কলকাতা: বিজেপির ভার্চুয়াল জনসভা থেকে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুললেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা৷ একসময় দেশকে দিশা দেখাত বাংলা, আজ শিক্ষায় রাজনীতি করছে তৃণমূল, ভার্চুয়াল সবথেকে এমনই অভিযোগ বিজেপির সভাপতির৷ বাংলার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চাইছে বিজেপি, পাল্টা খোঁচা দিয়েছেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন উপলক্ষে আজ ভার্চুয়াল জনসভা করে বঙ্গ বিজেপি৷ দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল জনসভায় অংশ নেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা৷ ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে বাংলা শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সরব হন তিনি৷ এক সময় বাংলায় শিক্ষার উৎকর্ষ সবাইকে পথ দেখা তো৷ এখন বাংলায় শাসক দলের সঙ্গে নান না থাকলে যথাযথভাবে শিক্ষার সুযোগ পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন নাড্ডা৷ বিজেপির সভাপতির মন্তব্যের পাল্টা দিতে ছাড়েননি তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ বিজেপির বিরুদ্ধেও তুলেছেন একগুচ্ছ অভিযোগ৷
দিল্লি থেকে ভার্চুয়াল জনসভায় অংশ নিয়ে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা বলেন, ‘‘আগে বাংলার সম্বন্ধে বলা হতো, আজ বাংলা যেটা ভাবে, কাল তা করে ভারত৷ এখান থেকে প্রচুর মনীষীদের জন্ম হয়েছে৷ দেশকে সৃষ্টি করেছেন৷ বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এই বাংলার মাটিতেই জন্ম গ্রহণ করেছেন৷ বাংলার মনীষীদের কৃষ্টি, গোটা দেশকে অনুপ্রাণিত করেছে৷ নেতৃত্ব দিয়েছে৷ এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকার জায়গা নেই৷ কিন্তু আজ পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে৷ আমি যখন শিক্ষার কথা ভাবি, তখন মন খুব খারাপ লাগে৷ বাংলায় শিক্ষার নিচে পৌঁছে গিয়েছে৷ বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থায় রাজনীতিকরণ হয়েছে৷ আজ বাংলার কী অবস্থা হয়ে গিয়েছে, পার্টিতে ভোট দেওয়ার পর বিবেচনা করা হবে আপনি শিক্ষার সুযোগ পাবেন কি না৷ নিচুস্তর পর্যন্ত শিক্ষায় রাজনীতিকরণ পৌঁছে গিয়েছে৷ সমস্ত কিছুতেই এখন রাজনীতি করা হচ্ছে৷ এটা বাংলার জন্য খুবই নিন্দার বিষয়৷ আর আমাদের জন্য সংকল্প, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের শিক্ষাকে যে উঁচু স্তরে নিয়ে গিয়েছিল, সেই বাংলাকে আবার নতুন উচ্চতায় আমাদের নিয়ে যাব৷ বাংলাকে নতুন করে শিক্ষায় উন্নত করা, এটাই আমাদের সংকল্প৷’’
এই প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমে নিজের বক্তব্য মতামত জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ বলেন, ‘‘এটা রাজনৈতিক দলের প্রধানের বক্তব্য হতে পারে৷ এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনও সম্পর্ক নেই৷ আমরা শিক্ষা দফতর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে যে সমস্ত উৎকর্ষতার কাজ হয়েছে এবং উৎকর্ষতা বৃদ্ধির কাজ হয়েছে, তার ভিত্তিতে শিক্ষা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে৷ নাড্ডার জানা উচিত, আমাদের রাজ্যে বিগত প্রায় নয় বছর ধরে আমাদের নিরন্তন চেষ্টা ছিল, সবার জন্য শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া৷ আমরা যেমন স্কুল বাড়িয়েছি, শ্রেণিকক্ষ বাড়িয়েছি, কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছি, ছাত্রী শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ প্রাথমিক শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় যে অভাবগুলি ছিল, উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করতে সিলেবাস পরিবর্তন করেছি আমর৷ শিক্ষক নিয়োগ করেছি এবং কোন জায়গাতেই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমরা কাজ করিনি৷ যোগ্যএখানে মাপকাঠি৷ সকার কাছে শিক্ষার পৌঁছে গিয়েছে৷’’
শ্যামাপ্রসাদ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব জানান, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় শিক্ষার মানকে কোথায় নিয়ে গেছে, সেটা ঘটনা৷ বাংলা আজ শুধু সংস্কৃতিতে নয়, শুধু শিক্ষায় নয়, সংগ্রামের ইতিহাসে, স্বাধীনতার ইতিহাসে বাংলার একটা বিশেষ স্থান ছিল৷ আছেও৷ ওরা আমাদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চাই৷ সেই কথাটা অন্যভাবে বলতে চাইছে৷ ওরা বলতে চাইছে, আমরা নতুন ভাবে সবকিছু পরিকল্পনা করতে চাইছি৷ বাংলা সেটা মেনে নেবে না৷ আমি খুব দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, অবস্থার পরিবর্তন ধীরে ধীরে করে আজ বাংলা শিক্ষার একটা জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে৷ সেখানে সকলের শিক্ষা পাচ্ছেন৷ যেখানে মহিলারা শিক্ষায় এগিয়ে আসছেন৷ ছাত্রীরা সংখ্যা বাড়ছে৷ শিক্ষার প্রসার ঘটেছে৷ বারবার বলা হয়েছে, অর্থনৈতিকভাবে প্রকল্প ছাঁটাই হয়েছে, কিন্তু বাংলার শিক্ষা বিস্তারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, আমাদের এডুকেশন ফাস্ট বইটি থেকে তিনি সমস্তটা জানতে পারবেন৷ কোনও রাজনৈতিক দলের কথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলে না৷ আমরা প্রতিষ্ঠান চালাই৷ তার একটা নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে৷ সেই ভঙ্গিতে হচ্ছে, উৎকর্ষতা বৃদ্ধি৷ সকলের কাছে শিক্ষা পৌঁছানো৷ মেধার বিকাশ৷ শিক্ষার সুযোগ সবাই পান৷’’