্রতিশ্রুতি ভোটারদের কান পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া সব দলেরই একটা প্রধান লক্ষ্য। ঢাক পিটিয়ে সেই কাজে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে সব রাজনৈতিক দলগুলি। সেই আবহেই সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুরঘটনা একটি বড় অ্যাজেন্ডা হয়ে দাঁড়িবে সেটাই ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনী নির্ঘন্ট ঘোষণা হওয়ার পরই সুশান্তের মৃত্যুর ঘটনা অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে।

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পুরোদমে প্রচার শুরু করে দিয়েছে আরজেডি-জেডিইউ। বসে নেই প্রধান বিরোধী পক্ষ রাষ্ট্রীয় জনতা দলও। তবে দু’দলেরই পাখির চোখ বেকার যুব সম্প্রদায়। তাঁদের ভোটেই বাজিমাত করতে চাইছেন দুই দলের নেতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *